ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচলের পক্ষে-বিপক্ষে চালকদের বক্তব্য পাওয়া গেছে। রিক্সা মালিকরা বরাবরই ব্যাটারি চালিত রিক্সার পক্ষে। তারা পায়ে চালিত রিক্সার তুলনায় এতে ১শ ৩০ থেকে ১শ’৮০ টাকা বেশি ভাড়া পান। অন্যদিকে, সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারি চালিত রিক্সার অনুমোদনসহ কয়েকটি দাবিতে একটি বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন আন্দোলন করছেন।
রূপসা উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের মোঃ ইসমাইল মোল্লা (৫০) চার সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। গ্রামে কৃষিকাজ করার পাশাপাশি তিনি শহরে একবেলা রিক্সা চালান। জেলখানা খেয়াঘাট এলাকার জনৈক বাবুল চৌধুরির গ্যারেজ থেকে তিনি বিকেল পাঁচ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ৫০ টাকায় রিক্সা ভাড়া নেন। গ্যারেজের ভাড়া মিটিয়ে দৈনিক গড়ে তিনি ৪শ’ টাকা আয় করেন। করোনা দুর্যোগের আগে তার ৬-৭শ’ টাকা আয় হতো।
কয়েকজন রিক্সা চালক বলেন, এখন অধিকাংশ গ্যারেজে প্রয়োজনমতো ব্যাটারি চালিত রিক্সা পাওয়া যায় না। ওই রিক্সার তুলনায় পায়ে চালিত রিক্সায় পরিশ্রম বেশি। ইচ্ছে থাকলেও বেশি সময় ধরে চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। শরীরে পেরে ওঠে না। আয় কম হয়। সংসার ঠিকমত চলে না।
তবে, রিক্সা চালক মোঃ ফেরদাউসসহ কয়েকজন বলছিলেন- ব্যাটারি চালিত রিক্সার ভাড়া দু’-আড়াইশ টাকা। তাতে যে চার্জ থাকে তা দিয়ে ৭-৮ ঘন্টা চালানো যায়। অন্যদিকে, পায়ে চালিত রিক্সার ভাড়া একবেলা ৪০-৫০ টাকা, দু’ বেলা ৭০-৮০ টাকা। ব্যাটারি চালিত রিক্সায় তুলনামূলক বেশি আয় করা গেলেও বিভিন্ন সড়কে পুলিশি অভিযান ও হয়রানিতে পড়তে হয়। গ্যারেজের রিক্সা ভাড়া সাশ্রয় ও নিরাপদে রোজগার করার জন্য পায়ে চালিত রিক্সাই ঠিক আছে। মালিককে বাড়তি রিক্সা ভাড়া দিতে যেয়ে উপার্জন পায়ে চালিত রিক্সার মতোই হয়ে যায়।
মোঃ শামিম (৩৮) নামে এক রিক্সা চালক টুটপাড়া খালপাড় এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ব্যাটারি চালিত রিক্সা ভাড়া নিয়ে চালাতেন। গত মাসের শেষ দিকে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকা থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট তার কাছ থেকে রিক্সাটি আটক করে। একদিন পর তার পকেটের থেকে ৫শ’ টাকা জরিমানা দিয়ে তিনি রিক্সাটি ছাড়িয়ে আনেন। তিনি এখন পায়ে চালিত রিক্সা চালান।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সংগঠন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের অধিভুক্ত রিক্সা ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ নেতা-কর্মীরা ব্যাটারি চালিত রিক্সার অনুমতি দেয়াসহ কয়েকটি দাবিতে গত অক্টোবরের মাঝামাঝি নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন করেন। এরপর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ-কেএমপি কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট-এর খুলনা জেলা সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু বলেন, নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারি চালিত রিক্সার অনুমতি দেয়া, পুলিশি হয়রানী ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং মহাসড়কে আলাদা লেন তৈরি করে এই যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। রাস্ট্রায়ত্ব পাটকল চালুর দাবিতে আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ততার কারণে আপাতত কর্মসূচি নেই। পরবর্তিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষিত হবে।
রিক্সা-ভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মানিক মিয়া বলেন, পায়ে চালিত রিক্সা চালাতে চালকেদের কষ্ট হয়। তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। একদিন চালানোর পর পরের দিন অনেকে চালাতে পারেন না। ব্যাটারি চালিত রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা মালিক সমিতি’র নেতাদেরও দাবি- চলাচলের অনুমতি। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশের অত্যাচারে চালক ও মালিকেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এ ব্যাপারে প্রতিকারের দাবিতে অন্যান্য সংগঠনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষিত হতে পারে।