সরকারি নির্ধারিত মূল্যে দাম না পাওয়ায় হতাশ সাতক্ষীরা চামড়া ব্যবসায়ীরা

সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : চামড়ার দাম না পেয়ে এবারও হতাশ হয়েছেন সাতক্ষীরার বিভিন্ন চামড়া বিক্রেতারা। ঈদের দিন থেকে সাতক্ষীরার জেলায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া কোরবানির পরে এলাকার বিভিন্ন কওমিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ও মাদ্রাসার শিক্ষক মিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে দেখা যায়। কিন্তু প্রতিবারের মতো প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশ তারা। বিক্রেতারা অভিযোগ করেন , চাহিদা মতো চামড়ার দাম পাচ্ছি না। গরুর চামড়া মানভেদে ৫০০-৭০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে সব থেকে বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৯০০-১০০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। সে চামড়ার পরিমান খুব কম। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া কিনতে আগ্রহ নেই বললেই চলে চামড়া আড়তের ক্রেতাদের। আর এ কারণে ছাগলের চামড়া ১০ ঢাকা থেকে আরম্ভ করে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস।
ঈদের তৃতীয় দিনে সাতক্ষীরার বড়বাজার  চামড়া আড়তে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন মাদ্রাসার হুজুর ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে চামড়া এনে জড়ো করছে। কিন্তু সরকারি নির্ধারিত মূল্যে চাহিদা মতো চামড়ার দাম না পেয়ে তারা হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়ছেন
৩০০ টি চামড়া বেচতে আসা মইনুদ্দিন হুজুর বলেন আমরা এখানে প্রতিবার চামড়া দেই উনারা বুঝ করে টাকা দেন। তাই এবারও কোন দরদাম না করেই দিলাম। কারন আমরা ব্যবসায়ীরা দাম কম দিলেও আমাদের কিছু করার থাকে না কারন চামড়া তো আমরা রাখতে পারব না। চামড়া রাখলে লিভার খরচ করে লবণ লাগালে আমাদের লস হবে। এজন্য দোকানদারদের উপরে ভরসা করে এভাবে বিক্রি করে থাকি।
ব্যবসায়ী সেকেন্দার বলেন একটি বড় গরুর চামড়া কিনে এনেছি ৯০০ টাকা দিয়ে। আর তারা বলছে ৭০০ টাকা। তাহলে কীভাবে বিক্রি করব।
অপরদিকে পাটকেলঘাটা তৈলকুপি মারকাজুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার  হুজুর মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন মনে করেছিলাম এবার সরকারি নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে পারব কিন্তু বাজারে এসে দেখি অন্য অবস্থা সব জায়গায় সিন্ডিকেট আমাদের এবারও ছোট বড় মিলিয়ে গড় ৬০০টাকা দামে গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। ছাগলের চামড়া ১০-২০ টাকা দামে বিক্রি করতে পেরেছি।
১০০টি কাঁচা চামড়া বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন চামড়া ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এসব চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে কিনে এনেছি। কিন্তু কোনো আড়তদার বা ট্যানারি প্রতিষ্ঠান ৭৫০ টাকার ওপরে দাম দিতে চায় না। এবার ও হয়তো লসের মুখে পড়তে হবে।
এদিকে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী মহাদেব কুন্ডু অভিযোগ করে বলেন আমরা আছি মহা বিপদে আমরা নগর টাকায় চামড়া ক্রয় করে ট্যানারি মালিকদের কাছে বাকিতে বিক্রি করে নিয়মিত টাকা পায় না চামড়ার দাম যা হয় বছর শেষে তার অর্ধেক টাকাও দেয় না ট্যানারি মালিকরা। চামড়া কম দামে কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন কি করব বলুন সরকারি নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনলে লিভার খরচ, লবণ ও গাড়ি ভাড়া দিয়ে আমাদের লস হয়ে যাবে। আমরা এমনিতেই হতাশাগ্রস্থের ভিতর আছি কারণ ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে আমরা নিয়মিত টাকা পাচ্ছি না। এজন্য আমরা ৪০০ টাকা থেকে সর্বস্ব ৮০০ টাকা পর্যন্ত চামড়া ক্রয় করছি এবার।
তিনি আরো বলেন, আমরা আড়তদারেরা চামড়া সংগ্রহ করে লবণ মিশিয়ে তা সংরক্ষণ করি। পরে লবণ মেশানো চামড়া পাঠায় ট্যানারিতে। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনবেন, বলে আশা প্রকাশ করছি।