
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের নেত্রী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, নির্যাতনের শিকার ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁসসহ প্রাণনাশের হুমকিও নাকি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চার শিক্ষার্থীকে কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থী নির্যাতনের এ দুই ঘটনাই শেষ নয়; নিগৃহীত ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন চট্টগ্রাম চারুকলা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
এরআগে রাজধানীর ইডেন কলেজও সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল কথিত ছাত্রলীগ নেত্রীদের তাণ্ডব ও মাস্তানির কারণে। আশ্চর্যজনক হলো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জনৈক সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্রকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের একপর্যায়ে হত্যা করে ‘শিবির’ বলে চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার কথাও গণমাধ্যমে এসেছে। ঘটনাগুলো উদ্বেগজনক।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলে সারারাত ধরে সংঘটিত নৃশংস ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের করুণ মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ বেশ কিছুদিন নীরব ছিল। কিন্তু বর্তমানে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা আবার তৎপর হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগ নামধারীদের অসহিষ্ণু মনোভাব ও উদ্ধত আচরণের কারণে দেশের অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ অরাজক পরিস্থিতির দ্রুত অবসান কাম্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোয় দলীয় রাজনীতির চর্চা অব্যাহত থাকায় পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ তো বিঘ্নিত হচ্ছেই; উপরন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের খুন-জখম হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির যে কোনো সংকট ও ক্রান্তিকালে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী সংগঠন হিসাবে ছাত্রলীগ একসময় অনন্য মর্যাদা ও জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিল।
অথচ বর্তমানে তথাকথিত কিছু নেতা-কর্মীর কার্যকলাপ সংগঠনটির ললাটে এঁকে দিচ্ছে কলংক চিহ্ন, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়াটাও ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টির একটি বড় কারণ।
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে ডাকসু, রাকসু, চাকসুসহ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া দরকার।
বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনসহ ছাত্রসংগঠনের বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বও কম নয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন-নিপীড়নের মতো আর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন, এটাই প্রত্যাশা।