রাস্তার পাইপ স্থাপন করে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে প্রতিবন্ধকতা
মোংলা প্রতিনিধি : সংঘবদ্ধ কারবারীরা দীর্ঘদিন ধরে মোংলা পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেআইনীভাবে রাস্তার উপর দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালু কারবারের মহোৎসব চালাচ্ছে। এতে করে রাস্তায় চলাচলরত পথচারীসহ নানা ধরনের যানবাহনের যাতায়াতে চরম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় পাইপের উপর দিয়ে চলাচলে বাধ্য হওয়ায় যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মাঝে মধ্যে অকেজো হওয়াসহ এর যন্ত্রাংশে প্রায় নানা ধরনের যনঝট লেগে থাকছে। এ ছাড়া পাইপের ধাক্কা লাগার কারণে যানবাহনের অনেক যাত্রী হঠাৎ করে রাস্তায় পড়ে আঘাত পেয়ে আহত হচ্ছে। এমনকি এই পাইপের ধাক্কায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ইতিপ‚র্বে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এর কিছুর পরও বালু কারবারীর দল প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে বছরের পর বছর বেআইনীভাবে তাদের এ কারবার রমরমাভাবে চালিয়ে আসছে। ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতাদের নেপথ্যের ছত্রছায়ায় অঙ্গ দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা ও কর্মীরা এ কারবার চালাচ্ছে বলে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট সবাই চুপচাপ থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, মোংলা শহরের জায়গা জমির দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় এক শ্রেণির বাড়ির মালিক তাদের পুকুর ও নিচু জমি নদীর বালু দিয়ে ভরাট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এতে করে এ শহরে পাইপের মাধ্যমে বালুর বেশ চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাসক দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় অঙ্গ দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা কর্মী সিন্ডিকেট করে কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে শহরে পাইপের মাধ্যমে বালু সরবরাহের রমরমা ব্যবসা চালু করেছে।
সংঘবদ্ধ কারবারীর দল নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তা নৌযান যোগে নদীর পাড়ে এনে সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করছে। নদীর পাড় থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি মোটা পাইপের মাধ্যমে শহর ও শহরতলীর কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে এ বালু সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যত্রতত্রভাবে শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশ থেকে এ বালু সরবরাহের পাইপ নেয়া হয়েছে। এমনকি পৌরসভাধীন সরকারী রেকর্ডীয় ঠাকুর রানী খালের অধিকাংশ জায়গায় বাঁশ পুতে এ পাইপ নেয়া হয়েছে। এতে করে মাঝে মধ্যে পাইপ ফেটে বা লিক হয়ে বালু পড়ে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ খালে পৌর কর্তৃপক্ষের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার কর্মস‚চী চললেও প্রভাবশালী কারবারীদের বালুর পাইপের কারণে সে কার্যক্রমে অনেকাটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের উপর দিয়ে এ পাইপ বসানো হয়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তার উপর আড়াআড়িভাবে পাইপ ক্রসিং করে নেয়া হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে শেলাবুনিয়ার মোহসেনিয়া মাদ্রাসার মোড় ও উপজেলার পাশে ছাত্তার লেন এলাকায় রাস্তার উপরে ডাইব্রেশন (আড়াআড়িভাবে ক্রসিং) করে পাইপ বসানো রয়েছে। এতে করে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের অশেষ দ‚র্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তায় আড়াআড়িভাবে পাইপ থাকার কারণে যানবাহনের বিশেষ করে মোটর সাইকেল, ব্যাটারী চালিত মিশুক, ইজি বাইক, অটো রিক্সা ও ভ্যানে ছোট খাট দুর্ঘটনা লেগেই থাকছে। এতে করে ওইসব যানবাহনের ব্রেক, হাইড্রোলিক,এক্সেল, বেয়ারিং, চাকা ভেঙ্গে নষ্টসহ মটর পুড়ে যাচ্ছে। পাইপে ধাক্কা লেগে যাত্রীসহ চালকরা শারীরিক নানাভাবে কমবেশী আঘাত পেয়ে আহত হচ্ছে। এসব স্থানে পাইপ থাকার কোন সিগন্যাল না থাকায় রাতের বেলায় বেশী দুর্ঘটনা ঘটছে। বছর দু’য়েক আগে মাদ্রাসা সড়ক ও কুমারখালী এলাকায় এ পাইপের কারণে পৃথক দুর্ঘটনায় দু’জন মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছিল। সে সময় স্থানীয় প্রশাসন সড়ক থেকে বালু পাইপ অপসারণ করলেও পরবর্তিতে প্রভাবশালী কারবারীরা আবারও রাস্তার পাইপ স্থাপন করে দেদারছে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কারবারীরা তাদের ব্যবসার সুবিধার জন্য কোথাও বিভিন্ন সরকারী রাস্তার ড্রেন ভেঙ্গে, কোথাও রাস্তার নীচে আন্ডার গ্রাউন্ডভাবে পাইপ স্থাপন করেছে। শহরের প্রধান মাদ্রাসা সড়কের সুন্দরবন বোডিং এলাকায় বাশেঁর খুটি তৈরী করে রাস্তার কয়েকফুট উপর দিয়ে পাইপ বসিয়ে বালু সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে যে কোন সময় বাঁশ ভেঙ্গে ওই পাইপ নীচে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে।
মোংলা পোর্ট পৌরসভা ভ্যান রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ এরশাদুজ্জামান সেলিম অভিযোগ করে বলেন, রাস্তার উপর বালুর পাইপের কারণে যানবাহন ও চালক যাত্রীদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে পৌরসভাসহ স্থানীয় প্রশাসনে বহু লিখিত আবেদন জানানো হলেও কোন ফল হয়নি। বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে রাস্তার পাইপ দিয়ে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি দ্রতি শহরের রাস্তার উপর দিয়ে এ পাইপ অপসারণের দাবি জানান।
মোংলা নাগরিক সমাজের আহবায়ক ন‚র আলম শেখ বলেন, রাস্তার উপর দিয়ে বালু পরিবহনের পাইপ স্থাপন করায় যানবাহন ও নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাচলে বাধার সৃষ্টি হওয়াসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি এ পাইপ অপসারণে স্থানীয় প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা কামনা করেন।
এদিকে নবীর হোসেন ওরফে নবী নামে এক বালু ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, রাস্তার পাইপ স্থাপনের মাধ্যমে বালু সরবরাহ করার ব্যবসা কোনভাবেই বেআইনী নয়। এ ব্যবসা চালাতে তাদের কোন সমস্যা হয় না। সব নিয়ম কানুন মেনেই তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে এ ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
তবে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমান বলেন, পৌর এলাকার রাস্তার উপর দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালু সরবরাহ নিষিদ্ধ। তিনি এ ব্যাপারে দ্রæত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
মোংলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, রাস্তার উপর দিয়ে পাইপের স্থাপন করে বালু সরবরাহের মাধ্যমে জনগণ ও যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা কোনভাবেই আইনী কাজ নয়, এটি বেআইনী কারবার। তবে মাদ্রাসা সড়কের সরকারী রেকর্ডীয় ঠাকুর রানী খাল থেকে বালু পরিবহনের পাইপ অপসারণে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যে সব রাস্তার উপর দিয়ে পাইপ নেয়া হয়েছে তা অপসারণে অভিযান চালানো হবে।