জন্মভূমি ডেস্ক
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। দু’দলের প্রায় দুই যুগের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। এতদিন পর্দার আড়ালে ইস্যুটি চাপা থাকলেও তা এখন প্রকাশ্যে চলে আসছে।
স¤প্রতি বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং এর আগে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যে দু’দলের সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে। সরকারবিরোধী সম্ভাব্য বড় আন্দোলনের আগে দীর্ঘদিনের মিত্র দুটি গুরুত্বপূর্ণ দলের সম্পর্কের অবনতি নিয়ে দু’দলের অভ্যন্তরেই মতবিরোধ বাড়ছে।
গত সোমবার রাজধানীর একটি সমাবেশে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ‘জামায়াতও উর্দু শব্দ, আওয়ামী লীগও উর্দু। দুটি একসঙ্গে মিলবে ভালো। আওয়ামী লীগ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করেনি। তাহলে কি তলে তলে তাদের পরকীয়া প্রেম চলছে? এর অর্থ, আওয়ামী লীগ গোপনে জামায়াতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। সেজন্য নিবন্ধন বাতিল করে না। তাই আজকে থেকে আওয়ামী-জামায়াত হবে, বিএনপি-জামায়াত আর হবে না।’
টুকুর ওই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে জামায়াত। টুকুর বক্তব্যকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে দলটি।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট গঠনের পর দলটির কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধে এ রকম বিবৃতির ঘটনা এটাই প্রথম। তবে টুকুর বক্তব্য এবং জামায়াতের বিবৃতির বিষয়ে বিএনপি নীরব। এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা মুখ খুলছেন না।
বিএনপির অভ্যন্তরেও টুকুবিরোধী নেতাদের একটি অংশ এই ইস্যুতে অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যে সরব হয়ে উঠছেন। তবে জামায়াতবিরোধী হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতারা টুকুর বক্তব্যকে সময়োপযোগী বলে সাধুবাদ দিচ্ছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, টুকু যে বক্তব্য দিয়েছেন এটা তাঁর ব্যক্তিগত বক্তব্য। এটা দলের বক্তব্য নয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি দলীয় ফোরামে আলোচনা না করেই এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, তাঁদের কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর যারা জুলুম (আওয়ামী লীগ) করেছে, সেই দলের সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্নই আসে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য এভাবে কথা বলতে পারেন না।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের সঙ্গে তাঁরা আর প্রকাশ্যে সম্পর্ক রাখতে চান না। এটা তাঁদের নীতিগত সিদ্ধান্ত। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় এ কৌশল নেওয়া হয়। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে অনানুষ্ঠানিকভাবে অকার্যকর করা হয়েছে।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, বিএনপি জোটের সঙ্গে তাঁরা আর নেই। তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন হতে পারে। জামায়াত জোটে না থাকার জন্য বিএনপিকেই অনেকটা দায়ী করেছেন তিনি।
জামায়াতের সমালোচনা করে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বলেছেন, বিগত দিনের আন্দোলনে জামায়াতকে কখনোই বিএনপির পাশে পাওয়া যায়নি। জামায়াত শুধু তাদের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের রক্ষায় রাজপথে আন্দোলন করেছে। দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে বিএনপি তাদের পাশে পায়নি। জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের দায় বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি আর নেবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে একসময় জামায়াতের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তারা একসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছে। এটা তো চরম সত্য।