
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ২৪ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফরটি ছিল নানা দিক থেকে তাৎপর্যমণ্ডিত। প্রথমত, এটি ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শক্তি রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার ক্ষমতার পরিমণ্ডলে লাভরভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তৃতীয়ত, তিনি এমন এক সময় এ সফরে এসেছিলেন, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যবস্থায় নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
চতুর্থত, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনও যে মস্কোর কাছে গুরুত্ব বহন করছে, লাভরভের বক্তব্যে সেই আভাস পাওয়া গেছে। সব মিলে স্পষ্টতই বোঝা যায়, পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে আগ্রহী মস্কো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার বন্ধুরাষ্ট্র। রাশিয়ার পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছিল। এখন বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে পাশে পেতে চায় রাশিয়া।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লাভরভ বাংলাদেশের প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিকসহ সব পর্যায়ে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী মস্কো।
রুশ সরকারের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় দেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি দেশের বৃহত্তম মেগা প্রকল্প। তবে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ তুলনামূলক কম। এটি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। জানা যায়, বৈঠকে দুদেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানো, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গাজপ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্যাসকূপ খনন অব্যাহত রাখা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রাশিয়া থেকে ভবিষ্যতে গম ও সার বিক্রির বিষয়ে স্থায়ী রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও। তবে এসব ক্ষেত্রে রাশিয়ার বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চাইব আমরা। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মস্কোর নিরপেক্ষ ও জোরালো ভূমিকা কাম্য।