যশোর প্রতিনিধি : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়নের আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, বহু অপকর্মের হোতা কুখ্যাত সন্ত্রাসী রবি শিকদারকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন নাভারণ ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ও বিতর্কিত নেতা খায়রুজ্জামান মিনু। এ নিয়ে বিএনপি সহ তার অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীসহ মিনুকে দল থেকে বহিস্কারের জোর দাবি জানিয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রবি শিকদার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা কালীন বিএনপি নেতাকর্মীদের জমি দখল, চাঁদাবাজি, নাশকতা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করেছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। রবি শিকদার ২০১৮ সালে নাভারণ সাতক্ষীরা মোড়ে এক ব্যবসায়ীকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৮০ হাজার মার্কিন ডলার ছিনতাই করেন। ওই সময় রবি ও তার ছিনতাই গংদের নামে শার্শা থানায় একটি মামলা করেন ওই ব্যবসায়ী। সেই মামলায় রবি শিকদার জেলও খেটেছেন। রবি শিকদার একজন নাভারণের শীর্ষ সন্ত্রাসী। বিগত দিনে ইউনিয়নের অনেক বিএনপির নেতাকর্মীদের অত্যাচার- নির্যাতন করেছে নানাভাবে। এখন এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর আশ্রয়দাতা নাভারণ ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান মিনু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাভারণ ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা মিনুর বিভিন্ন অপকর্ম সম্পর্কে বলেন, খায়রুজ্জামান মিনু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় কালীন সে দীর্ঘ দিন পলাতক ছিলেন। বিএনপির কোন নেতা কর্মীর সাথে তার কোন যোগাযোগ ছিলো না। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলোনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে খায়রুজ্জামান মিনু ফিরে আসেন বাড়িতে। এলাকায় বাহিনী তৈরি করে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ মোটা অংকের চাঁদা আদায় করছে তার বাহিনী। অনেকেই প্রাণের ভয়ে চাঁদা দেওয়ার কথা প্রকাশ করছে না।
এলাকায় মিনু বাহিনীর গুন্ডারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করছে। কেউ চাঁদা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে মিনু তার গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংঙ্ক বিরাজ করছে। গত ৬ আগষ্ট মিনুর নির্দেশে নাভারণ ইউনিয়নের বাইশা চাঁদপুর গ্রামের কৃষক নুর ইসলামকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ৩ টি গরু নিয়ে গেছে তার গংরা। বিএনপি নেতা মিনুর এসব অপকর্ম বন্ধ না হলে ৭নং নাভারণ ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা কালীন যেসকল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন, হামলা-ভাংচুর, চাঁদাবাজি এবং ক্ষতি করেছে এখন সেইসব আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে ফের নানা অপকর্ম করছে নিজ দলের নেতা কর্মীদের সাথে। মিনুর বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রবির বড় ভাই কাশেম শিকদারও নাভারণ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, সাবেক মেম্বার এবং তার ছেলে ইমরান শিকদার যশোর পলিটেকনিকেল কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী এই সন্ত্রাসী পরিবার ঝিকরগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের ক্ষমতা ব্যবহার করে নাভারণ ইউনিয়নে বিএনপির নেতাকর্মীদের জিম্মি,জমি দখলসহ ব্যাপক চাঁদাবাজি-নির্যাতন করেছে এবং নাশকতা মামলা দিয়েছে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ৫ দিন আগেও আওয়ামী লীগের সাবেক মেম্বার কাশেম শিকদার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন।
এছাড়া কাশেমের ভাই রবি শিকদার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কিছুদিন আগে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নাভারণ ইউনিয়নের একই ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর বাগ গ্রামের বিএনপি কর্মী রেজাউল ইসলামের ভিটে বাড়ির জমি দখল করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তা আওয়ামী লীগ নেতা হায়দার আলীকে দখল করে দেয়। জমি দখল শেষে ওইদিন রেজাউলকে হত্যার হুমকি দেয় রবি।
এদিকে রবি শিকদার ও তার বড় ভাই কাশেম শিকদার কিছুদিন আগে তাদের আপন চাচা বিএনপি কর্মী রমিজ শিকদারের জমি দখল করে সেখানে কোটি টাকা খরচ করে আলীশান বাড়ি করেছেন কাশেম শিকদার। ওইদিন জমি দখলে বাঁধা দেয় রমিজ শিকদার ও তার ছেলে খলিল শিকদার। তখন কাশেম মেম্বার তার দুই সন্ত্রাসী ছেলেকে লেলিয়ে দিয়ে তার চাচা ও চাচাতো ভাইকে হাতুড়ি পিটা করে রক্তাক্ত জখম করে। এঘটনায় চাচা রমিজ শিকদার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে থানার পুলিশ তদন্তে আসলে কাশেম মেম্বার পুলিশকে বলেন তার চাচা জামাত-বিএনপির লোক এরপর পুলিশ তদন্ত না করেই সেদিন চলে যায়। পরের দিন কাশেম মেম্বার উল্টো তার চাচার বিরুদ্ধে থানা অভিযোগ দায়ের করেন এবং প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখান।
বিএনপির এই নেতা আক্ষেপ করে আরো বলেন, বিগত দিনে কাশেম মেম্বার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সন্ত্রাসী রবি শিকদার পুরো নাভারণ ইউনিয়নে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে বিএনপি নেতাকর্মীরা ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। এতো অত্যাচার- নির্যাতনের পর এখন তাদের আশ্রয়দাতা নাভারণ ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক খায়রুজ্জামান মিনু।
বিএনপির এই নেতা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রবি শিকদারকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। রবি শিকদার বিএনপি নেতা মিনুর বাড়িতে থেকে মাদক ব্যবসা, চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মে কাজ করছে । এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড হচ্ছে বিএনপি নেতা মিনুর শেল্টারে যা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রবির কাছ থেকে মাসিক মোট অংকের টাকা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ।
এব্যাপারে মিনুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।