ডেস্ক রিপোর্ট : পবিত্র রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাশাপাশি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে গ্রাহকদের সহযোগিতা চেয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এতে অনেকটা স্বস্তি মিলেছে। তবে আসন্ন গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমের সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যদিও সামনের দিনগুলো নিয়ে এখনই কথা বলতে নারাজ বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন গ্রীষ্ম সর্বোচ্চ ১৬ হাজার এবং এপ্রিলে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এবার এটি ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। ঘাটতি পূরণে গত তিন বছরের মতো এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং করতে হতে পারে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক অনুষ্ঠানে বলেন, রমজান মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ও লোডশেডিং না দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চার কার্গো অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা আশা করছি রমজান মাসে ইনশাআল্লাহ কোনো লোডশেডিং হবে না।
এর আগে ডিসি সম্মেলন শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, কেপিআই বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাদে গ্রাম ও শহরের সব জায়গায় সমান লোডশেডিং দেওয়া হবে। আর লোডশেডিং করতে হলে প্রথমে আমার বাসাতে করতে হবে। আমরা একই নীতি অনুসরণ করব। গ্রাম উপেক্ষা করে শহর লোডশেডিংমুক্ত করার এই কৌশল আমরা করব না। এদিকে দেশে প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও টেনেটুনে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে সাড়ে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠানামা করা চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতিতে পড়ছে দেশ। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে বারবার সতর্ক করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধন ও মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলছে সংস্থাটি। সম্প্রতি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহারে সতর্ক করেছেন তিনি। এর আগে এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাতটি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। গ্রীষ্মকাল এবং রমজান মাস উপলক্ষে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে লোডশেডিং হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, পুরো রমজানজুড়েই চাহিদা বেশি থাকে। সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলে রমজানে কোনো লোডশেডিং হবে না। তাই আপাতত লোডশেডিং হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চাহিদা বাড়লে সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। দেশে ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতে ভাটা পড়ে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যাপক চাপ থাকা সত্ত্বেও গত ছয় মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি সরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য সরকারকে দেয় ৮.৯০ টাকা। অথচ সরকার কেনে ১২ টাকায়। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নাগরিক হিসেবে সবার অধিকার। শুধু রমজানে চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। যদি তার ব্যত্যয় ঘটে তাহলে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
এদিকে চাহিদার ঘাটতি নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা এখন ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে যতটুকু উৎপাদন করা দরকার আমরা তা করতে পারছি। সামনে চাহিদা বেড়ে গেলে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় সেটা আমরা দেখব। সব ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের। আশা করি ভোগান্তি হবে না।
এসি ২৫ ডিগ্রিতে চলছে কি না যেভাবে মনিটর করবে সরকার
সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বাড়িঘরে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি না চালানোর নির্দেশনা দিয়ে সম্প্রতি পরিপত্র জারি করেছে সরকার। যারা এই নির্দেশনা অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এমন পরিপত্র জারির পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা গেছে।
অফিস কিংবা বাড়িঘরে কেউ যদি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি চালান, তাহলে সরকার নজরদারি করে সেটা চিহ্নিত করবে কীভাবে?
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিদ্যুৎ যেহেতু একটা ফিডারের মাধ্যমে যায়, কাজেই সেই ফিডার পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে যে, কোথায় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি শনাক্ত করা হবে কীভাবে? এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কাছে তো আগের সব তথ্য রয়েছে। আমরা তো জানি যে ফিডারে গতকাল কত ছিল, আজকে কত হলো। শীতকালে কত ছিল এবং গরমকালে এসে কত বাড়ল, সেই তথ্য দেখলে বিষয়টা বোঝা যাবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্যে অসঙ্গতি লক্ষ করা গেলে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে জানাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
রোজায় স্বস্তি মিললেও বিদ্যুতে কাটছে না শঙ্কা

Leave a comment