শেখ আব্দুল হামিদ
সময়ের বিবর্তনে প্রকৃতির আবর্তে হারিয়ে গেছে এক কালের খর¯্রােতা নালুয়া নদী। এখন পানি অভাবে কৃষকের চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে। বৃষ্টি স্বল্পতার কারণে বীতজলা তৈরী হচ্ছে না। অথচ বটিয়াঘাটার বুক চিরে বয়ে যাওয়া এ নদীর স্মৃতি আজও দু’তীরের মানুষদের কাঁপিয়ে তোলে। মাত্র ৩০ বছর আগেও তীব্র গতিতে নালুয়ার বুক চিরে ছুটে চলেছে স্পিডবোট, লঞ্চ, স্টিমারসহ বিভিন্ন জলযান। আজ তার বুকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ঘর বাড়ী তৈরী করে বাস করছে। পশুর নদ থেকে উঠে আসা এ নদী দীর্ঘ ২১ কিলোমিটার পথ ঘুরে কাজীবাচা নদীর মাথাভাঙ্গা এলাকায় মিশেছে। মাত্র দু’শ মিটার প্রস্থ নালুয়ার গভীরতা ছিল একশ’ মিটারেরও বেশী। নদীর খর¯্রােতার গর্জন রাতে ঘুমন্ত মানুষদের কাঁপিয়ে তুলতো। বর্ষায় সে যেন দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে। শীতে ছিল নব বধুর মত শান্ত ন¤্র। ষড়ঋতুতে নৌকার পাল তুলে সমস্ত দিন রাত মাঝি মাল্লারা ছুটে চলেছে জেলা শহর থেকে বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে।
মাঝি মাল্লারা মালামাল নিয়ে খুলনা-মংলা বন্দর ছুটাছুটি করেছে। রাতের গভিরতা ভেঙ্গে তাদের গান বাতাসে ভেসে এসেছে। কখনও কখনও এ নদী গ্রাস করত জনজীবন। কত মানুষ আর জলযান এর বুকে নিমজ্জিত হয়েছে তার হিসাব নেই। এক সময়ে খুলনা থেকে ঢাকা গামী রকেট এ পথেই চলেছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের তিনটিকে দখল করে নালুয়ার অবস্থান ছিল। দক্ষিণাংশে উৎপত্তি স্থলেই রয়েছে ভান্ডারকোট ইউনিয়ন। মাঝের দিকে বালিয়াডাঙ্গা এবং শেষাংশে আমীরপুর ইউনিয়ন। নালুয়া নদীতে ছিল তিনটি খেয়া। বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ বটিয়াঘাটা থানায় আসতে এ সব খেয়ায় উঠতেন। তীব্র ¯্রােতে অনেক সময় খেয়া নদীতে ডুবে যেত।
নালুয়া নদীতে ছিল প্রচুর ইলিশ মাছ। রাতে দিনে বিভিন্ন জাল দিয়ে প্রায় দশ গ্রামের মানুষ এ নদীতে মাছ ধরতেন। মানুষের কলকাকলীতে মুখর হয়ে উঠত গোটা এলাকা। রূপালী ইলিশের ঘ্রাণে মুগ্ধ থাকত জেলেরা। আজ সে চিহ্নও যেন ¤øান হয়ে গেছে। দু’তীরসহ গোটা নদী দখল করে নালুয়ার বুকে এখন গাছপালা ঘর বাড়ী। শুধুমাত্র শেষ চিহ্নটুকু হিসেবে রয়েছে বৃষ্টির পানি নিস্কাসনের জন্য ছোট একটি নালা। এক শ্রেণির স্বার্থেন্বেসী মানুষ ভরাট হয়ে যাওয়া নালুয়া নদীর সমস্ত জায়গা দখল করে নিয়েছে। তার বুকে গড়ে তুলেছে মিল কলকারখানা। বর্ষার সময় দু’তীরের জমিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এক সময়ের আশির্বাদ নালুয়া নদী মনুষ্য সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় এখন শুধুই অভিশাপ।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান বলেন, নালুয়া নদী প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে এ লাকার কৃষকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় কৃষকরা এখনও বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। নদীটি দ্রæত খনন করা প্রয়োজন।
সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আশরাফুল আলম দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, সরকারি ভাবে ৬৪ জেলাতেই নদী খাল খনন প্রকল্পের মাধ্যমে হয়ে আসছে। আগামী ডিসেম্বরের পর নালুয়া নদী খনন কাজ শুরু হবে। তখন কৃষকদের জন্য সেটা উপকারে আসবে।