By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: বদলে যাচ্ছে‌ উপকূলের অর্থনীতির চাকা, স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজার হাজার বেকার যুবক
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > বদলে যাচ্ছে‌ উপকূলের অর্থনীতির চাকা, স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজার হাজার বেকার যুবক
তাজা খবরসাতক্ষীরা

বদলে যাচ্ছে‌ উপকূলের অর্থনীতির চাকা, স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজার হাজার বেকার যুবক

Last updated: 2025/12/06 at 1:57 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 3 weeks ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌:  বদলে যাচ্ছে উপকূলের অর্থনীতির চাকা‍স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজার হাজার বেকার যুবক। অনেক বেকার যুবকরা চাকরি ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে এখন কাকড়া চাষের মেতেছে।সুন্দরবনের গা ঘেঁষা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এক সময়ের অবহেলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনপদ এখন রূপ নিয়েছে সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থলে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকার মানুষের জীবনে এসেছে নতুন মোড়। তারা এখন কাঁকড়াকে ঘিরে গড়ে তুলেছেন একটি লাভজনক ও টেকসই শিল্প। শুধু বিকল্প আয়ের উৎস নয়, এখন কাঁকড়া চাষ হয়ে উঠেছে আত্মনির্ভরতার প্রতীক। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শত শত পরিবার ফিরে পেয়েছে জীবনের গতি, কর্মসংস্থান হয়েছে নারী-পুরুষ নিরি বিচ্ছিন্ন।
শ্যামনগরের প্রত্যন্ত এলাকায় গেলে এখন দেখা মেলে খাঁচাবন্দি হাজার হাজার সফটশেল কাঁকড়ার। এসব কাঁকড়া দিনে তিন থেকে পাঁচবার পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সফটশেল অবস্থায় কাঁকড়াগুলো সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয় আন্তর্জাতিক বাজারে। সফটশেল বলতে বোঝায়, যখন কাঁকড়া খোলস বদলায় এবং শরীর থাকে তুলনামূলক নরম। এ সময় কাঁকড়া সবচেয়ে বেশি রপ্তানিযোগ্য হয়। সাধারণত ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যেই কাঁকড়াগুলো এই অবস্থায় পৌঁছায়। প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, এমনকি গভীর রাতেও খাঁচা পর্যবেক্ষণ করেন প্রশিক্ষিত কর্মীরা।
এই চাষে আধুনিক প্রযুক্তিরও ব্যবহার হচ্ছে। খাঁচাগুলোতে নিয়মিত নজরদারি, খাদ্য সরবরাহ এবং তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ সবই করা হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। কাঁকড়ার খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় তেলাপিয়া মাছ। স্থানীয় নারীরা এই মাছ কেটে খাদ্য প্রস্তুত করেন এবং খাঁচা পরিষ্কারের কাজেও অংশ নেন। ফলে নারীরাও এই শিল্পে সরাসরি যুক্ত হয়ে আয় করছেন।
গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল এই চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন। তিনি বলেন, “প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে খাঁচায় কাঁকড়া পালন করছি। ভালো লাভ হয়। তবে সমস্যা একটাই‌পানির সংকট। আর যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো না।” তিনি জানান, একটি বেসরকারি কোম্পানি নদীপথে এসে নির্ধারিত স্থান থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। সরকারি প্রশিক্ষণ বা অর্থায়ন না পেলেও তার মত চাষিরা মনে করেন, যদি এই দুটি সমস্যা সমাধান করা যায়, তাহলে আরও অনেকে কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হবেন ।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাতক্ষীরা জেলা থেকে ৬৪৪ মেট্রিক টন সফটশেল কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বর্তমানে জেলার ৩২১টি স্থানে ৩৬৪ জন চাষি এই পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করছেন। বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন হচ্ছে এখান থেকে।
এই শিল্পের মাধ্যমে শুধু চাষিই নয়, কাজের সুযোগ পেয়েছেন অনেক শ্রমজীবী মানুষও। তাদের একজন মো. রবিউল ইসলাম, যিনি সকাল ৭টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত কাঁকড়ার খাঁচা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন। রাতে আবার ঘুম ভেঙে দেখতে হয়, খোলস পাল্টেছে কিনা। কাঁকড়াগুলো যখন সফটশেল হয়, তখন আলাদা করে রাখা হয় এবং কোম্পানি সেগুলো গ্রেড অনুযায়ী কিনে নেয়।
এই চাষে নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন। কেউ তেলাপিয়া মাছ কেটে খাবার তৈরি করছেন, কেউ খাঁচা পরিষ্কার করছেন, কেউ খাঁচার অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছেন। স্থানীয় সাংবাদিক আবু সুফিয়ান (ফয়সাল) বলেন, “এই চাষের কারণে গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। নারীরাও আয় করছেন। এটা অনেক লাভজনক পদ্ধতি।
এক সময়ের অবহেলিত উপকূলীয় জনপদ আজ কাঁকড়াকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছে। এই সম্ভাবনাময় শিল্প যদি যথাযথভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, তাহলে শুধু সাতক্ষীরা নয়, গোটা দেশ লাভবান হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে।
পথে পথে হয়রানি, ভোগান্তি আর প্রশাসনের বিরূপ মনোভাব ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কাঁকড়া রপ্তানি। এসব কারণে খুলনার ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট মিলে বৃহত্তর খুলনায় শতকোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া মাটিতেই পড়ে আছে। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাজার হারানোর আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এর জন্য পণ্য রপ্তানি নীতিমালা ও আইনের অপপ্রয়োগকে দায়ী করেছেন।
খুলনা ও বাগেরহাটের কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েনে, গত ৩ বছর ধরে কাঁকড়া রপ্তানি দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শুধু কাঁকড়া রপ্তানি করে এখন প্রতিবছর গড়ে আয় হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা। রপ্তানি তালিকায় অপ্রচলিত এই পণ্যই বদলে দিচ্ছে লাখো মানুষের ভাগ্য। যে হারে চাহিদা বাড়ছে তাতে ‘সাদাসোনা’ হিসেবে পরিচিত গলদা চিংড়িকে অদূর ভবিষ্যতে হার মানাতে পারে এই জলজ সম্পদ। দেশের পাঁচ উপকূলীয় এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কাঁকড়ার। মোটাতাজাকরণ ও পোনা পালন প্রকল্পে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় অন্তত শতাধিক কোটি টাকামূল্যের রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া মাটিতেই পড়ে আছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রথম ১৯৭৭ সালে মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে বেড়ে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৭৩ টনে। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪১৬ টনে। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সেই রপ্তানি হয়েছে ৮ হাজার ৫২০ টন। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ১০ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে। কাঁকড়া রপ্তানির বড় অংশ যায় চীনে, তারপর রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, সিংগাপুর, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমার এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ মিলিয়ে মোট ১৮টি দেশে এই কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে।
এ বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া রপ্তানিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদের দাবি, প্রজনন মৌসুমে নদ-নদী থেকে কাঁকড়ার পোনা আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় প্রশাসনের সদস্যরা নাজেহাল করে।
দিগরাজ কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান শেখ বলেন, প্রজনন মৌসুমে কোন কাঁকড়া নদী থেকে সংগ্রহ করা হয় না। এ মৌসুমে ঘেরের সংরক্ষিত কাঁকড়া বাজারজাত করা হয়। বিষয়টি পুলিশসহ প্রশাসনের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা না জেনেই পথিমধ্যে পরিবহন আটকে দেয়। এ সময় হয়রানির শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের। চালনা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রহিম গাজী বলেন, ‘কোস্টগার্ড অনেক সময় না জেনে বুঝেই কাঁকড়া নষ্ট করে দেয়। পোনা কাঁকড়া কখনও এক দুই সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয় না। এ জন্য এখন নদী থেকে আহরণ করে সেই পোনা বিক্রি করা সম্ভব নয়। এগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানা না থাকায় তারা আচমকা অভিযান চালিয়ে সেগুলো বিনষ্ট করে দেয়। দাকোপ-বটিয়াঘাটা এলাকা এ অঞ্চলের সবথেকে বড় মোকাম’। আর এখানেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে বলে তিনি দাবি করেন। পাইকগাছা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অদিবাস কুমার বলেন, কাঁকড়া পানি থেকে ডাঙায় ওঠানোর পর ৪/৫ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে সেটা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়। না হলে মারা যায়। তবে স্থানীয় পর্যায় এবং হাইওয়েতে কোনভাবে যদি গাড়ি আটকে রাখা হয় তবে এগুলো মারা যাওয়ার আশংকা থাকে। তিনি এ ধরনের হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। খুলনা বিভাগীয় মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, বর্তমানে খুলনা অঞ্চল থেকে কত টাকার এবং কি পরিমাণ কাঁকড়া রপ্তানি হয় তার হিসাব নেই তাদের কাছে। মৎস্য অধিদপ্তর ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ হিসাব আছে।
সুন্দরবনের গা ঘেঁষা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কাঁকড়া চাষ এখন আর কেবল বিকল্প আয়ের উৎস নয়। এটি এখন লাভজনক ও টেকসই শিল্প। ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত এ চাষাবাদে স্বাবলম্বী হচ্ছে শতশত পরিবার। কর্মসংস্থান হয়েছে নারীদেরও।
এখন সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রামে গেলে দেয়া যায়, কাটা হচ্ছে হাজার হাজার তেলাপিয়া মাছ। যা খাঁচাবন্দি কাঁকড়াগুলোর খাবার। আর নিয়ম করে তিনবেলা লক্ষ্য রাখা কাঁকড়াগুলো খোলস পাল্টেছে কিনা। ২০ থেকে ২২দিনের মধ্যেই কাঁকড়ার ওজন বাড়লে কাঁকড়াগুলো রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
কাঁকড়ার এমন সম্ভাবনা দেখে সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা যেমন আগ্রহী, তেমনি বর্তমানে চাষিরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এ খাতে।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান। ৬বিঘা জমিতে কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে খাঁচায় কাঁকড়া পালন করছি। ভালো লাভ হয়। তবে সমস্যা একটাই-পানির সংকট। আর যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না। গাবুরা ইউনিয়নে একটি কোম্পানি কাজ করে। তারা নদীপথে বোট নিয়ে এসে নির্ধারিত স্থানে কাঁকড়া সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখনো কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। যদি প্রশিক্ষণ ও পানির সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসে, তাহলে এই পদ্ধতিতে আরও বেশি মানুষ যুক্ত হবে।
সাতক্ষীরার এই প্রকল্পে শুধু চাষিরাই নন, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে বহু শ্রমজীবী মানুষের জন্যও। তাদের একজন মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল ৭টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ডিউটি। এর মধ্যে কাঁকড়ার খাঁচা চেক করতে হয় দিনে চারবার- সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যায়। এরপর রাত ১১টা ও রাত ৩টায় দেখতে হয় খোলস বদলেছে কি না।
তিনি জানান, সফটশেল কাঁকড়া আলাদা করে তোলা হয়। পরে কোম্পানি সেই কাঁকড়া বিভিন্ন গ্রেডে কিনে নেয়। খাদ্য হিসেবে তেলাপিয়া মাছ দেওয়া হয় প্রতি তিন দিন পরপর।
জানা যায়, এই প্রকল্পে নারীরাও সরাসরি যুক্ত। কেউ কাঁকড়ার খাবার হিসেবে তেলাপিয়া মাছ কেটে দেন, কেউ খাঁচা পরিষ্কারের কাজ করেন।
স্থানীয় যুবক জাফর সাদিক সোহাগ বলেন, এই চাষের কারণে গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। নারীরাও আয় করছেন। এটা অনেক লাভজনক পদ্ধতি।
মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাতক্ষীরা জেলা থেকে ৬৪৪মেট্রিক টন সফটশেল কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০০কোটি টাকা। বর্তমানে ৩৬৪জন চাষি, জেলার ৩২১টি স্থানে এই চাষ করছেন। বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম বলেন, সাতক্ষীরায় চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়া চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি খুব সম্ভাবনাময় একটি খাত। আমরা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছি, কিছু বেসরকারি সংস্থাও কাজ করছে।
তবে সমস্যার কথাও জানালেন তিনি। প্রতি বছর পাঁচ মাস সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকে এবং এখানে কাঁকড়ার হ্যাচারি নেই। হ্যাচারি হলে সারা বছর উৎপাদন সম্ভব হতো এবং কর্মসংস্থান অব্যাহত থাকত বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সরকারিভাবে কীভাবে এই বন্ধ সময়েও চাষিদের সহায়তা দেওয়া যায়। বনবিভাগের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। বাগদা বা গলদার পাশাপাশি কাঁকড়া চাষ আত্মকর্মসংস্থানের বড় মাধ্যম হতে পারে।
এক সময়ের উপেক্ষিত সুন্দরবনঘেঁষা জনপদ আজ স্বপ্ন দেখছে কাঁকড়াকে ঘিরে। সরকারি সহায়তা, হ্যাচারি ও রপ্তানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলে সাতক্ষীরা হতে পারে দেশের কাঁকড়া রপ্তানির কেন্দ্রস্থল- এমনই বিশ্বাস স্থানীয়দের।
কাঁকড়া চাষে জীবনের চাকা ঘুরাতে কাঁকড়া নিয়ে মনের কোনে স্বপ্ন বুনছে দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা। এক সময় এ অঞ্চলের মানুষেরা চিংড়ি চাষের দিকে ঝুঁকেছিল ব্যাপকভাবে। কিন্ত তা থেকে আস্তে আস্তে বের হতে শুরু করেছে চাষিরা। চিংড়ি চাষ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পারেনি, তা বলা যাবে না। কারণ এর মাধ্যমে অনেক মানুষ তার ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সক্ষম হয়েছে আবার বিভিন্ন দুর্যোগ ও ভাইরাসজনিত কারণে অনেকেই ফকির বনে গেছে। অর্থাৎ অনেকের জন্য এটি আশীর্বাদ হলেও অনেকের জন্য হয়ে উঠেছে অভিশাপ। অনেকের যেন একেবারই নিভু নিভু অবস্থা। সুতরাং কাঁকড়া নিয়ে মানুষ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। অনেকের ভাবনা চিংড়ি চাষের ক্ষতি চুকিয়ে নেবে কাঁকড়া থেকে। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানুষকে কাকড়া চাষে সম্পৃক্ত করতে উদ্বুদ্ধকরণে কোন প্রকার পিছিয়ে নেই, এটা যেন মানুষের স্বপ্নের সাথে যোগ হওয়া নতুন মাত্রা। দশ পায়ের চিংড়ি প্রজাতির এই কাঁকড়া ইতিমধ্যে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ৯টি দেশে রপ্তানি হয় উপকূলীয় অঞ্চলের ১০ পা বিশিষ্ট চিংড়ি প্রজাতির কাঁকড়া। খুলনাসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রচুর কাকড়া আহরণ
করা হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের প্রায় হাজার হাজার বনজীবী নারী পুরুষ কাঁকড়া আহরণ বা বিপণনের সাথে জড়িত। সংশ্লিষ্ট বনজীবীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলায় কাঁকড়া চাষ করা হয়ে থাকে। এইসব অঞ্চলে কাকড়া মোটাতাজাকরণ বা ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে চাষ করছে সংশ্লিষ্ঠ কাঁকড়া চাষিরা। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, ভিয়েতনাম, ইউকে, ইউএই, সৌদি-আরব, তাইওয়ান, হংকং নেদারল্যান্ড, জার্মান, ফ্রান্স, অষ্ট্রিয়া, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহারাইন, উগন্ডা, হন্ডুরাস, ইউএসএ ও ভারতে উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় বিগত দিনে কাকড়ার ক্রাভলেট অর্থাৎ বাচ্চা নদীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হলেও তা এখন চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবনের পাদদেশে অবস্থিত শ্যামনগর উপজেলায় সর্ব প্রথম কাকড়ার বাচ্চা ফুটিয়েছে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান নওয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশন। যার কারণে এ অঞ্চলের কাঁকড়া চাষিদের উন্নয়নের মাত্রা অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা। নওয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় একটি মা কাঁকড়া থেকে কুঁড়ি হাজারের বেশি বাচ্চা সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। তাছাড়া চাষিরা কাকড়া আহরণকারীদের কাছ থেকে প্রতিকেজি ছোট কাকড়া ৬০-৮০ টাকায় সংগ্রহ করে মোটাতাজা করেন। তিন মাসেই ওই পুরুষ কাকড়া ৪০০-৬০০ গ্রাম এবং মাদি (মহিলা) কাঁকড়া ১৮০-২৫০ গ্রাম ওজন বেড়ে যায়। একটা পরিপুষ্ট কাকড়া ৯০০শ’ থেকে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কাকড়া চাষি বাবুলাল মন্ডল বলেন, সাধারণত অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় কাঁকড়া ব্যাবসা জমজমাট থাকে। আবার শীত মৌসুমে মাদি কাঁকড়ার চাহিদা বেশি থাকে। তিনি আরও বলেন, আশ্বিন মাসে কাঁকড়ার চাষ শুরু হয়। দুই মাস পর পর কাঁকড়া আমরা বিক্রি করি। স্থানীয় ডিপো (কাঁকড়া বিক্রয় করা ঘর) গুলিতে কাঁকড়া কেনা বেচা হয়। মুন্সিগঞ্জ কাঁকড়া চাষি রাম কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, তিনি ১০ কাঠা জমিতে চার ভাগে ভাগ করে সারা বছর কাঁকড়া চাষ করেন, সংসারের ৫ সদস্য আর দুই ছেলেকে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শুধু রামকৃষ্ণ মন্ডল নয়, মুন্সীগঞ্জের অনেক লোকজনই লাভজনক কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও স্বামীদের কাঁকড়া চাষে সহযোগিতা করে থাকেন। বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের তরুন কাকড়া চাষি হান্নান বলেন ¯œাতক পাশ করে কোন চাকুরি না হওয়ায় হতাশায় ভুগছিলাম কিন্তু বর্তমানে মনে হয় সেই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে চলেছি। তারা চার বন্ধু মিলে কুঁড়ি হাজার কাঁকড়ার খাচায় কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ বা ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে চাষ করছি, প্রথম বারেই ভাল লভ্যাংশ পেয়েছি। আশাকরি ভালো ফলাফল সম্ভব হবে এখান থেকে। এখানকার অন্যান্য চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরে ১১০ গ্রাম মাদি কাঁকড়া ২শ’ টাকা কেজি, ১৫০ গ্রামের মাদি কাঁকড়া ৩শ’ টাকা, ১৮০ গ্রামের মাদি কাঁকড়া ৮শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া পুরুষ কাঁকড়া ৫শ’ গ্রামের কেজির দাম ৯শ’ টাকা, ৪ গ্রাম পুরুষ ৮শ’ টাকা, ৩শ’ গ্রাম পুরুষ ৭শ’ টাকা, এবং ২শ’ গ্রাম সাইজের কাঁকড়া ৫শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সুতরাং, এলাকার শিক্ষিত, অশিক্ষিত বেকার যুবকেরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকছে কাঁকড়া চাষের দিকে। কাঁকড়া উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ এলাকার অন্যান্য চাষিরা বলেন, কাঁকড়া চাষ হবে এলাকার শ্রেষ্ঠ চাষÑ সে আশা বুকে নিয়েই নেমেছি। স্থানীয় কলবাড়ি বাজার রেখে বুড়িগোয়ালিনি-মুন্সিগঞ্জ রাস্তার দু’পার্শে¦ শোভা পাচ্ছে হাজার একর জমিতে কাঁকড়া চাষের প্লট। স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে অনেকেই এখানে এসে চাষ শুরু করেছে। কাঁকড়া চাষ কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাঁকড়া মজুদ কারখানা। কাঁকড়া চাষের প্লটে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার মানুষের।
কাঁকড়া চাষে জীবনের চাকা ঘুরাতে কাঁকড়া নিয়ে মনের কোণে স্বপ্ন বুনছে দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা। একসময় এ অঞ্চলের মানুষেরা চিংড়ি চাষের দিকে ঝুঁকেছিল ব্যাপকভাবে। চাষীরা চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়া চাষ নিয়েও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানুষকে কাকড়ায় অর্ন্তভূক্ত করতে উদ্বুদ্ধকরণের কাজও করছে। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এই কাঁকড়া ইতিমধ্যে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ৯টি দেশে রপ্তানি হয় উপকূলীয় অঞ্চলের ১০ পা বিশিষ্ট চিংড়ি প্রজাতির কাঁকড়া। খুলনাসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রচুর কাকড়া আহরণ করা হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের প্রায় হাজার হাজার বনজীবী নারী ও পুরুষ কাঁকড়া আহরণ বা বিপণনের সাথে জড়িত।
সংশ্লিষ্ট বনজীবীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলায় কাঁকড়া চাষ করা হয়ে থাকে। জানা যায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, ভিয়েতনাম, ইউকে, ইউএই, সৌদি-আরব, তাইওয়ান, হংকং নেদারল্যান্ড, জার্মান, ফ্রান্স, অষ্ট্রিয়া, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহারাইন, উগন্ডা, হন্ডুরাস, ইউএসএ এবং ভারতে উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় বিগত দিনে কাঁকড়ার ক্রাভলেট অর্থাৎ বাচ্চা নদীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হলেও তা এখন চলে এসেছে হাতের মুঠোয়।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবনের পাদদেশে অবস্থিত শ্যামনগর উপজেলায় সর্বপ্রথম কাঁকড়ার বাচ্চা ফুটিয়েছে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান নওয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশন। নওয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি মা কাঁকড়া থেকে কুঁড়ি হাজারের বেশি বাচ্চা সংগ্রহ করা সম্ভব। কাকড়া চাষি বাবুলাল মন্ডল বলেন, “সাধারণত আমাবশ্যা ও পূর্ণিমার গোনে কাঁকড়া ব্যবসা জমজমাট থাকে। শীত মৌসুমে মাদি কাঁকড়ার চাহিদা বেশি থাকে।” তিনি আরও বলেন, “আশ্বিন মাসে কাঁকড়ার চাষ শুরু হয়। দুই মাস পর পর কাঁকড়া আমরা বিক্রি করি। স্থানীয় ডিপো (কাকড়া বিক্রয় করা ঘর) গুলোতে কাঁকড়া কেনাবেচা হয়।” অন্যদিকে মুন্সিগঞ্চ কাকড়া চাষি রাম কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, “আমি ১০ কাঠা জমিতে চার ভাগে ভাগ করে সারাবছর কাঁকড়া চাষ করি, সংসারের ৫ সদস্য আর দুই ছেলেকে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছি।”
শুধু রামকৃষ্ণ মন্ডল নয় এখানকার গ্রামের লোকজন লাভজনক কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও স্বামীদের কাঁকড়া চাষে সহযোগিতা করেন। কাঁকড়া চাষ তরুণদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানেরও উপায়। এই প্রসঙ্গে বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের তরুণ কাকড়া চাষি হান্নান বলেন, “স্নাতক পাশ করে কোন চাকুরি না হওয়ায় হতাশায় ভুগছিলাম। কিন্তু বর্তমানে মনে হয় সেই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে চলেছি। আমরা চার বন্ধু মিলে কুড়ি হাজার কাঁকড়ার খাচায় কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ বা ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে চাষ করছি, প্রথমবারেই ভালো লাভ পেয়েছি।” অন্যান্য চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরে ১১০ গ্রাম মাদি কাঁকড়া ২শ’ টাকা কেজি, ১৫০ গ্রামের মাদি কাঁকড়া ৩শ’ টাকা, ১৮০ গ্রামের মাদি কাঁকড়া ৮শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া পুরুষ কাকড়া ৫শ’ গ্রামের কেজির দাম ৯শ’ টাকা, ৪ গ্রাম পুরুষ ৮শ’ টাকা, ৩শ’ গ্রাম পুরুষ ৭শ’ টাকা, এবং ২শ’ গ্রাম সাইজের কাঁকড়া ৫শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সুতরাং এলাকার শিক্ষিত, অশিক্ষিত বেকার যুবকেরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকছে কাঁকড়া চাষের দিকে। কাঁকড়া উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ এলাকার অন্যান্য চাষিরা বলেন, “কাঁকড়া চাষ হবে এলাকার শ্রেষ্ঠ চাষ সে আশা বুকে নিয়েই নেমেছি।” স্থানীয় কলবাড়ি বাজার রেখে বুড়িগোয়ালিনি-মুন্সিগঞ্জ রাস্তার দু’পাশ্বে শোভা পাচ্ছে হাজার একর জমিতে কাঁকড়া চাষের প্লট। স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে অনেকেই এখানে এসে চাষ শুরু করেছে। কাঁকড়া চাষকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাঁকড়া মজুদ কারখানা। কাঁকড়া চাষের প্লটে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার মানুষের।সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর। এ উপজেলার কোনো কোনো এলাকার রাস্তার দুই ধারে বিস্তৃত জলরাশি। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন তেমনই এক এলাকা। এ ইউনিয়নের কোনো কোনো এলাকায় আছে একের পর এক জলাশয়। এসব জলাশয় পার হতে গেলে চোখে পড়ে ভাসমান হাজার হাজার কালো ছিদ্রযুক্ত বাক্সের সারি। সেসব বাক্সে চাষ হয় কাঁকড়া। স্থানীয় লোকজন কাঁকড়া চাষের স্থানটিকে বলেন ‘কাঁকড়া পয়েন্ট’।
বুড়িগোয়ালিনীর পূর্ব দুর্গাবাটী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে কাঁকড়া পয়েন্ট। সেখানে কাজ করছেন নারী–পুরুষ। জলাশয়ের ওপারে টংঘর।
চলাচলের জন্য জলাশয়ের মাঝামাঝি স্থানে বাঁশ, কাঠ ও টিনের ছাউনি দেওয়া সেতু তৈরি করা হয়েছে। কাঁকড়া চাষের একটি প্রতিষ্ঠানের সেতুতে নেমে দেখা যায়, পাঁচজন কাজ করছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী। পুরুষ দুজন সুপারভাইজার, আর নারীরা ‘চেকার’। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল, চেকারের কাজ হচ্ছে তিন ঘণ্টা পরপর বাক্স খুলে দেখা—কাঁকড়ার জন্য বাক্সের পানি ও পরিবেশ ঠিক আছে কি না।
তাঁরা চার দিন পরপর বাক্সের কাঁকড়াগুলোকে খাবার হিসেবে তেলাপিয়া মাছ টুকরা টুকরা করে দেন। এই প্রক্রিয়ায় সফট শেল বা নরম খোলসের কাঁকড়ার চাষ হয়। আর এই চাষ ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার বিপুলসংখ্যক নারীর। কাঁকড়াচাষি ও বিশেষজ্ঞরা জানান, কাঁকড়া পয়েন্টে কাজ করা ব্যক্তিদের ৬০ শতাংশই নারী। মূলত ‘চেকার’ হিসেবেই তাঁরা কাজ করেন।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস: মৎস্যসম্পদের মধ্যে চিংড়ির পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় কাঁকড়া। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮৬৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে। কাঁকড়ার প্রায় ৯৮ শতাংশই রপ্তানি হয় চীনসহ ১৭টি দেশে।
কাঁকড়াজীবী নারীদের মতো গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় শ্রম দিয়ে অবদান রাখা নারীদের কথা তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে আজ ১৫ অক্টোবর বুধবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস।
পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) রেসিলিয়েন্ট হোমস্টিড অ্যান্ড লাইভলিহুড সাপোর্ট টু দ্য ভালনারেবল কোস্টাল পিপল অব বাংলাদেশ (আরএইচএল) সহকারী প্রকল্প সমন্বয়ক শেখ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাতক্ষীরায় এখন সবচেয়ে বেশি কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। শুধু শ্যামনগর উপজেলায় কাঁকড়া খামার আছে। সেসব খামারে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি কাজ করেন। নারীরাই চালাচ্ছেন ছোট খামারগুলো। তিনি বলেন, ‘কাঁকড়া চাষে নারীদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বেশি। উপার্জনের অর্থ তাঁরা সন্তানের লেখাপড়া, স্বাস্থ্যে বেশি খরচ করেন। কয়েকটি পরিবারে দেখেছি, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কাজ করার ফলে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়েছে।’
বুড়ি গোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব দূর্গাবাটী গ্রামের তোতা এন্টারপ্রাইজে চাষের কাঁকড়া
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, মৎস্যসম্পদের মধ্যে চিংড়ির পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় কাঁকড়া। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮৬৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে। কাঁকড়ার প্রায় ৯৮ শতাংশই রপ্তানি হয় চীনসহ ১৭টি দেশে।
যে তিন নারীর কথা প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের নাম রীতা বৈদ্য, ভগবতী ভাঙ্গি ও শ্যামলী ভাঙ্গি। তাঁরা কাজ করেন তোতা এন্টারপ্রাইজ নামের কাঁকড়া চাষ প্রতিষ্ঠানে। ওই দিন ওই প্রতিষ্ঠানের সেতুতে নেমে দেখা যায়, পাইপের দুই মুখ বন্ধ করে তাতে বাঁশ দিয়ে খোপ খোপ করে কাঠামো বানানো হয়েছে। এই কাঠামো ভাসমান ভেলার মতো। প্রতিটি খোপে একটি করে কালো বাক্স রাখা। একটি বাক্সে একটি করে কাঁকড়া। ওই নারীরা সেতুর পাটাতনে বসে ভেলায় থাকা বাক্স খুলে কাঁকড়া পর্যবেক্ষণ করছিলেন। পর্যবেক্ষণ শেষে ভেলাটিকে পা দিয়ে সামনে ঠেলে আরেকটি বাক্স খুলছিলেন। নিয়মিত বিরতিতে বাক্স পর্যবেক্ষণের এই শব্দ একটা ‘ছন্দ’ তৈরি করছিল।
এই তিন নারী জানান, পরিবারে সচ্ছলতা আনার জন্য তাঁরা কাজ করেন। ঘণ্টায় ৪০ টাকা করে পান। মাসে ১০–১২ হাজার টাকা আয় হয়।
কাজের ফাঁকে শ্যামলী ভাঙ্গি (৩০) বলেন, সংসারের প্রয়োজনে এক বছর ধরে তিনি এখানে চেকারের কাজ করেন। তাঁর স্বামী সুরঞ্জন কুমার ভাঙ্গি এখানে সুপারভাইজার হিসেবে রয়েছেন। তিনি দিনে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা কাজ করেন। তাঁদের ১০ বছর বয়সী একটা মেয়ে রয়েছে। সে স্কুলে পড়ে।
শ্যামলীর ভাইয়ের স্ত্রী ভগবতী ভাঙ্গি (৪৫)। তিনি জানালেন, এই প্রতিষ্ঠানে তিনি তিন বছর ধরে রয়েছেন। এর বছর কয়েক আগে থেকে তিনি কাঁকড়া পয়েন্টে কাজ করেন। পরিবারে সচ্ছলতা আনতেই তিনি কাজে ঢোকেন।

জন্মভূমি ডেস্ক December 7, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় বিপদের আলামত সতর্কর প্রস্তুতি আছে কি?
Next Article যে ‌কারণে জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন উপকূলের নারীরা

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
বাগেরহাট

শরণখোলায় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

By জন্মভূমি ডেস্ক 4 hours ago
খুলনা

পাইকগাছা সড়ক কাজে অনিয়ম, সংবাদ প্রকাশের দৌড়ঝাঁপ শুরু

By জন্মভূমি ডেস্ক 4 hours ago
সাতক্ষীরা

উপকূল মানুষ বৈষম্যর শিকার ‌‌কেন?

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

উপকূল মানুষ বৈষম্যর শিকার ‌‌কেন?

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 hours ago
সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ খাবার পানিতেও বৈষম্যর শিকার

By জন্মভূমি ডেস্ক 16 hours ago
সাতক্ষীরা

ক্ষতি গরিবের, লাভ ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 day ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?