সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সাতক্ষীরায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিয়ে পালিত হয়েছে সুন্দরবন দিবস। কর্মসূচির মধ্যে ছিল র্যালী, আলোচনা সভা ও মানববন্ধন। বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে সুন্দরবন দিবস উদযাপন কমিটি।
‘বাঁচাই সুন্দরবন-বন্ধ করি প্লাষ্টিক দুষণ’- বিশ্ব ভালবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালবাসুন স্লোগানে র্যালী ও আলোচনা সভায় অংশ নেয় বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ, সুশিলন, স্বদেশ, জেলা নাগরিক কমিটি, ভূমিহীন সমিতি, রুপান্তর, সুন্দরবন একাডেমি, সিডো, লিডার্স, সৃজনী, হেড, ক্রিসেন্টসহ জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিগণ। এছাড়া উদারতা যুব ফাউন্ডেশন, কোস্টাল ইয়ূথ নেটওয়ার্ক ও সোসিয়ো ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্স (সেডা) পৃথকভাবে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভায় সুন্দরবন দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক সিনিয়র সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জীর সভাপতিত্বে ও স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক ও সুন্দরবন দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মাধব দত্তের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ আব্দুল হামিদ, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অ্যাডঃ আজাদ হোসেন বেলাল,উত্তরণের অ্যাডঃ মুনির উদ্দিন, সুশিলনের সহকারী পরিচালক জিএম মনিরুজ্জামান।
এছাড়া আরও বক্তব্য দেন, সাতক্ষীরা জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, টিআইবির নতুন এরিয়া কো-অর্ডিনেটর আল আমিন, নিত্যানন্দ সরকার, সাংবাদিক এম বেলাল হোসেন, উদীচীর শেখ সিদ্দিকুর রহমান, সুরেশ পান্ডে, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সামাদ, সিডোর নির্বাহী পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাসদের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, হেডের লুইস রানা গাইন, অধ্যাপক পবিত্র মোহন দাস, জেলা নাগরিক কমিটির আলি নুর খান, সনাকের রেবেকা সুলতানা, মারিয়া সুলতানা, নিয়জ মোর্শেদ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। জলবায়ু পরিবর্তনগত কারণে আঘাত হানা ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে।
সুন্দরবন আমার মায়ের মতো, কোনভাবেই এটিকে ধ্বংস হতে দিব না। সুন্দরবন দিবসকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে উদযাপন করতে হবে। সুন্দরবন এলাকায় প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, সুন্দরবনের প্রাণ গাছ অবৈধভাবে না কাটা, বনের বাঘ ও হরিণ শিকারদের হাত থেকে বনকে বাঁচানো, বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে মাছের পোনা আহরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, অবৈধভাবে মাছ, কাঁকড়া ধরা বন্ধ করতে জোরালোভাবে প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা, বনকে নিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসাসহ বনদস্যু প্রতিহত করা, সর্বোপরি প্রতিবেশ সংলগ্ন এলাকায় কোন প্রকার শিল্প ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ার অনুমতি না দেওয়া এবং বন সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাসহ সুন্দরবনকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলে ধরা হয় আলোচনা সভায়।
সাতক্ষীরা শহরের ম্যানগ্রোভ সভাঘরে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অলোচনা সভা শেষে শহরের মিনি মার্কেট এলাকা থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে সুন্দরবন সুরক্ষার দাবিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় কোস্টাল ইয়ূথ নেটওয়ার্ক ও সোসিয়ো ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্স (সেডা) এর
আয়োজনে সুন্দরবন উপকূল আটুলিয়াতে সুন্দরবন সুরক্ষার দাবিতে মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে কোস্টাল ইয়ূথ নেটওয়ার্কের সংগঠনিক সম্পাদক স্বপন দাসের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়ার সদস্য মাসুদ রানা, ফারজানা ইসলাম, আব্দুল্লাহ, তানিয়া সুলতানা, খাদিজা খাতুন, নাজমুস শাহদাত, রিয়াজসহ কোস্টাল ইয়ূথ নেটওয়ার্কের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সুন্দরবন দিবসকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে উদারতা যুব ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আলোচনা সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রসঙ্গতঃ ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পালিত হচ্ছে ২৫তম সুন্দরবন দিবস।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনে ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ৫০৫ প্রজাতির বন্য প্রাণীর বাস। এর মধ্যে রয়েছে ৪৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৮৭ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী। এ ছাড়া রয়েছে ৩৫৫ প্রজাতির পাখি। ২০২৩ সালের শুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি চিত্রা হরিণ, ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ বানর, ৪৭ হাজার ৫১৫ বন্য শূকর, ২৫ হাজার ১২৪ গুঁইসাপ এবং ১২ হাজার ২৪১ শজারু রয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪ সালে সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১২৫টি।
সাতক্ষীরায় নানা আয়োজনে সুন্দরবন দিবস পালন

Leave a comment