
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনই বড় প্রশ্ন!
জন্মভূমি ডেস্ক : বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে প্যারিস চুক্তির উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই এখন জলবায়ু রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জাতিসংঘের ২১তম জলবায়ু সম্মেলন।
ওই সম্মেলনেই বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক জলবায়ু চুক্তি। আর ওই চুক্তিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বিশ্বকে রক্ষার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগ থেকে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার এক উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ লক্ষ্যে দীর্ঘ দরকষাকষি শেষে বিশ্ব পৌছেছিল এক আইনগত বাধ্যবাধকতায়।
কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের ৭ বছর পর এই লক্ষ্য অর্জন এখন এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বের সামর্থ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় সন্দেহ তৈরি হয়েছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছা নিয়ে। আসলেই কী বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই লক্ষ্য অর্জন করতে চায়?
২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও বৈশ্বিক উষ্ণতায় পুড়ছে পুরো পৃথিবী। তীব্র হচ্ছে মেরু অঞ্চলের বরফ গলা। দ্রুত বাড়ছে সাগরের উচ্চতা। কমে যাচ্ছে শীতের সময়কাল। দীর্ঘ হচ্ছে গ্রীস্ম। তীব্রতর হচ্ছে গরম। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর এক আগ্রাস রূপ দেখছে এখন পৃথিবী। বিশ্ব জুড়ে একের পর এক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, এবং মেরু অঞ্চলের সমুদ্রে বরফস্তর যে রেকর্ড গতিতে ভাঙছে তাতে রীতিমত শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা।
এ প্রসঙ্গে জলবায়ু সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্ত:সরকার বিশেষজ্ঞ প্যানেলের (আইপিসিসি) নব নির্বাচিত চেয়ারপার্সন জিম স্কিয়া কার্বন নির্গমন হ্রাসে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘নীতি নির্ধারকদের কাছে আমাদের চাওয়া হচ্ছে আরও পদক্ষেপ ধর্মী তথ্য। আমরা এখন আর নীতি বিষয়ক পদক্ষেপ চাইনা। আমরা চাই অ্যাকশন ধর্মী পদক্ষেপ।’
আগামী ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের ২৮তম জলবায়ু সম্মেলন। ওই সম্মেলনের সবচেয়ে মাইলফলন মহুর্ত হবে ‘গ্লোবার স্টকটেকিং’ প্রতিবেদন প্রকাশ। অর্থাৎ কোন দেশ জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমাতে কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানানোর। আর এই আসরেই উঠে আসবে আসলে বিশ্ব প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে কতটা দূরে আছে। আর যদি দূরত্বটা অনেক বেশী হয় তবেই বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ওপর কার্বন নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি বাড়ানোর নতুন চাপ সৃষ্টি হবে।
জাতিসংঘের আইপিসিসি প্যানেল এখন এই স্টকটেক রিপোর্ট নিয়ে গবেষণা করছে। যা পর্যালোচনার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে দেয়া হয়েছে। তবে আইপিসিসির নতুন চেয়ার জিম স্কিয়া এখন আর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ১.৫ (২.৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট) ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত থাকার ব্যাপারে আশাবাদী নন।
মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওস নিউজলেটারকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের কী করতে হবে তা জানিয়ে বিজ্ঞানীরা কিন্তু সরকারগুলোকে একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে তৎকালীন পৃথিবীর বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে দ্রুত গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর জন্য জোরাল পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছিল। সেই জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদন দেয়ার পরও কিন্তু পাঁচ বছর সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। বৈশ্বিক গ্রিন হাউজ গ্যাস পরিস্থিতির এখন আরও অবনতি হয়েছে এবং এই গ্যাস নিঃসরণের ধারা এখনও উর্ধ্বমুখী রয়েছে।
তিনি বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস লক্ষ্য কিন্তু এখনও জীবিত আছে। তবে এজন্য গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর জোর প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যেতে হবে। তবে আদৌ এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হকে কিনা তা এখন একটি বড় প্রশ্ন।’
তিন গণমাধ্যমের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান জলবায়ু দুর্যোগ ও রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন এই গ্রীষ্মে গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত ঘটছে এবং এটি এখন মানুষের প্রতিদিনের বাস্তবতা। ১০ কিংবা ২০ বছর আগের গণমাধ্যমের শিরোনাম স্মরণ করুন।