জন্মভূমি ডেস্ক : প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত ৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিদেশে আত্মগোপন থাকা দলটির নেতৃবৃন্দ ভার্চুয়াল মাধ্যমে যেসব আন্দোলন কর্মূসূচি দিচ্ছেন, তা নিয়েও অনেকের মাঝে ক্ষোভ বাসা বেধেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কোনো নির্দেশনা না দিয়ে ভারতে চলে গেছেন, শীর্ষ নেতৃবৃন্দও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে তৃণমূলের উদ্দ্যেশ্যে কোনো বার্তা দেননি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে ক্ষুব্ধ রয়েছেন। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন থেকে রিপোর্টের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন নানা আলোচনা রয়েছে, তেমনি দলটির ভেতরেও আছে অনিশ্চয়তা। তবে পতনের ছয় মাস পার হলেও পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়ার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং দলটি বিক্ষোভ, অবরোধ, এমনকি হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা এসব কর্মসূচি দিচ্ছেন দলের ওয়েব সাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। এ কর্মসূচি দেয়া নিয়ে দেশে পালিয়ে থাকা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। তারা মনে করেন, দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে; যা হাস্যরস সৃষ্টি করছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনকে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন দলটির নেতাদের অনেকেই। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচারে গুলির একাধিক বড় অভিযান হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে।
এখন অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড বা গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিচার দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা রয়েছে। দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও নতুন করে সামনে এনেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই বাস্তবতা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর এক ধরনের মনস্তাত্বিক প্রভাব ফেলেছে; তাদের মধ্যে মানসিক দুর্বলতা কাজ করছে। এমন পটভূমিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সহসাই দলে দলে রাস্তায় নেমে আসবেন, এখনও সেই মনোবল ও সাহস তাদের হয়নি। ফলে তাদের সরকারের পতনের দিন গত বছরের ৫ আগস্ট এবং এর ছয় মাস পূর্তিতে এসেও ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িসহ সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীদের স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই দৃশ্য হজম করা বা আক্ষেপ করা ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কিছুই করার ছিল না।
উত্তরের জেলা বগুড়ার একটি উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এখন সক্রিয় সব রাজনৈতিক দল তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। সেজন্য তারা প্রকাশ্যে এলেই বিভিন্ন দলের কর্মীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এর সঙ্গে রয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। এই প্রতিকূল পরিবেশে তাদের প্রকাশ্যে আসার সুযোগ নেই। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর এটি তাদের কাছে ভিন্ন এক বাস্তবতা।
পতন ও পরিণতি নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকে মনে করেন, তাদের নেতৃত্ব প্রশাসনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এসব রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাবে দীর্ঘ শাসনের নেশা পেয়ে বসেছিল। সেজন্য পর পর তিনটি একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচন করা হয়েছিল। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা হরণ করায় মানুষের আস্থা হারিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওয়ামী লীগের একজন কর্মী জীবন বাঁচাতে দেশের ভেতরে পালিয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় রাজনীতি ছিল না। তাদের দলে ছিল সুবিধাবাদীদের ভিড়। ত্যাগী নেতাকর্মীরা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকার সময়ই বিরাজনীতিকরণের কারণে শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতৃত্ব রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। দলও দুর্বল হয়েছে। এসব কারণে ভয়াবহ পরিণতি দেখতে হয়েছে তাদের এবং এখন দল অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পতনের পর দলের নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ আছে তৃণমূলের পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের অনেকের।
রাজশাহী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের একজন নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার সময় তাদের কোনো বার্তা বা নির্দেশনা দেননি। তাদের বিপদে ফেলে দলের নেতারা বিদেশে পালিয়ে যান, এমন একটা চিন্তা থেকে তৃণমূলের অনেকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৪টি মামলা মাথায় নিয়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা অর্থকষ্টে রয়েছেন। দলের কারও কাছ থেকে সহযোগিতা পাবেন, সেই আশাও এখন ছেড়ে দিয়েছেন।
শীর্ষ নেতাদের ভূমিকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ক্ষোভ

Leave a comment