
মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এরই মধ্যে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। শুক্রবার রাতে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে দেশটিতে। এই ভূমিকম্প আমাদের জন্য অশনিসংকেত। যে কোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা অমূলক নয়। জাতিসংঘও বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে ঢাকা।
বাংলাদেশের দুদিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে উত্তর-পূর্বকোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, আরেকটি হচ্ছে পূর্বে চিটাগং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে। এখানে দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে যেটা ডাউকি ফল্ট, এখানে সংকোচনের হার হচ্ছে প্রতি ১০০ বছরে এক মিটার। গত ৫০০-৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে পাঁচ-ছয় মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে। এটা যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয় তাহলে এটা ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।
কাজেই এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সরকার বা জনগণ কতটা প্রস্তুত, সেটা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি।
বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলেও কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকাও ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে বলে দাবি করে আসছেন ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। উত্তরে তিব্বত সাব-প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং দক্ষিণে বার্মা সাব-প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ থেকে, কিশোরগঞ্জ-চট্টগ্রাম হয়ে একেবারে দক্ষিণ সুমাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে। এ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলো ঢাকা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রিখটার স্কেলে যদি ৭ কিংবা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে রাজধানীতে ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। গবেষণা বলছে, ইন্ডিয়া প্লেট পূর্বদিকে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে আর বার্মা প্লেট পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে সেখানে যে পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে, তাতে ৮ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হতেই পারে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ভূমিকম্প তো দুরস্ত, সাধারণ ভবন ধসের মতো দুর্যোগ সামাল দিতেও আমাদের বেগ পেতে হয়। সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এর বাস্তব উদাহরণ।
ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই। এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্বপ্রস্তুতিই আসল। ভূমিকম্পের শঙ্কা মাথায় নিয়েই আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলায় একদিকে রেসপন্ডিং ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে; অন্যদিকে শক্ত অবকাঠামো গড়তে বিল্ডিং কোড অ্যানফোর্সমেন্টকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।