
মন্দা শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ কি আবারও গলার কাঁটা হতে যাচ্ছে? রোববার খবরে প্রকাশ, ফ্লোর প্রাইসের (নিম্নসীমা) কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না; কিন্তু ঋণের সুদ বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে যা বাজারের জন্যও বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। সাধারণত, গ্রাহককে শেয়ার কিনতে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজ থেকে যে ঋণ দেওয়া হয়, একে মার্জিন ঋণ বলে। গ্রাহককে দেওয়া ঋণের অর্থও আবার সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ অন্য কোনো উৎস থেকে পরিশোধের শর্তে ঋণ হিসাবে নেয়। এ কারণে দাম কমে গেলে গ্রাহকের শেয়ার তারা ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক বিক্রি) করে। বর্তমানে মার্জিন ঋণের এ হার ১:০.৮। এর অর্থ হলো কোনো গ্রাহকের ১০০ টাকা থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ থেকে আরও ৮০ টাকা ঋণ নেওয়া যাবে।
চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দরপতন ঠেকাতে গত বছরের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেয় বিএসইসি। এখনো সেটি বহাল আছে। এর ফলে বর্তমানে ২ শতাধিক কোম্পানির লেনদেন আটকে আছে। অর্থাৎ তারা শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না। এতে যারা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, তারা বেশি বিপদে পড়েছেন। সুদ-আসল মিলিয়ে বড় অঙ্কের দায়ে পড়তে যাচ্ছেন তারা। আবার মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোরও ঋণের টাকা আদায়ে শেয়ার ফোর্সড সেল করতে না পারায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ আটকে গেছে। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে বাজারে অস্থিরতার আশঙ্কায় ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। ফলে বিনিয়োগকারীদের অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হবে, যা পুরো বাজারের জন্য অনেক বড় দায় তৈরি করবে।
সুদ বেশি হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে মার্জিন ঋণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কখনোই ইতিবাচক নয়। শেয়ারবাজারে এ ঋণ উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি। সারা বিশ্বেই এ ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়। অধিক লাভের আশায় যারা মার্জিন ঋণ নেন, দরপতনে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। পুঁজিবাজারে যেহেতু ঝুঁকি থাকেই, তাই ঋণ না করে সঞ্চিত অর্থ থেকে বিনিয়োগ করা ভালো। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংশ্লিষ্টদের তথা সরকারের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে, বাজারে বিনিয়োগকারী, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে ফ্লোর প্রাইসের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করা হবে।