বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) হরেক রকম জটিলতায় গ্রাহকদের যথার্থ সেবা দিতে পারছে না বলে অভিযোগ। ফলে প্রায় ২৫ লাখ গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে রয়েছে লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে। নতুন লাইসেন্স দেয়া থেকে শুরু করে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের নবায়ন-সব মিলিয়ে বিআরটিএর যে যথার্থ কর্মপ্রক্রিয়া সেখানে ভয়ঙ্কর অরাজকতা তৈরির খবর সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছে। আর এসব কার্যক্রমের মূলে যে টেন্ডার ব্যবস্থাপনা সেখানেও ভর করেছে হরেক রকম বিপত্তি, যা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার পরিক্রমায় এক উল্লেখযোগ্য দাফতরিক কর্মযোগ। শুধু তাই নয়, কোন কোম্পানিকে এক্ষেত্রে যুক্ত করার ব্যাপারেও টেন্ডার ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে বলে আপত্তি উঠেছে। কয়েক দফা টেন্ডার পরিবর্তনেরও সংবাদ ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের যে কার্ড প্রদান করা হয় লাইসেন্সের জন্য সেটাও স্থবিরতার আবর্তে পড়ে যায়। সঙ্গত কারণে নতুন কার্ড গ্রাহকদের বিতরণ করতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মারাত্মক অনিশ্চয়তার মুখে। বিআরটিএর সেবা কার্যক্রমের এই বিশেষ পর্যায়টিতে আধুনিক স্মার্ট কার্ড তৈরিও নানা সঙ্কটের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনিতেই প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন জটিলতার আবর্তে হিমশিম খাচ্ছে। তার মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে বসেছে এই নতুন কার্ড সঙ্কট, যা কর্তৃপক্ষকে আরও অসঙ্গতির কবলে পড়তে সহায়ক অপশক্তির ভূমিকায় নেমেছে। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের মতে প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে এই দীর্ঘসূত্রতা। আইনী সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও কার্ড নিতে এলে কার্ডের পরিবর্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গ্রাহককে আর একটি রসিদ হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে লেখা থাকে এর মেয়াদ পরবর্তী ছয় মাস। নবায়নের ক্ষেত্রে এমন বিপত্তি অসহনীয় তো বটেই, তার চেয়েও বেশি সমস্যায় পড়েছে একেবারে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের অপেক্ষায় থাকা অগণিত গ্রাহক। যা ব্যতিরেকে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা পরিমাপ করাও অত্যন্ত কঠিন। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই এবং আনুষঙ্গিক প্রশিক্ষণের মাপকাঠিতেই এই নতুন লাইসেন্স প্রদান করার সরকারি নির্দেশ আছে।
সংস্থাটির উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন জটিলতার ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে আসার সামান্যতম ইতিবাচক নির্দেশনাও পাওয়া যায়নি। সঙ্কটাপন্ন এই কার্ড প্রস্তুতের চরম অব্যবস্থাপনা আরও কত সময় গড়াবে তা ধারণাও করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর একটি যৌক্তিক সুরাহা করতে বিভিন্ন কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। বাস্তবে এর যথার্থ প্রতিফলন এখন অবধি দৃশ্যমান নয়। গ্রাহকদের চরম হয়রানির মুখে বিআরটিএর কার্যক্রম এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়ার মতোই। খুব বেশি চাপ না থাকলে তারা লাইসেন্স আবেদনও এক প্রকার বন্ধ করে দেয়ার পর্যায়ে। অর্থাৎ, নতুন কোন গ্রাহক আবেদন করার সুযোগও পাচ্ছে না। সেটার নেতিবাচক প্রভাব সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে কতখানি বিপর্যয়ের কবলে ফেলে দেবে সেটাও আশঙ্কার বিষয়।