জন্মভূমি ডেস্ক : ফসলের নূন্যতম মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল-লাঠি ব্যবহার করেছে ভারতীয় পুলিশ। বুধবার সকালে পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে ঘটেছে এই ঘটনা।
রয়টার্স, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিসহ বিভিন্ন সংবাদাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বুধবার ভোরের দিকে পাঞ্জাব-হরিয়ানা-দিল্লির সীমান্তের শম্ভু এলাকায় হাইওয়েতে জড়ো হতে থাকেন কৃষকরা। তাদের গন্তব্য ছিল রাজধানী নয়াদিল্লি। হাইওয়েতে আগে থেকেই ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল দাঙ্গা পুলিশ।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের আগমণও বাড়তে থাকে। একসময় কৃষকদের সংখ্যা ১০ হাজার এবং তাদের সঙ্গে আসা ট্রাক্টরের সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এ সময় কৃষকরা ব্যারিকেড সরানোর চেষ্টা করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় তাদের।
এক বিবৃতিতে হরিয়ানা পুলিশ জানিয়েছে, ‘কৃষকদের অনেকেই সঙ্গে লাঠি-পাথর-লোহার শিল্ড নিয়ে এসেছিলেন এবং ব্যারিকেড সরানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় তাদের বাধা দেওয়া হলে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নামেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।’
এনডিটিভি জানিয়েছে, রাজধানী নয়াদিল্লি এবং গাজিপুর, টিকরি, নয়ডা এবং সিংঘুসহ দিল্লির সবগুলো সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা জারি করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত ভারতের কৃষকরা যেন তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য তাদের ফসল একটি নির্ধারিত মূল্যে কিনে নেয় দেশটির সরকার। নির্ধারিত এই মূল্যকে বলা হয় মিনিমাম সাপোর্টিভ প্রাইস (এমএসপি)।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন কৃষি আইন প্রণয়ন করে নয়াদিল্লি। সেই আইনে এই ব্যবস্থাটির পরিবর্তন ও এমএসপি বাদ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই বছর নভেম্বর থেকে নতুন কৃষি আইন বাতিল এবং বিভিন্ন ফসলের এমএসপি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ভারতের কৃষকরা।
প্রায় এক বছর ধরে দিল্লিতে কৃষকদের অবস্থান, প্রতিবাদ কর্মসূচী এবং ৭ শতাধিক কৃষকের মৃত্যুবরণের পর ২০২১ সালের নভেম্বরে নতুন কৃষি আইন বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সঙ্গে কৃষক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করে।
তবে কৃষকদের অভিযোগ, বেশ কয়েকটি পণ্যের এমএসপি বাড়ানো হয়নি। এগুলো হলো ভুট্টা, তুলা ও বিভিন্ন প্রকার ডাল।
এই নিয়ে গত প্রায় তিন বছরে কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের; কিন্তু প্রতিটি বৈঠকই ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণ হিসেবে কৃষক নেতাদের বক্তব্য, সরকার যে এমএসপি প্রস্তাব করছে, তা খুবই কম এবং বর্তমান বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
কৃষকদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারতের বৃহত্তম দুই কৃষক সংগঠন জোট কিষান মজদুর মোর্চা এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চা। মঙ্গলবার এই দুই সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার পঞ্চম দফা বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর রাজধানীতে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিল্লি রওনা হয়েছিলেন পাঞ্জাব-হরিয়ানার এই ১০ হাজার কৃষক।