
১৪ ডিসেম্বর, মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন তাঁরা। পঁচিশে মার্চের কালরাত থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৯ মাস ধরেই চলেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বর্বর হত্যাকাণ্ড।
পাকিস্তানিদের শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেছিলেন এই বুদ্ধিজীবীরা। সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তাঁরা পাকিস্তানিদের মুখোশ খুলে দিতে শুরু করেন এবং তাদের সীমাহীন শোষণ ও বৈষম্যের নানা দিক তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তোলেন। স্বাধীনতার ভিত্তি প্রস্তুত করেন। তাই তাঁরা পাকিস্তানি শাসক ও তাদের এদেশীয় দোসরদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও খুনিরা যখন বুঝে যায় পরাজয় আসন্ন, তখন তারা বাঙালি জাতিকে মেধা ও মননে পঙ্গু করে দেওয়ার শেষ অপচেষ্টায় নামে। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীদের ওপর। আর এ কাজে চরম নির্মমতার পরিচয় দেয় জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী ও তাদের নিয়ে গঠিত রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে বধ্যভূমিতে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। স্বাধীনতার কয়েক দশক পরে হলেও আমরা সেই নিধনযজ্ঞের কিছু হোতাকে বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছি। মানবতাবিরোধী অপরাধে অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ফলে জাতির ললাটে সেদিন যে কলঙ্ক লেপন করা হয়েছিল, তা থেকে জাতি কিছুটা হলেও মুক্ত হয়েছে। একজন মানবতাবিরোধী অপরাধীও যত দিন বেঁচে থাকবে তত দিন বিচারের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, বুদ্ধিজীবীদের দেখানো পথেই আমরা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেব। আমাদের মনে রাখতে হবে, একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের অনুসারীরা এখনো সক্রিয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, জেলহত্যাকাণ্ড, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেষ্টা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা- ঘাতকরা সুযোগ পেলেই ছোবল মারছে। ঘাতকদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। একাত্তরের ঘাতকদের যেমন ঘৃণা করতে হবে, তেমনি তাদের প্রগতিবিরোধী চিন্তা-ভাবনাকেও ঘৃণা জানাতে হবে। তাহলেই শুধু আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা পৃথিবীর বুকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী বুদ্ধিজীবীদের প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।