ইনজেকশনটির মেয়াদ থাকলেও শিশ্রনকৃত ওয়াটারের মেয়াদ নেই
স্যাম্পল বিক্রির শাস্তি সংক্রান্ত বিধান মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্ত
জন্মভূমি রিপোর্ট : এটি একটি ইনজেকশন, নাম সেপট্রন। স্কয়ার কোম্পানির এই ইনজেকশনটি ইনটেক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে- ভেতরের ডিস্টিল ওয়াটারের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, অথচ ইনজেকশনের ডেট রয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সম্প্রতি রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের একজন পল্লী চিকিৎসক তার ওষুধের দাকানে বসে এ ইনজেকশনটি এক শিশুর শরীরে প্রয়োগের আগে বিষয়টি দেখতে পান। এরপর তিনি সেটি পুশ না করে রেখে দেন। ইনজেকশনটি ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বলে ওই ওষুধ ব্যবসায়ী জানালেও সেটা কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন, তা বলেননি।
খুলনা শিশু হাসপাতালের উপ-তত্বাবধায়ক অনুপ কুমার দে বলেন, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, ব্রংকাইটিসসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত এক মাসউর্দ্ধ বয়স থেকে যে কোনো বয়সী রোগীদের এন্টিবায়োটিক হিসেবে ইনজেকশনটি ব্যবহার করা হয়। মেয়াদোত্তীর্ন ওই ইনজেকশনের ডিস্টিল ওয়াটার ব্যবহার করলে রোগীর শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার শঙ্কা ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
খুলনার নয় উপজেলাসহ মেট্রো অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের ওষুধের দোকোনে অবাধে বিক্রয় নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসকদের এটেনডেন্টদের মাধ্যমে এসব ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অথবা ৫০ শতাংশ কমিশনে তারা ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাছে সেগুলো বিক্রি করছেন। যা ক্রেতাদের কাছে বাজারে প্রচলিত দামে কিংবা সামান্য কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। নগরীর হেরাজ মার্কেটের অন্তত ৫০ জন ব্যবসায়ী এ কারবারের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তারা মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষে ওই ওষুধ মজুত করে রাখেন। গ্রাম-শহরের বিভিন্ন এলাকার খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা তাদের কাছ থেকে কম দামে ওই নিষিদ্ধ স্যাম্পল কিনে নিয়ে ব্যবসা করেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঔষধ প্রশাসন খুলনা জেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ওষুধ ও কসমেটিকস্ আইন-২০২৩ অনুসারে স্যাম্পল ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ। গত সপ্তাহে আইনটি মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্ত হয়েছে। এই আইনের ৪০ (গ) ধারা অনুযায়ী স্যাম্পল ওষুধ বিক্রেতাকে ভ্রাম্যমান আদালত শাস্তি হিসেবে অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন। এর আগে ড্রাগ আইন-১৯৪০ এ সরাসরি ফিজিশিয়ান স্যাম্পলের কথা উল্লেখ না থাকলেও ড্রাগ লাইসেন্সের শর্তাবলীর মধ্যে আছে, সে অনুসারে এর আগে অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গের অপরাধে দোষীদের ভ্রাম্যমাণ আদালত শাস্তির আওতায় আনতেন।
এদিকে, নগরী ও পাশর্^বর্তী কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুধের দোকান গজিয়ে উঠেছে। যাদের অনেকেরই ড্রাগ লাইসেন্স নেই। গ্রামের বিভিন্ন মুদি দোকানেও ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ বলছেন- জেলার নয় উপজেলা এবং খুলনা সদর থানা এলাকায় ৫ হাজার ১শ’ ৪৬টি ওষুধের দোকানের ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে। যদিও লাইসেন্স বিহীন ওষুধের দোকানের সংখ্যাও কম নয় বলে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তের সূত্র থেকে জানা গেছে।
ঔষধ পরিদর্শক রাব্বি আহমেদ দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, লাইসেন্স বিহীন ওষুধের দোকানিদের প্রথমে সাত দিনের জন্য নোটিশ দেয়া হয়, নোটিশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বিক্রয় নিষিদ্ধ স্যাম্পল ওষুধ বিক্রেতাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সাথে অনুমোদনহীনভাবে ওষুধের ব্যবসা পরিচালনাকারীদেরও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।