জন্মভূমি রিপোর্ট
রাত আর দিনের মধ্য কোনো ব্যবধান নেই। ফোন পেলেই বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি অথবা হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন খুলনার অক্সিজেন যোদ্ধারা। নিজেরা করোনায় আক্রান্ত হবেন কি না সেই খেয়ালও থাকছে না তাদের। আগে রোগীকে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে হবে এই মনোভাব কাজ করে তাদের মধ্যে। খুলনার কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে এই অক্সিজেন সেবা চালু করা হয়েছে।
তবে খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেন নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা। এই হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের মধ্যেই বাথরুমে মিলেছে ৪৫ সিলিন্ডার অক্সিজেন। টাকা দিলে অক্সিজেন মিলবে, টাকা না দিলে শ্বাসকষ্টে ভুগতে হবে রোগীদের। এমনই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে হাসপাতালটিতে।
মহানগরীতে করোনা রোগীর সেবায় নিয়োজিত সবচেয়ে পরিচিত সংগঠন ‘খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক’। এ ছাড়া সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে গত বছরের ২৯ জুন যাত্রা শুরু করে রোটারি খুলনা অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রকল্প। সংগঠনটির বর্তমান সিলিন্ডার আছে ৪২টি। তাদের প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত ৪৫৫ জনকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন তারা। কেউ ফোন করলেই তাদের বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। খুলনা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে ২০২০ সালের ৪ জুলাই চারটি সিলিন্ডার নিয়ে করোনা সেবা কার্যক্রম হিসেবে কল সেন্টার চালু করা হয়। এখন তাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২৩টি। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ব্যক্তিকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে তারা। এর বাইরে ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করছে সংগঠনটি।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেলের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্প্রতি চালু হয়েছে শেখ আবু নাসের অক্সিজেন ব্যাংক। খুলনা মহানগর যুবলীগ এটি পরিচালনা করছে। নগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ জানান, ১০০ সিলিন্ডার নিয়ে ৩০ জুন থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুদিনেই ৬০ জনকে সেবা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাসা-বাড়ির পাশাপাশি করোনা হাসপাতালেও অক্সিজেন দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি খুলনা-২ আসনের সাংসদ শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের উদ্যোগে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবাও দেয়া হচ্ছে।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা চৌধুরী রায়হান ফরিদ জানান, গত বছর ২১ জুলাই কার্যক্রম শুরু করে শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংক। গত এক বছরে ৬০টি সিলিন্ডার নিয়ে পাঁচ শতাধিক রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে। চৌধুরী রায়হান ফরিদ সংগঠনটির কার্যক্রমের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি জানান, অক্সিজেন সেবার সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে টেলিমেডিসিন সেবাও দেয়া হবে। এতদিন পৃথকভাবে কাজ করলেও এখন থেকে শেখ আবু নাসের অক্সিজেন ব্যাংক ও শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংক একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুটোরই পৃষ্ঠপোষক যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ সোহেল। নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম টিটো বলেন, গত বছর একটি সিলিন্ডার দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। এখন ছয়টি রয়েছে। গত দুই দিনে ৯ জনকে সেবা দেয়া হয়েছে। অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের উদ্যোগে তার সংসদীয় আসন খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় সেবা দেয়া হচ্ছে। তাদের কল সেন্টারের নাম ‘গণমানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও করোনা সাপোর্ট সেন্টার।’
এর তদারককারী ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শেখ ইমাম হোসেন বলেন, গত বছরের আগস্টে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ২৫টি। আগামী সপ্তাহে আরও সাতটি যুক্ত হবে। অক্সিজেন ছাড়াও টেলিমেডিসিন, বিনামূল্যে ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়া হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে নগরীর খালিশপুর এলাকায় অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছে ‘উদীয়মান অক্সিজেন ব্যাংক’। আলমনগরের জোড়াতাল গাছ মোড়ে এর অস্থায়ী কার্যালয়। সংগঠনের প্রধান রবিউল গাজী উজ্জ্বল বলেন, ২১টি সিলিন্ডার দিয়ে খালিশপুর-দৌলতপুরসহ নগরীর ভেতরে প্রায় ৮৪ জনকে সেবা দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া কারও রক্ত প্রয়োজন হলেও দেয়া হচ্ছে।
সদ্য কাজ শুরু করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘টিম খুলনা, বিল্ড খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক’ নগরীর ভেতরে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংগঠনটির সমন্বয়কারী শাকিল আহমেদ জানান, ৩৮টি সিলিন্ডার দিয়ে তারা প্রায় ২২৩ জনকে সেবা দিয়েছেন। শকিল আহমেদ জানান, মাত্র কয়েকদিন হল সংগঠনের শুরু করেছি। কিন্তু এরই মধ্যে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। অনেকেই সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সংগঠনের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তারাও নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।
খুলনার রূপসা উপজেলায় কাজ করছে ‘আলো ফুটবেই অক্সিজেন সেবা’। সংগঠনের উদ্যোক্তা ইউপি সদস্য আলমগীর শ্রাবণ জানান, পাঁচটি সিলিন্ডার দিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সার্ভিস দিচ্ছেন। জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘গোল্ডেন জেনারেশন অব খুলনা জিলা স্কুল’ পাঁচটি সিলিন্ডার নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুস্বার বাংলাদেশ।
ফোন পেলেই বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন খুলনার করোনা যোদ্ধারা
Leave a comment