জন্মভূমি ডেস্ক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর ভারতের ভিসাকেন্দ্রগুলো এখন কেবল জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সীমিত পরিসরে স্লট দিচ্ছে। এতে ভিসা নিয়ে ভারতের বিধিনিষেধে স্থলপথে দেশের সবচাইতে বড় আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ব্যবহার করে দেশটিতে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এর ফলে ‘ভ্রমণকর’ বাবদ রাজস্ব আদায় অর্ধেকে গেছে। এছাড়া বড় ধরনের ধস নেমেছে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে।
বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যায় কেবলমাত্র সেই সব যাত্রী প্রত্যেকেই ভ্রমণ কর বাবদ এক হাজার টাকা এবং প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ফি বাবদ ৫৪ টাকা দিয়ে থাকেন। ফেরত আসা যাত্রীরা এই করের আওতামুক্ত। আগে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে দুই দেশের মধ্যে দিনে সাত থেকে নয় হাজার যাত্রী পারাপার হত, ভ্রমণ কর থেকে প্রতিমাসে রাজস্ব আয় হত গড়ে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু ৫ আগস্ট পর থেকে দিনে যাত্রী পারপার নেমেছে পাঁচ হাজারে। আর বর্তমানে রাজস্ব আদায় হচ্ছে মাসে আট কোটি টাকা।
এর মধ্যে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) মোট পারাপার হয়েছেন ৫ হাজার ১৫৯ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ২ হাজার ৬৫১ জন, এসেছেন ২ হাজার ৫০৮ জন।
এদিকে, যাত্রী কমে যাওয়ায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় ধস নেমেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোল থেকে প্রায় ১৫০টি প্রতিদিন দূরপাল্লার বাস বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় উদ্দেশে ছেড়ে যেত। এখন সেখানে ২০ থেকে ৩০টা বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তারপরও অধিকাংশ বাসই খালি যাচ্ছে। এছাড়া এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায়ী ও ভারত যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের টাকা এক্সচেঞ্জকারী মানিচেঞ্জার থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সকল ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর মতিয়ার রহমান বলেন, ভারত সরকার ব্যবসা (বিজনেস) ভিসা না দেয়ায় এর প্রভাব স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও পড়তে শুরু করেছে।
ভিসা না দেয়ার পর নতুন যাত্রী নেই বললেই চলে মন্তব্য করে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূইয়া জানান, বর্তমানে যাতায়াতকারীদের অধিকাংশই আগস্টের আগেই ভিসা পাওয়া যাত্রী।
প্রসঙ্গত, ভারতের কলকাতার দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। দূরত্ব কম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় স্থলপথের অধিকাংশ যাত্রীই এ চেকপোস্ট দিয়ে ভারত যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর ভারত-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের যাতায়াতকারী এই মানুষদের সহযোগিতার জন্য বেনাপোল চেকপোস্টে এলাকায় গড়ে উঠেছে মানিচেঞ্জার থেকে শুরু করে দূরপাল্লার পরিবহন কাউন্টার, ট্যুর গাইড, ভিসা সহায়তা কেন্দ্র, বাস-ট্রেন- প্লেনের টিকেট বুকিং এজেন্সি এবং হোটেল, রেস্তোরাঁসহ ছোটখাটো নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরিই চেকপোস্ট ব্যবহারকারী যাত্রীদের উপর নির্ভরশীল।