বাগেরহাট : দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পরে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও উৎপাদন শুরু হয়েছে। কেন্দ্রটি থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) প্রকল্প পরিচালক সুভাষ কুমার পাণ্ডে। তিনি বলেন, বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে প্রথম ইউনিটে উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর আগে কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে যায় ইউনিটটি। বর্তমানে ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে। আরও ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা ২-৪ দিনে চলে আসবে। কয়লা আমদানিতে যে জটিলতা ছিল তা সমাধান হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত কয়লা আসবে। নিয়মিত বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে রামপালে। কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ কর্তৃপক্ষ নিয়েছে কিনা – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সুভাষ কুমার বলেন, ইকোলজিকালি সব ধরনের বিষয় চিন্তা করে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই কেন্দ্র কিন্তু ইতোমধ্যে উৎপাদনে রয়েছে। কোনো ক্ষতি তো হচ্ছে না। বিআইএফপিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, বন্ধ হওয়া প্রথম ইউনিট থেকে আবারও উৎপাদন শুরু করেছি আমরা। কয়লা আমদানিতে যে জটিলতা ছিল তা এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। আশাকরি এখন থেকে নিয়মিত উৎপাদন হবে। তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট প্রতিদিন চালিয়ে রাখতে ৫ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। সেই অনুযায়ী ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দিয়ে মাত্র ছয় দিন কেন্দ্রটির একটি ইউনিট চালানো যাবে। পরবর্তীতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা এলে তা দিয়ে কেন্দ্রটি আরও ১০ দিন চালানো যাবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে একটি জাহাজ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জেটিতে ভিড়তে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় ১৪ জানুয়ারি রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কয়লা আমদানির চেষ্টা করছিল বিআইএফপিসিএল কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হওয়ার ২৬ দিন পরে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩০ হাজার টন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরে আসে বিদেশী জাহাজ। পরে এই কয়লা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ইয়ার্ডে আনা হয়। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আরও একটি জাহাজ মোংলা আসার কথা রয়েছে। কেন্দ্রটিতে কয়লা মজুদের সক্ষমতা রয়েছে তিন মাসের। নিয়ম অনুযায়ী এক মাসের কয়লা মজুদ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ডলার সংকটে এতো দিন কেন্দ্রটিতে কয়লার কোনো মজুদ ছিল না বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে কয়লা ও ডলার সংকটের মধ্যেও আগামী ৩০ জুনের মধ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলাচ্ছেন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ, ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাঃ) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। প্রায় ৯ বছর বিশাল কর্মেযজ্ঞ শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি।