
যশোর অফিস : যশোর শিক্ষা বোর্ডের চলতি এসএসসি পরীক্ষায় বিষয় কোড ভুলে হাজার-হাজার শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন প্রবেশপত্রে দেখা যাচ্ছে তার ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার কোড এসেছে তেমনি মুসলিম শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্যে বিষয় কোড যেটা রয়েছে সেটি হিন্দু ধর্মের। আর অর্থনীতির স্থানে পৌরনীতি, পৌরনীতির স্থানে অর্থনীতির কোড অজস্র। পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎ চোখে পড়ছে আর পরীক্ষার্থী ও অভিভাবককে দুশ্চিন্তা নিয়ে ছুটতে হচ্ছে বিদ্যালয়ে সেখান থেকে শিক্ষা বোর্ডে। বোর্ড সুযোগ দিচ্ছে সংশোধনের তবে তার জন্যে ব্যয় করতে হচ্ছে, আবেদন করতে হচ্ছে, বিদ্যালয়ের প্রত্যয়ন লাগছে। চলমান এসএসসির সময়ে পরীক্ষার্থীকে ভয়াবহ দুশ্চিন্তা নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পার করতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের জয়া রাণী দাসের এসএসসি পরীক্ষায় প্রবেশপত্রে এবার বিষয় কোড এসেছে ১১১, এই কোড মানে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তার বিষয় কোড হবে ১১২ যেটা হিন্দু ধর্ম্বাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্যে নির্ধারিত। আবার নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ইশরাত জাহান রিক্তার প্রবেশ পত্রে অন্যান্য বিষয়ের সাথে একটি বিষয় কোড এসেছে ১৪০ যার অর্থ দাঁড়ায় সে পৌরনীতির পরীক্ষার্থী। কিন্তু সে প্রকৃত অর্থে অর্থনীতির পরীক্ষার্থী, অর্থনীতির বিষয় কোড ১৪১। রিক্তা বা জয়ার মতো হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর এ রকম বিষয় কোড ভুল এসেছে বা ভুল বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে এমন বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।
সাধারণত ৯ম শ্রেণিতে ওঠার পর শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করতে হয়। বর্তমানে যারা পরীক্ষা দিচ্ছে তারা ২০২১ সালে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। সে সময় তাদের বিষয়গুলি নির্ধারিত হয়েছে। ওই সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোর্ডে চ’ড়ান্ত তথ্য প্রেরণের আগে শিক্ষার্থীদেরকে প্রিন্ট আউট দেওয়ার বিধান রয়েছে যা তারা নিজেরা ও প্রয়োজনে অভিভাবককে দেখিয়ে স্কুলে জমা দেবে। তাহলে আর কোনো ভুল থাকে না। বোর্ড পরীক্ষার জন্যে ফর্ম পূরণের আগেও একবার সুযোগ দেয় বিষয় ও বিষয় কোড মিলিয়ে নেওয়ার। বিদ্যালয় প্রধানের তখনও দায়িত্ব থাকে শিক্ষার্থীদের সঠিক বিষয়টি মিলিয়ে নেওয়ার। খুলনার লায়নস্ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. বাদশা খান জানান, যদি কোনো প্রধান শিক্ষক যদি তার শ্রেণি শিক্ষক ও কেরাণি দিয়ে এ কাজটি না করিয়ে এবং নিজে তদারকি না করিয়ে অন্যের ওপর ভার দিয়ে নিজে দায়িত্বে অবহেলা করলে এমন ভুল থাকা সম্ভব।
এদিকে বোর্ড বিষয় কোড ভুল সংশোধনের সুযোগ দেওয়াতে পরীক্ষার্থীরা সঠিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে তবে তার আগে কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের আবেদনটি বিদ্যালয়ের সুপারিশসহ শিক্ষা বোর্ডে পৌঁছাতে হচ্ছে। তারপর প্রতিটি বিষয় কোড পরিবর্তনে বোর্ডে অনলাইনে ফি জমা দিতে হচ্ছে ৮ শত টাকা। তাছাড়া শিক্ষা বোর্ডে আসা যাওয়া খরচসহ নানা খরচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এফলে অর্থ ও শ্রম ব্যয় যেমন হচ্ছে তেমনি দুশ্চিন্তা পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে। বিষয়টি বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্বীকার করলেও তারা জানান, বোর্ড সুযোগ না দিলে পুরো পরীক্ষার বছরটিই ক্ষতিগ্রস্ত হতো আন্তত এখন তার থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন।
বোর্ডের একাধিক সূত্র জানায়, সর্বশেষ দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। তিনি অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার পরিচয় দেন না দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না তখন শিক্ষার্থী অভিভাককে চরম মূল্য দিতে হয়। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দায়িত্বে অবহেলার জন্যে বোর্ড ও শিক্ষার্থী সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এরকম ভুল কেনো হচ্ছে এটি জানতে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. দিল আরা চৌধুরীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমরা সাধারণত শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে সংশোধনের জন্যে প্রিন্ট কপি দেই, হয়তো ওই শিক্ষার্থী মনোযোগের সাথে সেটা দেখেনি অথবা ১১০ বা ১১১ কোড পাশাপাশি থাকে ভুলক্রমে অনলাএন পূরণের সময় চাপ পড়েছে। তবে আমরা বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে সংশোধনের চেষ্টা করছি।
নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ কিবরিয়া জানান, তার বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষার্থীর এ জাতীয় সমস্যা হয়েছে। ওই সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না, তবে শিক্ষার্থী, শ্রেণি শিক্ষক বা কেরাণি কারো না কারো ভুল ছিল, দায়িত্বে থাকা প্রধানও এর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
সাতক্ষীরা শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিন উদ্দীন জানান, তার বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষার্থীর এরকম বিভিন্ন বিষ কোড ভুল এসছে, ইতোমধ্যে শিক্ষা বোর্ডে আদেন করে পরিবর্তন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনো তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেননি। বিদ্যালয় পরে এ বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেবে। কেনো এমন ভ’ল জানতে চাইলে তিনি জানান, অতিমারী করোনার কারণে ওই সময় ক্লাস বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদেরকে ঠিক মতো পাওয়া যায়নি আর যারা এটার দায়িত্বে ছিলেন তারাও হয়তো গাফিলতি করেছেন।
তবে শিক্ষা বোর্ড সংশোধনের সুযোগ না দিলে কী হতো এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যেতে চান।
এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, সংশোধন করতে করতে তিনি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হাঁফিয়ে উঠছেন। এত ভুল যে সংশোধনের সুযোগ না দিলে অসংখ্য শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তবে এই ভুলের জন্যে তিনি করোনার কারণ যেমন উল্লেখ করেন তেমনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব, শিক্ষঅর্থী ও অভিভাবকদের দায়িত্ব কর্তব্য সচেতনতার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, আগামীতে রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে আরো সচেতন করার উদ্যোগ নেবেন।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহীন আহম্মেদ বিষয় কোডের ভুলটি স্বীকার করে জানান, আবেদন আসলে তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শকের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঠিক করে সমাধান দেওয়া হচ্ছে বলে জানান। তিনি স্বীকার করেন অনেক শিক্ষার্থীর এ জাতীয় বিষয় পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে।