
জন্মভূমি রিপোর্ট : আজ ২৭ জুন। দৈনিক জন্মভূমির প্রতিষ্ঠাতা, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, একুশে পদকে ভূষিত অকুতোভয় সাংবাদিক শহিদ হুমায়ূন কবীর বালুর ১৯তম শাহাদাৎবার্ষিকী। খুলনার সংবাদপত্র জগতের দিকপাল, আপোষহীন শহিদ এ সাংবাদিকের শাহাদাৎবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য দৈনিক জন্মভূমি ও দৈনিক রাজপথের দাবী পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় শোক র্যালি, মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ফাতেয়া পাঠ, মরহুমের কবর জিয়ারত ও ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। দিবসটি পালন উপলক্ষে খুলনা প্রেস ক্লাব দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
আজকের এই দিনটি দৈনিক জন্মভূমি ও রাজপথের দাবী পরিবারের সকল সদস্যসহ নগরবাসীর জন্য একটি শোকাবহ ও বেদনাদায়ক দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে হুমায়ূন কবীর বালু নিজ প্রতিষ্ঠান দৈনিক জন্মভূমির প্রধান ফটকে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। দিনটি ছিল তাঁর জীবনের একটি আনন্দময় দিন। একমাত্র কন্যা হুসনা মেহেরুবা টুম্পা মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে কৃতকার্য হয়। সেই আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে তিনি পুত্র আসিফ কবীর, কনিষ্ঠ পুত্র আশিক কবীর ও কন্যা টুম্পাকে নিয়ে নগরীর ইকবালনগরস্থ বাড়িতে যান মাকে মিষ্টি মুখ করাতে। কিন্তু এ আনন্দঘন পরিবেশকে অশুভ কালো ছায়া দিয়ে মুড়ে দিতে একটুও হাত কাঁপেনি সন্ত্রাসীদের। ইকবালনগর থেকে নিজ গাড়িতে করে হুমায়ূন কবীর বালু এসে পৌঁছান জন্মভূমি ভবনের সামনে। প্রথমে গাড়ির বাম পাশ দিয়ে নামেন কনিষ্ঠ পুত্র আশিক ও টুম্পা। ডান পাশ দিয়ে প্রথমে নামেন জ্যেষ্ঠ পুত্র আসিফ কবীর ও পরে হুমায়ূন কবীর বালু। গাড়ি থেকে নেমে দৈনিক জন্মভূমি ভবনের গেটে পা দিতেই সন্ত্রাসীরা জাতিসংঘ শিশু পার্কের সামনে থেকে তাঁর ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া বোমা তাঁর শরীরে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সাথে সাথে জন্মভূমি পরিবারের সদস্যরা, পাড়া প্রতিবেশী, সাংবাদিক ও আত্মীয়স্বজন তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ হুমায়ূন কবীর বালুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বোমার স্প্রিন্টার বড় ছেলে আসিফ কবীরের হাতে লাগলেও সে আঘাতগুলি মারাত্মক ছিল না।
দিন আসে দিন যায়। প্রতিবারই শোক বিহ্বলতার মধ্য দিয়ে এ বেদনাদায়ক দিনটিকে স্মরণ করে নগরবাসী। একটি দিন, একটি মাস, একটি বছর করে প্রলম্বিত হয় ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা।
সাধারণ মানুষের পরিক্ষীত বন্ধু সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন বলেই খুলনার সাধারণ মানুষের প্রিয়পাত্র ছিলেন। এই জনপ্রিয়তার জন্য তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রোষানলে পড়েন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বালু পেশাগত দায়িত্ব পালনে সর্বদা আন্তরিক ছিলেন। তিনি ছিলেন দল-মত নির্বিশেষে সাংবাদিকদের পেশাগত ঐক্যের প্রতীক। খুলনার আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন আন্দোলনেও তাঁর ইতিবাচক অবদান খুলনাসহ অত্রাঞ্চলের জনগণ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। আমরা হুমায়ূন কবীর বালুর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

