সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ, ও মহান পেশা

সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সাংবাদিকতা হলো বিভিন্ন ঘটনাবলি, বিষয়, ধারণা, মানুষ, প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি ও পরিবেশন করা। সারা দিনের ঘটনা, তথ্য, ধারণা এবং মানুষের মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কিত নির্ভুলতার সাথে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ করে সমাজকে অবহিত করা হলো সাংবাদিকতা কাজ। যা দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রধান সংবাদ হিসেবে প্রকাশ হলে তা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে।
সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে জীবন্তু ও আধুনিক পেশা। বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা, শিক্ষিত হলেও সাংবাদিকতা কখনই জ্ঞানহীন মানুষের পেশা নয়, পেশা হিসেবেই সাংবাদিকতা বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের পেশা। জনগুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ, রেকর্ডিং, যাচাই এবং প্রতিবেদন তৈরির অনুশীলন করা হলো সাংবাদিকতা। দেশপ্রেম, সমাজ সচেতনতা, মানুষের জন্য কিছু করার বিষয়টি ধ্যান, জ্ঞান, অস্থি মজ্জায় প্রোথিত থাকতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই থাকতে হবে গঠনমূলক চিন্তা চেতনা। কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই, কিন্তু সব বিষয়ে প্রান্তিক ধারণা থাকা আবশ্যক। এই প্রান্তিক ধারণাটা থাকতে হবে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিষয়েও। ভালো সাংবাদিক হতে গেলে এক্ষেত্রে বিস্তর পড়াশোনা আর বেশি বেশি প্রশিক্ষণ খুবই প্রয়োজন।
মানুষ অভ্যাস ও কৌতূহলের কারণে সংবাদপত্র পড়ে। উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম অর্থাৎ আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটে তার উপর সঠিক বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ করে তার উপর প্রতিবেদন তৈরি করা সংবাদ। সংবাদ-এর নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে এক কথায় বলা যায় সংবাদ হলো চলতি ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ, যা অবশ্যই সত্য ও গুরুত্বপূর্ণ, যা পাঠকের আগ্রহ উদ্দীপিত করে এবং সমাজে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাকে খবর বা সংবাদ বলে।
সাংবাদিকতা একটি মহৎ,সাহসী ও ঝামেলা পূর্ণ পেশা। প্রতিবেদন ভিত্তিক অনেক ঝুকি রয়েছে, যা আপনার খারাপ হয়ে যাওয়া ও জীবন হারিয়ে ফেলার ভয় রয়েছে। গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। মুক্ত সাংবাদিকতার প্রাণ হচ্ছে সাংবাদিক। বর্তমানে সাংবাদিকতা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, বিপদেও পরিপূর্ণ। স্বাধীন মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য অনেক মেধাবী সাংবাদিক প্রাণ দিয়েছে। রাষ্ট্র তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। হুমকি, হত্যা, নির্যাতনের বিচারহীনতায় স্বাধীন সাংবাদিকতার দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে সচেতন, বিচক্ষণ, মেধাবী মানুষের পেশা। সাংবাদিকদের মনে রাখতে হবে তারা যা দেখে, তা খবর; যা জানে, তা প্রেক্ষাপট এবং যা অনুভব করে, তা মতামত। যে মানুষ অতীতকে ধারণ করে বর্তমানের সঙ্গে তা মিলিয়ে ভবিষ্যতের নির্দেশনা দিতে পারেন না, ভাষায়-ব্যাখ্যায় উপস্থাপনায় যিনি মেধার ছোঁয়া বুলাতে পারেন না তিনি আর যা-ই হোন সাংবাদিক হতে পারেন না।
উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম অর্থাৎ আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটে তার উপর সঠিক বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ করে তার উপর প্রতিবেদন তৈরি করা। সংবাদ কোনো ঘটনা নয়, নতুন বা সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবেদন মাত্র। যা অবশ্যই হতে হবে নির্ভুল। সংবাদের তথ্যগুলোকে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। প্রতিটি প্রতিবেদনই হবে নিরপেক্ষ বা ভারসাম্যপূর্ণ। সংবাদ হতে হবে সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট।
সংবাদ সংগ্রহ, লেখা বা প্রতিবেদন করার জন্য সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও বা টেলিভিশন স্টেশনে নিযুক্ত একজন ব্যক্তি। একজন সাংবাদিক সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট, টেলিভিশন বা রেডিওর মাধ্যমে জনসাধারণের সাথে সংবাদ এবং তথ্য সংগ্রহ করেন, লেখেন এবং ভাগ করে নেন। সাংবাদিক হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি টেক্সট, অডিও বা ছবির আকারে তথ্য সংগ্রহ করেন, তা সংবাদের যোগ্য আকারে প্রক্রিয়াজাত করেন এবং জনসাধারণের কাছে তা ছড়িয়ে দেন। তাদের মূল লক্ষ্য হল বিশ্বে কী ঘটছে সে সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা।
সংবাদকর্মী বা সাংবাদিকগণকে কার্যক্ষেত্রে সংবাদপত্র প্রতিনিধি, টেলিভিশন সংবাদদাতা বা বেতার সাংবাদিক ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ে বিভাজন ঘটানো হয়েছে। এছাড়াও, অবস্থানের ভিত্তিতেও নামকরণে বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে, স্টাফ রিপোর্টার, প্রতিনিধি, সংবাদদাতা ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। তারা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব মাধ্যমের জন্য সত্য ও বস্তুনিষ্ঠতার সাথে ঘটনাবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রেরণ করেন।
যে কোনো পরিস্থিতিতে কোনো ঘটনায় মানুষের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারাই সাংবাদিকতা অনুপ্রেরণা। ঝুকি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে পাঠক মনে উদ্দীপিত আগ্রহই সাংবাদিকতা পেশায় টিকে থাকার অনুপ্রেরণা।