আবুল বাসার, বেনাপোলঃ দিন দিন নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোলের কাঁচা বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিদিন
বেড়েই চলেছে। মাছ, মাংস ও সবজির বাজার দিন দিন আরও চড়া হচ্ছে। আদা, পেঁয়াজ, রসুন, কাচামরিচে লেগেছে আগুন, জিরার দাম অস্বাভাবিক। সব কিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে তেল-চিনি পাশাপাশি বিভিন্ন পদের মসলার অস্বাভাবিক দাম।
আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকালে বেনাপোলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত সপ্তাহের চেয়েও বেড়েছে। সাধ্যের মধ্যে মিলছে না অনেক কিছুই। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। ২২০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা।
মসলার বাজারে কাঁচামরিচের দাম এখনও আকাশছোঁয়া। বাজারে কাঁচামরিচের কেজি এখন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। কয়েকদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। সময়ের ব্যবধানে এখন ১৪০০ থেকে
১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি বন্ধ ও নানা ধরনের সংকটের কথা বললেও ক্রেতারা তা মেনে নিতে নারাজ।
মাছ-মাংসের দাম কিছুটা কমলেও মসলা ও শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে এখন সাধারণ মানুষ।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো সবজির দাম কমেনি। বরং চড়া দামের সবজির তালিকায় যোগ হয়েছে সচরাচর স্থিতিশীল থাকা আলুও। এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি দামে আলু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বাজারে আলুর দাম আরও বেড়ে এখন প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির পাশাপাশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের বাজারও। ৬০০ টাকা কেজির কমে কেনা যাচ্ছে না টেংরা, কই, শিং ও চিংড়ি মাছ। চাষের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০
টাকার বেশি দামে। দুই কেজি বা তারচেয়ে বড় হলে দাম কেজিতে আরও ৮০-১২০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এমনকি ছোট আকারের পাঙাশ-তেলাপিয়া মাছের দামও এখন কেজিপ্রতি ১৬০-১৮০ টাকা। যা স্বাভাবিক সময়ে ১২০ টাকা কেজি বা তারও কমে পাওয়া যেতো।
এছাড়া আস্ত ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং কাটা ব্রয়লার মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম
বেড়ে হয়েছে ১৫৬ থেকে ১৬৮ টাকা ডজন। তবে গরুর গরুর মাংসের দাম আগের তুলনায় ৫০ টাকা কমে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বাড়ছে। এর প্রভাবে দাম বাড়ছে। আমদানিকারকরা বলছেন, বাজার স্বাভাবিক রাখতে আমদানির বিকল্প নেই। পেঁয়াজ আমদানি না করা গেলে বাজার আরো ঊর্ধ্বমুখী হবে। কারণ বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। ঋণপত্র খোলায় (এলসি) জটিলতার কারণে চাহিদামতো আদা ও রসুন আমদানি করতে পারছেন না তাঁরা।
দেশে কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৬ মার্চ থেকে বেনাপোলসহ দেশের সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
ক্রেতারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের তদারকি ও নিয়মিতবাজার মনিটরিং না হওয়াতে আড়ৎদার ও বিক্রেতারা যোগসাযোগে দিনদিন বাজার আরো বেশি নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে। তাই অতিসত্বর বাজার মনিটরিং প্রয়োজন।