সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : আলুর বীজের দাম আকাশছোঁয়া হলেও সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা চিংড়ি চাষে বিখ্যাত হলেও তার পাশাপাশি সবজি চাষে ও পিছিয়ে নেই এই উপজেলার কৃষকরা। আমন ধান উঠতে না উঠতেই পাল্লা দিয়ে সবজি চাষে মেতে উঠেছে চাষিরা। সরেজমিনে ঘুরে ও শ্যামনগর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এবার শীত মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলায় ১২ টি ইউনিয়নে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ৭০০শ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে।এর মধ্যে কাঠি লাল আলু ৫৫০ হেক্টর ডায়মোন্ড আলু ১০০শ হেক্টর গ্রাম্য আলু যেটাকে বলা হয় গোল আলু এটা চাষ হচ্ছে ৫০ হেক্টর জমিতে এছাড়া বাঁধাকপি সহ অন্যান্য সবজি চাষ হচ্ছে ১৭০০শ হেক্টর জমিতে।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা এ প্রতিবেদক কে জানান অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে এবার শ্যামনগরে আলু সহ অন্যান্য সবজি চাষে কৃষকরা মেতেছে। গত মৌসুমে শ্যামনগরে ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এবার আলুর বীজের দাম আগুন ছোয়া হলেও ৭০০শ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। তিনি আরো জানান গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে শ্যামনগর আলু চাষ হয়েছিল ৩০০শ হেক্টর জমিতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩৫০ হেক্টর জমিতে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩৬৫ হেক্টর জমিতে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৩৮০ হেক্টর জমিতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৩৯০ হেক্টর জমিতে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪৬৫ হেক্টর জমিতে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে আগুন ছোঁয়া আলুর বিজ কিনে ৭০০শ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। তাছাড়া ও অন্যান্য সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ২৫০ হেক্টর ওলকপি ২০০ হেক্টর বেগুন ২০০ হেক্টর ফুলকপি ২৫০ হেক্টর লালশাক ২৭০ হেক্টর পালংশাক ১৬০ হেক্টর কাঁচা মরিচ ১৫০ হেক্টর বিট কপি ৫০ হেক্টর টমেটো ১০০ হেক্টর ও শশা ৯০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।
শ্যামনগর কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায় এই মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলার ৭০০শ হেক্টর জমির মধ্যে ভুরুলিয়া ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর কাশিমাড়ি ইউনিয়নে ৭০ হেক্টর শ্যামনগর সদর ইউনিয়নে ৭০ হেক্টর নুর নগর ইউনিয়নে ৮০ হেক্টর কৈ খালি ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর ঈশ্বরী পুর ইউনিয়নে ৯০ হেক্টর মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে ৪০ হেক্টর আটুলিয়া ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ১৫ হেক্টর গাবুরা ইউনিয়নে ১৫ হেক্টর ও রমজান নগর ইউনিয়নে ৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। কৃষকরা কেহ আলু রোপন করা শেষ করেছে আবার কেহ আলু রোপনের জন্য খেত পরিচর্যা করছে। এছাড়া অনেকেই আলুর বীজ সংগ্রহ ও বিজ প্রছেসিং কাজে ব্যস্ত আছে।
ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছলা গ্রামের সালাউদ্দিন জানান তিনি গত বছর ২০ কেজি আলু রোপন করে
১২ মোন আলু পেয়েছিলেন সব খরজ বাদে বাজারে আলুর দাম ভালো পাওয়ায় ১৫০০০ টাকা লাভ করেন এবার তিনি বিজের দাম আগুন ছোয়া হলেও ২০ কেজি আলু রোপন করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ মোন আলু পাওয়ার আশা সালাউদ্দিনের। এবার সালাউদ্দিন ৬০ কেজি আলুর চাষ করছেন তাছাড়া তিনি ৫ কাঁটা জমিতে বাঁধাকপি ৪ কাঁটা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন এবং ফুলকপি বাজারে তুলে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা ধরেছেন আর সপ্তা খানেক পর থেকে বাঁধাকপি ও বিক্রি করতে পারবে সালাউদ্দিন।
কাশিমাড়ী ইউনিয়নের শংকরকাটি গ্রামের মিজানুর ঢালী জানান তিনি গতবছর ৫০ কেজি আলু রোপন করে ২৭ মন আলু পেয়েছি তার লাভ হয়েছিল ২২ হাজার টাকা। এবার মিজানুর ১০০ কেজি আলুর বিজ আগুন ছোঁয়া দাম দিয়ে কিনে খেতে চাষ করছেন এবং বীজ আলু পরিচর্যা করছেন তার আশা আলুর ফলন ভাল হলে বাজারে ভাল দাম পেলে ৫০ হাজার টাকা লাভ করবেন। মিজানুর আলু ছাড়া ও ৫ কাঁটা জমিতে বাঁধাকপি ৫ কাঁটা জমিতে ফুলকপি ৩ কাঁটা জমিতে কালো বেগুন ও ৩ কাঁটা জমিতে শসা চাষ করেছেন এসব সবজি বাজারে ভাল দাম আছে মিজানুরের আশা এখান থেকে ভালো একটা লাভ পাবেন।
শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের বাদোঘাটা গ্রামের আজিজুর জানান তিনি গতবছর ৩৫ কেজি আলু রোপন করে ছিল তা থেকে তিনি আলুর উৎপাদন পেয়েছিল ২০ মোন বাজার ভালো থাকায় ২৫ হাজার টাকা লাভ করেন।এবার তিনি ৫০ কেজি কাঠিলা আলু ও ১০ কেজি ডায়মোন্ড আলু চাষে মাঠে। নেমেছে তিনি আরো বলেন বাজার ভালো ফলন ভালো হলে মোটা অংকের লাভ করতে পারবেন। এছাড়া তিনি ৩ কাঁটা জমিতে টমেটো ও ৩ কাঁটা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। ফুলকপি ইতিমধ্যে খেত থেকে উত্তোলন করে বাজারে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রিয় করা শুরু করেছেন তিনি বলেন ১৫ দিনের ভিতরে আপেল টমেটো বাজারে তুলতে পারবেন।
নূরনগর ইউনিয়নের কুলতলি গ্রামের মোশাররফ হোসেন বলেন তিনি গতবছর ৪০ কেজি কাঠি লাল আলু চাষ করে ১৮ মোন আলু উত্তোলন করে ছিল তাতে তার ১২ হাজার টাকা লাভ হয়। এবার মোশাররফ ৫০ কেজি কাঠি লাল ও ১০ কেজি গ্রামো (গোল আলু) চাষ করছেন। এছাড়া ৩ কাঁটা জমিতে বেগুন ৫ কাঁটা জমিতে বাঁধাকপি ৫ কাঁটা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন বর্তমান ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে তোলা ধরেছেন দামে ও ভালো পাচ্ছে। আবহাওয়া ও পোকামাকড়ের ক্ষতি অনুকূলে থাকলে আলু সহ সব ধরনের সবজিতে মোশাররফ ভালো লাভবান হবেন বলে তার আশা।
ইশ্বরীপুর ইউনিয়নের হাশারচক নামক গ্রামে অরবিন্দু মন্ডল জানান তিনি গত মৌসুমে ৬০ কেজি কাঠি লাল আলু চাষ করেন এবং সেখান থেকে আলুর উৎপাদন হয় ২৯ মোন বাজার ভালো থাকায় সেখান থেকে সে লাভপায় ২২ হাজার টাকা। এবার অরবিন্দু জানান তিনি ১০০ কেজি আলু রোপন করছে ফলন ভালো হলে বাজার ভালো আছে সেখান থেকে সে মোট অঙ্কের টাকা লাভ পাবেন এছাড়াও অরবিন্দু ৫ কাঁটা জমিতে বেগুন ৫ কাঁটা জমিতে বাঁধাকপি ৩ কাঁটা জমিতে ওলকপি ৩ কাঁটা জমিতে ফুলকপি ৪ কাঁটা জমিতে আপেল টমেটো চাষ করেছেন তিনি জানান ইতিমধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে তোলা শুরু করেছে দাম ভালো পাচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের কুলতলি গ্রামের মধুজিৎ রপ্তান জানান তিনি গতবছর ২০ কেজি কাঠি লাল আলু রোপন করে সেখান থেকে তার ফলন হয় ৯ মোন বাজার ভালো এবং আলুর গুনগত মান ভালো থাকায় ১১ হাজার টাকা লাভ করেন খরচ বাদে। এবার তিনি আগুন ছোঁয়া দামে ৪০ কেজি বিজ আলু কিনে রোপন করছে বাজার ভালো থাকলে মোটা একটা টাকা এখান থেকে লাভ করবেন মধুজিৎ। তিনি আরো বলেন আলুর পাশাপাশি এবার ৩ কাঁটা জমিতে বেগুন ৩ কাঁটা জমিতে ফুলকপি ২ কাঁটা জমিতে সাদা ও লাল মুলা ৩ কাঁটা জমিতে টমেটো ও ৩ কাঁটা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। সপ্তা খানেক পরে ২ কাঁটা জমিতে বিট কপি চাষ করবেন।