শেখ আব্দুল হামিদ : খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফুঁসে উঠেছেন ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। শুরু হয়েছে দফায় দফায় সংঘর্ষ হামলা-মামলা। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সমর্থকরা মারমুখি ভূমিকায় আছেন। তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নেপথ্যে সহযোগিতা করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ তিন নেতা।
আর মাত্র দু’দিন পরেই ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশন। দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সাথে-সাথে আগ্রাসী হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থীর তিনজন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তারা গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্রই কর্মীদের চাঙ্গা রেথে প্রচার-প্রচরনায় ব্যাস্ত আছেন। এসব প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় তাদের নেপথ্যে শক্তি প্রদান করছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাঠে সর্বোচ্চ দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের একজন হলেন, ঘোড়া প্রতীক প্রার্থী মোতাহার হোসেন শিমু। তিনি বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডলের আশির্বাদ পুষ্ট হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলার সকল ইউনিয়নে এমপি’র সমর্থক এবং কর্মীরা ঘোড়া প্রতীকের জন্য প্রতিনিয়ত মহড়া দিয়ে চলেছেন। গড়ে তোলা হয়েছে নির্বাচনী কার্যালয়। সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে একটির চেয়ারম্যান সরাসরি মোতাহার হোসেন শিমুর পক্ষে কাজ করছেন। এ ছাড়াও রয়েছেন ক্ষমাতাশীন দলের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কিছু নেতা- কর্মী।
টেলিফোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল। তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তার পক্ষে নেপথ্যে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তাছাড়া জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ পঞ্চানন বিশ^াসের অনুসারীদের দেখা গেছে টেলিফোন প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে। সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচটির চেয়ারম্যানরা তার পক্ষে ভোট চাইছেন। তারা সকলেই আওয়ামীলীগের নেতা। এসব ছাড়াও বিএনপি নেতা আমীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম জনি’র সমর্থকরা স্থানীয় কোন্দলের কারণে মিলনের বিপক্ষে নেপথ্যে রাহুলের পক্ষে কাজ করছেন।
এছাড়া চিংড়ি মাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামীলীগ নেতা জিএম মিলন। তার পক্ষে সরাসরি ভোট প্রার্থনা করছেন বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান। সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ নেতাদের একটা অংশ তার পক্ষে কাজ করছেন। মিলন আমীরপুর ইউনিয়ন পরিসদের নির্বাচিত তিন বারের চেয়ারম্যান। তার ব্যক্তি ইমেজ ছাড়াও রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খানের প্রত্যক্ষ সমর্থন। তার শক্তিশালী কর্মী বাহিনী মাঠে ময়দানে প্রচার প্রচারণায় পিছিয়ে নেই।
বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে ধীর-স্থীর ভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সিপিবি নেতা হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কর্মীরা তার পক্ষে কাজ করে চলেছেন।
নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন মটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে সাবেক যুবলীগ নেতা শেখ রাসেল কবির। তিনিও তার সমর্থকদের নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় ছাত্র সমাজ খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি শাওন হাওলাদার আনারস প্রতীক নিয়ে মাঠে প্রচারে আছেন।
সবমিলিয়ে বটিয়াঘাটার গ্রাম-গঞ্জে নির্বাচনি উত্তাপ বেড়েই চলেছে। আর সে উত্তামে ঘি ঢালছে বিএনপি, জামায়েতের নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার রাতে আমীরপুর ও ভান্ডারকোট ইউনিয়নে তিন প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ত্রিমুখি সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটে। প্রচার চালাতে গিয়ে খারাবাদ গ্রামে জিএম মিলন এবং শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষের মোট ৮ জন আহত হয়। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া রাহুলের সমর্থক ও মোতাহার হোসেন শিমুর সমর্থকদের মধ্যে ভান্ডারকোট বাস স্টান্ডে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়।
বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিপন কুমার সরকার বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাতে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধ করে কোন ভাবেই কেউ পার পেয়ে যাবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে। তার জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে।
বটিয়াঘাটায় প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ তিন নেতা
Leave a comment