জন্মভূমি রিপোর্ট
দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন নগরীর বাস্তুহারা কলোনীর বাসিন্দারা। গত ১৪ সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিপাতে শহরের পানি দূর হলেও ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকার পানি এখনো কমেনি। প্রায় সারা বছরই পানি আটকে থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা থাকে এ এলাকায়। যার ফলে নানা চর্মরোগসহ ভোগান্তিতে কাটে প্রায় ১৫ হাজার কলোনীবাসীর। সেই সাথে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাস্তুহারা কলোনীতে ১২৭৫ পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। ভারী বর্ষণের করণে ঘন বসতিপূর্ণ ওই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। কেসিসি ইতোমধ্যেই বাস্তুহারা হতে ক্ষুদের খাল পর্যন্ত খালখননের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। কলোনীর ৮নং, ১০নং ও ১১নং রোডে হাঁটুজল রয়েছে। পাশাপাশি ১২নং রোড ও সেমিপাকা কলোনীতেও রয়েছে আংশিক পানি। এলাকাটিতে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্কুল। ভারী বর্ষণের কারণে বিদ্যালয় চত্ত¡রসহ সড়কে জমে রয়েছে হাঁটুজল। জমে থাকা পানির কারণে বাস্তুহারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিচতলার ভবন ছেড়ে দ্বিতীয় তলায় ক্লাস করতে দেখা গেছে। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক স্কুল ও মসজিদ চত্ত¡রেও। বিদ্যালয় ছুটির শেষে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কোমলমতি স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নোংরা হাঁটুজল পানি উপেক্ষা করে ঘরে ফিরতে দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গেল কয়েকদিন আগে ভারী বর্ষার কারণে বাস্তাহারা কলোনীর প্রতিটি অলিগলিসহ বাসা-বাড়িতে পানি উঠে যায়। ঘরে পানি উঠে বহু আসবারপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভারী বর্ষা পাঁচ দিন শেষ হয়ে গেলেও এখনো কোলনীর কয়েকটি সড়কে হাঁটুজল পানি থাকার কারণে চলাচলে চরম অসুবিধা পোহাচ্ছে তারা, এমন নোংরা পানির মধ্যে দিয়ে চলাচলের কারনে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চুলকানির হাত হতে রেহায় মিলছেনা। এলাকাবাসী পানি অবসারণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বাস্তহারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ইয়াসিন জানান, বৃষ্টির কারণে আমাদের বিদ্যালয়ের যাওয়ার রাস্তা এমনকি বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমের মধ্যেও পানি ঢুকে গেছে। ক্লাসে পানি ঢুকে যাওয়ার কারনে নিচে বসে ক্লাস করতে না পেরে শিক্ষকরা দো’তলায় আমাদের ক্লাস করিয়েছেন। তাছাড়া নোংরা-ময়লা পানির ভেতর হতে আমাদের বর্তমানে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করা লাগছে।
বাস্তহারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: এজাহার আলী মোড়ল জানান, এলাকাটি নিঁচু হওয়ার কারণে এলাকা ভেতরে ড্রেন থাকলেও পানি না সরার কারনে এই জলবদ্ধতা। এ বিষয়ে আমরা একাধীকবার উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলেছি। এলাকাটি নিঁচু হওয়ার কারণে বিদ্যালয়টি ২ ফুট উঁচু করা হয়েছে, তবুও বৃষ্টি-বাদল হলে জলবদ্ধতা দেখা দেয়। এ সমস্যা হতে পরিত্রানের একমাত্র উপায় হলো এলাকার মধ্যে ড্রেনগুলো আবর্জনা নিষ্কাশন করে সরাসরি বড় ড্রেনে গিয়ে যদি পানি পড়ে এবং সঠিক পানি প্রবাহের মাধ্যমে দ্রæত সরে যায় তবেই জলবদ্ধতা দূর হতে পাড়ে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি বাস্তহারার খালটিও খনন করাও দরকার।
কেসিসি’র যান্ত্রিক বিভাগের (তত্ত¡বধায়ক) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো: আব্দুল আজিজ জানান, মূলত: বাস্তহারা কলোনীর ভেতরে ড্রেন থাকলেও সামান্য বৃষ্টি হলেও পানি জমে, কারণ পানি নামার কোনো জায়গা নেই। পার্শ্ববর্তী যে খালটি আছে তা বলতে গেলে ভরাট। এই জলবদ্ধতা দূরকরণের জন্য কেসিসি ইতিমধ্যে খালখনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বাস্তহারা হতে ক্ষুদের খাল পর্যন্ত খাল খনন হলে বাস্তহারা কলোনীতে আর কোনো জলবদ্ধতা থাকবে না বলে আমি মনে করি। ইতিমধ্যেই জলবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে, তথাপি ওই এলাকাটিতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর জলাবদ্ধতার কারণে চলাচলে দুর্ভোগের বিষয়ে বলা হয়েছে সেহেতু এ ব্যাপারে দ্রতই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সিটি কর্পোরেশন ৪৯৭ কোটি টাকার যে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করেছে এর মধ্যে নগরীর বাস্তহারা কোলনীর জলাবদ্ধতা দূরকারণে খালখননও রয়েছে। যা বাস্তহারা হতে শুরু করে ক্ষুদের খাল পর্যন্ত খনন করা হবে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন মিলেছে, এরপর প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। সেখানকার বৈঠক শেষে অনুমোদন মিললে প্রকল্পটি একনেকে যাবে, একনেকে প্রকল্পের পাশ হলে কাজ শুরু হবে।
বাস্তুহারার জলাবদ্ধতায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ
Leave a comment