পদ্মা সেতু হওয়ায় যাত্রীচাপ আগের মতন আর নেই
রিপনচন্দ্র মল্লিক, রাজবাড়ীর দৌলতড়িয়া ঘাট ঘুরে : পদ্মা সেতু চালুর আগে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ। দেশের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের এই পথে ফেরি পারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তির শিকার হতো চালক ও যাত্রীরা। ঈদের সময় সেই দুর্ভোগ বেড়ে যেত কয়েকগুণ। পদ্মা সেতু চালু হবার পর ফেরির জন্যে এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় না। কমেছে ভোগান্তি, স্বস্তি ফিরেছে ঘাট দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের।
আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি ও স্থানীয় প্রশাসন। দুর্ভোগ কমাতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ৩ টি ঘাট ও ১৫ টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া যাত্রী ভোগান্তি ও নিরাপত্তায় কঠোর নজরদারিতে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ।
পদ্মা সেতু চালুর পর বেশির ভাগ যানবাহন সেতু ব্যবহার করলেও কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী জেলার বেশকিছু যাত্রীবাহী পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাক এখনো এই নৌপথটি ব্যবহার করেন। বতর্মানে ১৫ শত থেকে ২ হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদের আগে তা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তবে ঈদযাত্রায় ফেরিঘাটে ভোগান্তি হবে না বলছে চালক ও যাত্রীরা।
কুষ্টিয়া থেকে আসা ট্রাক চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদে আশা করছি আগের মত ভোগান্তি হবে না। পদ্মা সেতু চালুর পর ভোগান্তি নেই এই ফেরিঘাটে। আগে অনেক ভোগান্তি ছিল। তিন চার দিন বসে থাকতে হয়েছে ফেরিতে উঠতে। এখন গাড়ির চাপ নেই বললেই চলে। গেল দুই ঈদে ভোগান্তি ছাড়া পারাপার হতে পেরেছি। এবারও আশা করছি কোন ভোগান্তি হবে না এই ঘাটে।
মাগুড়া থেকে আসা আরেক ট্রাক চালক আফজাল বেপারী বলেন, এবার ঈদে স্বাভাবিক থাকবে ফেরিঘাট। কারণ অধিকাংশ গাড়ি যাবে পদ্মা সেতু দিয়ে। এই রুটে গাড়ির চাপ কম থাকায় এখন ফেরিই বসে থাকে গাড়ির জন্য। গাড়ির চাপ কমে যাওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। ভোগান্তি ছাড়াই পারাপার হতে পারছি।’
জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ বলেন, গত দুই ঈদে কোন ভোগান্তি ছিলো না। এবারও আশা করছি ফেরি সার্ভিস যদি নিরবিচ্ছিন্ন থাকে তাহলে ভোগান্তি থাকবে না। ঈদের আগে যেন সব কয়টি ফেরি যেন সচল থাকে। সব কয়টি ফেরি চলাচল করলে কোন ভোগান্তি হবে না। এজন্য আমাদের দাবি ফেরিগুলো যেন সচল থাকে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ঈদে যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ৭ টি ঘাটের মধ্যে ৩ টি ঘাট ও ১৫ টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া যানবাহনের বাড়তি চাপ কমাতে ঈদের তিন দিন আগে ও পরে বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার। আশাকরছি ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতেই পারাপার হতে পারবে।’
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন,‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। মানিগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়ায় এসে যারা আবার যাত্রা শুরু করবে তাদের জন্য আমাদের প্রস্তুতি বেশি। কারণ ওই সময়টা অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। প্রতারক চক্র মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, ছিনতাইকারী বেড়ে যায়। যে কারণে ঘাট এলাকায় আমাদের চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’