জন্মভূমি ডেস্ক : অ্যাম্বুলেন্সটি ছিল নতুন। চালক না থাকায় একদিনও চলেনি। গত দেড় বছর ধরে পড়ে ছিল গ্যারেজে। তারপরেও চারটি চাকা নেই। নেই মোবাইল চেম্বার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফায়ার বক্স সিলিন্ডার, ব্যাটারিসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ। এসব নাকি ‘চুরি’ হয়ে গেছে। দেড় বছর ধরে তিন দফায় চুরির ঘটনায় থানায় দুটি জিডি করেছে বাগেরহাটের মোল্লাহাট স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। তবে আজও রহস্য উৎঘাটন হয়নি। পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। এনিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কোন তদন্তও হয়নি।
এদিকে, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রার্থী স্থানীয় মানুষেরা। মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রোগীদের ভোগান্তি থেকে রক্ষার জন্য ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুকূলে ঢাকা-১৬২/২ নম্বরেরএকটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাকর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর বরাবর চিঠি প্রদান করেন। পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্সটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেএনে গ্যারেজে রাখা হয়। চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি সেখানেই পড়ে ছিলো। এরই মধ্যে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি অ্যাম্বুলেন্সের চারটি চাকা চুরি হয় বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: রায়হান।
তখন জানা যায়, গ্যারেজের সিক ভেঙ্গে চাকা চুরি হয়েছে। এর এক বছর পরে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি অ্যাম্বুলেন্সের পাশের গ¬াস ভাঙ্গা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফায়ার বক্স সিলিন্ডার, ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি, মবিল চেম্বারের ঢাকনা চুরি হয়েছে মর্মে আরও একটি সাধারণ ডায়েরি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার নাহিদুল ইসলাম।
সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপাতত মামলা করতে ইচ্ছুক না। লাখ লাখ টাকা মূল্যের‘নতুন’ এই অ্যাম্বুলেন্সটি আর কোনদিন চালু হবে কিনা তা কেউ বলতে পারছেন না।
সেবা বঞ্চিত ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা মনে করেন, যোগসাজশে লাখ লাখ টাকা মূল্যের এ অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো হয়ে গেল। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এর জন্য দায়ী।’
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কোনো চালক নেই। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত দুইজন নৈশ্য প্রহরী থাকলেও, তারা গত ১১ মাস বেতন না পাওয়ায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের পেছনের জরাজীর্ণ একটি গ্যারেজের মধ্যে নতুন অ্যাম্বুলেন্সটি রাখা আছে। গ্যারেজের ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ছে এ্যাম্বুলেন্সের উপর। বামপাশের দরজার গ¬াস ভাঙ্গা। কোনো চাকা নেই গাড়িতে। গাড়ির ভেতরে অক্সিজেন সিলিন্ডার,ফায়ার বক্স সিলিন্ডার, ব্যাটারি, মবিল চেম্বারের ঢাকনা নেই। দেখলে মনে হয় মালিক ছাড়া বেওয়ারিশ অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখমোহন আলী ও নাদিম শেখ বলেন, প্রতিনিয়তই এই হাসপাতাল থেকে অসুস্থ্য রোগীদের বাগেরহাট জেলা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোগীর স্বজনরা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন।’ তারা এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আানা উচিৎ বলে মনে করেন। একই সাথে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে চালু ও স্থায়ীভাবে চালক নিয়োগের দাবী করেন।
তাওহীদ ভুইয়া ও হাফিজা বেগম বলেন, ‘একজন রোগীকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে খুলনা নিতে লাগে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা।বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সকে দিতে হয় ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকা। যে কোন মূল্যে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হোক।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যোগসাজশে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ও ব্যবসায়ীরা নতুন সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চাকাসহ মূল্যবান মালামাল ‘চুরি’ করতে পারে।
স্থানীয় সমাজ সেবক মফিজুর রহমানের ভাষায়, ‘সরকারি নতুন অ্যাম্বুলেন্স একদিনও চলেনি, আর চলবে না।’’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেচত্বরে থাকা বেসরকারি আলিফ অ্যাম্বুলেন্সের চালক মেহেদী হাসান বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সব সময় না পাওয়ায় আমরা রোগী বহন করি। এক সময় হাসপাতালের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স রাখতে নিষেধ করা হলেও, পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ম্যাডাম রাখতে বলেছেন।
মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্যও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোছা. মাহফুজা খাতুন বলেন, আমি যোগদানের আগেই অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা চুরি হয়। পরে আবারও কিছু মালামাল চুরি হয়। আমরা থানায় জিডি করেছি। গ্যারেজটার অবস্থা খুবই খারাপ। চাকা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি অন্যত্র সরানো যাচ্ছেনা। এছাড়া আমাদের অ্যাম্বুলেন্স চালক ও নৈশ প্রহরী নেই। এসব বিষয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
চুরির বিষয়ে মোল্লাহাটথানার ওসি সৌমেন দাস বলেন, মালামাল চুরি হওয়া বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, লোকবল সংকটের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশাকরি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। আর চুরির ব্যাপারটি পুলিশ দেখছে।