রঞ্জন কুমার মল্লিক, মাদারীপুর:মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় অস্তিত্ব সংকটে থাকা ও বেদখল হওয়া ৬৫টি সরকারী (খাস) জলমহাল উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসন। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন কারণে এসব জলমহাল থেকে রাজস্ব বঞ্চিত ছিল সরকার। সম্প্রতি এসব জলমহাল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর খননসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে জলমহাল থেকে রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলায় ২৫টি, রাজৈর উপজেলার ৫টি ও ডাসার উপজেলায় ৩৫টি খাস জলমহাল রয়েছে। এসব জলমহালের মধ্যে কিছু বড় আকারের হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এগুলো দিঘি হিসেবে পরিচিত। ৬৫টি জলমহালে জমির পরিমাণ প্রায় ৬০ একর। এছাড়া কিছু জমি আগে খাস তালিকায় থাকলেও বিভিন্নভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যক্তির নামে রেকর্ড করানো হয়েছে। সেসব জমির রেকর্ড সংশোধন করে খাসের তালিকায় এনে সেগুলো ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত দুই কারণে জলমহাল থেকে রাজস্ব বঞ্চিত ছিল সরকার। স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রভাবশালীরা এসব জলমহাল দখলে রেখেছিল। আর কিছু জলমহাল সাময়িক বন্দোবস্তের নামে দীর্ঘ মেয়াদে দখল করে ছিল। এছাড়া কিছু জলমহাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো ইজারা দেয়ার অযোগ্য ছিল।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্থানীয় কিছু লোক মিলে ভাগাভাগি করে এসব জমি ভোগ দখল করে আসছে বছরের পর বছর। ভূমি অফিস থেকে তাদের ইজারা নেয়ার তাগিদ দিলেও তারা বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এছাড়া স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে এসব জলমহাল ভোগ করছে তারা। যেসব জলমহাল ভরাট হয়ে গেছে সেসব জলমহালে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ করে প্রভাবশালী কেউ কেউ। সম্প্রতি মাদারীপুরের জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে জলমহালগুলো উদ্ধার করে। ইজারার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইজারা সম্পন্ন হলে সরকার অনেক রাজস্ব পাবে বলে জানা যায়। জেলা প্রশাসন রাজস্ব বৃদ্ধিতে বদ্ধ পরিকর রয়েছে। বিগত দিনে বিভিন্ন কারণে পদক্ষেপ নিতে না পারলেও বর্তমানে জলমহালগুলো জেলা প্রশাসনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব জলমহাল ইজারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। সঠিক নিয়মে ইজারা দিলে ও সঠিক তদারকি অব্যাহত থাকলে প্রতি বছর প্রচুর রাজস্ব পাবে সরকার।
সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খাগছাড়া গ্রামের মনোয়ার হোসেন নামে এক যুবক বলেন, এতদিন জানতাম সরকারী দিঘিটি অনেক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে একটি মহল। সরকার যেহেতু দিঘিটি উদ্ধার করেছে তাই ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করা যাবে। এত আর্থিক সচ্ছলতাও আসবে কিছু বেকার ছেলেও কাজে লাগানো যাবে।
ডাসার উপজেলার পান্তাপাড়া এলাকার রুহুল আমিন বলেন, সরকারী জলমহাল কখন ইজারা দেওয়া হয় জানতেও পারি না। যারা ভোগ দখলে আছে তারা এসব জলমহাল সঠিক ব্যবহার করেন না। এখন সুযোগ হয়েছে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করবো।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ঝোটন চন্দ বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় থাকা সরকারী ৬৫টি জলমহাল উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে জলমহালগুলো বেদখল ছিল। এসব জলমহালের ইজারার কাজ সম্পন্ন হলে সরকার অনেক টাকা রাজস্ব পাবে। আমরা প্রশিক্ষিত বেকার যুবকদের মাছ চাষ করার জন্য ইজারা দিতে অগ্রাধিকার দেব।
তিনি আরো বলেন, সেখানে জমির পরিমাণ প্রায় ষাট একর। এছাড়া কিছু জমি আগে খাস তালিকায় থাকলেও বিভিন্নভাবে ব্যক্তির নামে রেকর্ড করানো হয়েছে। সেসব জমির রেকর্ড সংশোধন করে খাসের তালিকায় এনে সেগুলো ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে সরকার অনেক রাজস্ব পাবে।
এই বিষয়ে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘গত সরকারের আমলে মাদারীপুরের বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জের সরকারি খাস জলমহালগুলো রাজনৈতিক ভাবে প্রভাশালীরা দখল করে আসছিল। সরকার এগুলোকে উদ্ধার করায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে জেলায় আরো যেসকল জলমহাল রয়েছে সেগুলো উদ্ধার করার দাবী করছি।
মাদারীপুরে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ৬৫ টি জলমহাল উদ্ধার
Leave a comment