সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : ঋতুরাজ বসন্তের বার্তা নিয়ে গাছে গাছে ছেয়ে গেছে আমের মুকুল। বর্তমানে সাতক্ষীরার সব উপজেলার প্রতিটি বাড়ি ও আম বাগান আমের মুকুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। শহর, গ্রাম সব জায়গাতেই সমানতালে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল। ঋতুবৈচিত্রে আমের শহর সাতক্ষীরার সবুজ প্রকৃতিও সেজেছে একইভাবে। বছরের নির্দিষ্ট এই সময়জুড়ে তাই চাষি তো বটেই, কমবেশী সব শ্রেণির মানুষেরও দৃষ্টি থাকে সবুজ পাতায় ঢাকা আমগাছের শাখা-প্রশাখায়। সহজ চাষ পদ্ধতি ও তুলনামূলক কম পরিচর্যায় লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে সাতক্ষীরায় আমের চাষ।
সদ্য মুকুল ফোটার এমন দৃশ্য এখন ইট-পাথরের শহর থেকে শুরু করে বিস্তৃত সাতক্ষীরা দেবহাটার গ্রামীণ জনপদেও। জেলার প্রায় সব এলাকাতেই এখন প্রচুর আমবাগান রয়েছে। সাতক্ষীরার এসব বাগানে আম গাছ ভরে গেছে মুকুলে। মাঘ মাসের প্রথম থেকেই আম গাছের মুকুল পরিচর্যায় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সাতক্ষীরা সদরের ইটাগাছা গ্রামের কৃষক অজিত আলী বলেন, ১১ বিঘা জমিতে শতাধিক আম গাছ রয়েছে। এবার মাঘ মাসের প্রথম থেকেই আম গাছে মুকুল ধরা শুরু করে। ফাল্গুন মাসের কয়েকদিন কেটে গেলেও অনেক গাছে এখনো ভালভাবে মুকুল আসেনি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই অধিকাংশ গাছে মুকুল ভরে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
তিনি জানান, এবার কুয়াশা না হওয়ায় মুকুল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে কাঙ্খিত আমের ফলনের লক্ষ্যে শুরু থেকেই গাছ ও মুকুলের পরিচর্যা করছেন তিনি। তার বাগানে ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি জাতের আম গাছ রয়েছে।
তালা উপজেলার গোপালপুরের সুমন রায় গণেশ বলেন, এখন আর কপোতাক্ষের দু’তীর ছাপিয়ে পড়া পানিতে এলাকা প্লাবিত হয় না। ফলে সবজি চাষের পাশাপাশি আম গাছের ফলনও ভাল হয়। এবার তাদের ১৩টি আমগাছে ভাল মুকুল ধরেছে। মুকুল যাতে ঝরে না যায় সেজন্য ইতোমধ্যেই তিন থেকে চার বার গাছে স্প্রে করেছেন।
তিনি আরো বলেন, গাছে যে পরিমান মুকুল ধরেছে তাতে মৌমাছি বসায় তাড়াতাড়ি গুটি ধরবে। গুটি যাতে ঝরে না যায় সে জন্য গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার পাশপাশি স্প্রে করা হচ্ছে হর্মন ও ডিডিটি। তার বাগানে হিম সাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ আম গাছ রয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে গত বারের তুলনায় ফলন বেশী হবে।
গাছে ভাল মুকুল ধরার কথা বললেও কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও সাতক্ষীরা সদরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আম চাষীরা জানালেন ভিন্ন কথা।
তারা বলেন, অন্য বছরে এই সময়ে সারা গাছ মুকুলে মুকুলে ছেয়ে যায়। জলবায়ুপরিবর্তনের কারণে ঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়া ও শীত না পড়ায় এবার আমের ফলন কম হবে। তাছাড়া বিদেশে আম পাঠানোর নামে তারা যে প্রস্তুতি নেন বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটে না। ফলে কৃষি বিভাগের সুপারিশক্রমে অধিক খরচ করে বিদেশে আম পাঠাতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা।
শ্যামনগর উপজেলার আম আম চাষে মিকাইল হাসান জানান তার ১০ কাঠা জমিতে একটি আমবাগান রয়েছে গাছ রয়েছে ১৮২ টি বর্তমান প্রতিটা গাছে আমের মুকু ল ছেয়ে গেছে প্রতি আমগাছ পরিচর্যা করা হচ্ছে আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে গতবছরের চেয়ে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে , তিনি জানান তার বাগানে আমরুপালি গোবিন্দ ভোগ ও ন্যাংড়া আম রয়েছে, তিনি বর্তমান শ্যামনগর উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদার পরামর্শ নিয়মিত আমবাগান পরিচর্যা করছেন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপ-পরিচালক অরবিন্দ কুমার বিশ্বাস বলেন, গত বছর জেলায় চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পাঁচ হাজার ২৯৯ টি আম বাগানে উৎপাদন হয় ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম।আম চাষী ছিল ১৩ হাজার ১০০ জন। গত বছর ২৫০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এবার চার হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিদেশে আম পাঠানোর লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পোকা মাকড়ের আক্রমণ ও মুকুল ঝরা প্রতিরোধে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আম চাষে উৎসাহী করতে কৃষকদের বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হচ্ছে। যেসব গাছে এখনো আমের মুকুল আসেনি সেসব গাছে খুব শীঘ্রই মুকুল এসে যাবে।