সিরাজুল ইসলাম (শ্যামনগর), সাতক্ষীরা : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন। দেশে যত ধরনের মধু পাওয়া যায় তার মধ্যে সুন্দরবনের মধুই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। প্রতিবছরের মতো এবারও এ উৎস থেকে এপ্রিলে শুরু হয়েছে মধু আহরণ। আর এ মৌসুমে সুন্দরবন থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কুইন্টাল বা ২ লাখ ৫০ হাজার কেজি মধু আহরণ করা হবে বলে ধারণা করছে বন বিভাগ।এ বছর সুন্দরবন থেকে ১ হাজার ৫০০ কুইন্টাল বা ১ লাখ ৫০ হাজার কেজি মধু ও ৪৫০ কুইন্টাল বা ৪৫ হাজার কেজি মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
১৮৮৬ সাল থেকে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে মধু আহরণের জন্য পাস দেয়ার প্রচলন শুরু হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও ১ এপ্রিল থেকে বন বিভাগ সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য পাস দেয়।
পশ্চিম বন বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী বন অফিস সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বর থেকে শুরু হয় এ পাস বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা। ২৩-২৪ অর্থ বছরও জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে পাস বিতরণ কার্যক্রম। যেখানে মৌয়ালদের প্রশিক্ষণের পর দেয়া হয়েছে পাস। আর পাস নিয়ে তারা বনে গিয়ে শুরু করেছেন মধু সংগ্রহ। চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত।
বিভাগীয় বন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম ধরা হয়েছে। সুন্দরবনে আগে মধু সংগ্রহের সময়সীমা ছিল তিন মাস। তবে ২০২২ সাল থেকে শুধু এপ্রিল ও মে মাসে মধু সংগ্রহের জন্য মৌয়ালদের পাস-পারমিট দিয়ে আসছে বন বিভাগ।
এবার বৃষ্টির কারণে সুন্দরবনের গাছে পর্যাপ্ত ফুল ফোটায় চলতি আহরণ মৌসুমে মধু সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা বন বিভাগের। এ বছর সুন্দরবন পশ্চিম ও পূর্ব বিভাগে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াই হাজার কুইন্টাল। আর মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫০ কুইন্টাল।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এজেডএ হাসানুর রহমান এই প্রতিবেদক বলেন বলেন, গত বছর মধুর সিজনে কোনো বৃষ্টি হয়নি। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসেও বৃষ্টি না হওয়ায় মধুর পরিমাণ কম হয়েছিল। কেননা, বৃষ্টির সঙ্গে মধুর একটা সম্পর্ক আছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে ফুল ঝরে যায় ও ফুলে মধুর পরিমাণ কমে আসে। তাই গত বছর বৃষ্টি না হওয়ায় সুন্দরবনে মধু কম পাওয়া যায়। তবে এ বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। তাই এ বছর সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় হাজার কুইন্টাল। আর মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫০ কুইন্টাল।
তিনি বলেন, এ বছর সুন্দরবন থেকে ১ হাজার ৫০০ কুইন্টাল বা ১ লাখ ৫০ হাজার কেজি মধু ও ৪৫০ কুইন্টাল বা ৪৫ হাজার কেজি মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৫০ কুইন্টাল বা ৯৫ হাজার কেজি মধু ও ২৮৬ কুইন্টাল বা ২৮ হাজার ৬০০ কেজি মোম, যা থেকে ৩১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে।
কথা হয় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার কুইন্টাল বা ১ লাখ কেজি। আর মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০০ কুইন্টাল বা ৩০ হাজার কেজি। এর মধ্যে শরণখোলা রেঞ্জে ৬০০ কুইন্টাল মধু, ২০০ কুইন্টাল মোম ও চাঁদপাই রেঞ্জে ৪০০ কুইন্টাল মধু, ১০০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ কেজি মধু ও মোম সংগ্রহ করা হয়। মধু ও মোম থেকে রাজস্ব আদায় হয় ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ৪১৩ টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কেজি মধু থেকে ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৩ টাকা এবং ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০৫ কেজি মোম থেকে ১৩ লাখ ৩৯০ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব আয় হয়।
২০২২ সালে সুন্দরবনের মধু থেকে রাজস্ব আয় হয় ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং মোম থেকে ১৫ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা। সে বছর সুন্দরবন থেকে ২ হাজার ৩২০ কুইন্টাল মধু ও ৬৯৬ কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়।
২০২৩ সালের ১ হাজার ২২৫ কুইন্টাল মধু ও ৩৬৭ দশমিক ৫ কুইন্টাল মোম আহরণ করা হয়। আর এ থেকে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা সরকারের রাজস্ব আসে।
এদিকে কী পরিমাণ মধু পাওয়া যাচ্ছে বনে এ বিষয়ে সুতারখালী ইউনিয়নের মৌয়াল জেনারুল ঢালি সময় সংবাদকে বলেন, এবার ভালো মধুর চাক বইছে। বৃষ্টি হওয়ায় চাকেও বেশ ভালো মধু পাওয়া যাচ্ছে। এক চাকে ২-৩ কেজি করে মধু হইছে।
আরেক মৌয়াল হোসেন গাজী বলেন, এবার মধুর ভাব বেশ ভালো। এক চাক থেকেই এবার পাঁচ কেজির মতো মধু পেয়েছি। ৫ দিনে ৭ জন সদস্য নিয়ে প্রায় ১৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করছি।
তবে মৌয়ালদের অভিযোগ, আগে বন বিভাগ তিন মাস (এপ্রিল-মে-জুন) মধু আহরণের অনুমতি দিত। কিন্তু গত দুই বছর শুধু এপ্রিল ও মে মাসে মধু আহরণের পাস-পারমিট করতে দিচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের প্রায় অর্ধেক এলাকায় মধু আহরণের অনুমতি দেয় না বন বিভাগ। এ কারণে আগের চেয়ে মধুর পরিমাণ বেশ কমে গেছে।
মৌয়ালরা আরও জানান, গত বছর তাদের দলের প্রত্যেক সদস্য দুই মণ করে মধু পেয়েছিলেন। পাস সংগ্রহ, সরকারি রাজস্ব এবং লোক ও খাওয়া খরচ মিলিয়ে মৌসুমে তাদের একেকজনের খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর দুই মণ মধু বিক্রি করে একেকজন পেয়েছিলেন ৬০ হাজার টাকা। এ বছরও তারচেয়ে বেশি মধু পাবেন বলে মনে করছেন তারা।
তবে সুন্দরবনে বাঘের বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় এবার বনে মধু সংগ্রহে লোক যেতে চান না। এতে মধু সংগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে।
সুন্দরবনের মধু দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। স্বাদ এবং ঘ্রাণের কারণে এই মধু অন্যান্য মধুর থেকে আলাদা হয়। যে কারণে মানুষ এই মধু খেতে বেশি পছন্দ করে। তাছাড়া পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে সুন্দরবনের মিশ্র ফুলের মধু সব থেকে এগিয়ে। সাধারণত যে কোন মধু কেনার আগে আমাদের অনেক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হয়।
বিশেষ করে সুন্দরবনের মধুর বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয় নাহলে সহজেই ভেজাল মধুর খপ্পরে পরতে হয়। আমাদের আজকের লেখায় আমরা সুন্দরবনের মধুর বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা এবং সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করবো।
সুন্দরবনের মধু দেশের সব থেকে দামি ও বিখ্যাত মধুর মধ্যে সব থেকে উৎকৃষ্ট। পৃথিবীর সব থেকে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন হরেক রকম গাছের সমাহার। এখানে অনেক ধরনের জানা অজানা উদ্ভিদ জন্মায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে জুন মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে নানান ধরনের ফুল জন্মায়।
এই ফুল গুলো থেকে নেকটার নিয়ে মৌমাছিরা চাক তৈরি করে। সেই চাক থেকে সংগ্রহ করা মধু সারাদেশের সব থেকে উৎকৃষ্ট মানের মধু হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণত সুন্দরবনে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত মধুর সিজন চলে। এই সময় মধু সংগ্রহ করার জন্য মধু সংগ্রাহক গণ দল বেঁধে বনের ভেতরে যায়।
সাধারণত সুন্দরবনে যে সকল ফুলের মধু পাওয়া যায় তাদের মধ্যে খলিশা, গড়ান, কেওড়া ও বাইন গাছের ফুল প্রধান। সুন্দরবনের মধু বলতে আমরা এই চারটি ফুলের মধুর কথা বলে থাকি। তো মধুর সিজন চলাকালীন চাক থেকে যে মধু সংগ্রহ করা হয় তাতে এই চারটি ফুলের নির্যাস, স্বাদ ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে।
এই কারণে সুন্দরবনের মধুর স্বাদ সব জায়গায় একই রকম হয় না। যে কারণে এই বিষয়ে সচেতন না হলে সহজেই ধোঁকা খেতে হয় এবং ভেজাল মধুর খপ্পরে পরতে হয়। নিচে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো।
সুন্দরবনের মধু কখনোই ঘন হয় না। আপনি যখন এই মধু হাতের আঙুলে নেবেন তখন তা পানির মত করে পিছলে পরে যাবে। ঘনত্ব কম হওয়ার কারণে যখন একপাত্র থেকে অন্য পাত্র অথবা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া হয় তখন দুধের মত সাদা ফেনা হয়।
ফেনার সাথে সাথে একটি গ্যাসের উৎপত্তি হয়। অনেকটা কোন ডিটারজেন্ট যখন পানির সাথে মিশিয়ে ঝাঁকি দিলে অনেক ফেনা আর বুদ্বুদ গ্যাস হয় ঠিক তেমনি। তবে সহজেই এই অবস্থা থেকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। এই জন্য শুধু মধু যে পাত্রে আছে তা স্থির করে রাখতে হয়। এতে ধীরে ধীরে সেই ফেনা বিলীন হয়ে যাবে এবং গ্যাস নির্মূল হয়ে যাবে।
সুন্দরবনের মধু সবসময় অ্যাম্বার রঙের হয়ে থাকে। যেহেতু এখানে বিভিন্ন ফুলের মধু থাকে সেহেতু এটি রঙের দিক দিয়ে কিছু তারতম্য দেখায়। তবে প্রধান রং অ্যাম্বার থাকলেও তা লাইট, ডার্ক বা হালকা ডার্ক হতে পারে।
সুন্দরবনের মধুর এত নাম ডাক হওয়ার পেছনে এর ঘ্রাণ অনেক বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত সুন্দরবনের মধু হচ্ছে হরেক রকমের সংমিশ্রণ। প্রতিটি ফুলের আলাদা আলাদা ঘ্রাণ ও বৈশিষ্ট্য আছে। এই কারণে এই মধু থেকে অনেক উৎকৃষ্ট সুঘ্রাণ আসে। তাছাড়া এতে একটু হালকা টক টক ঘ্রাণ থাকে।
স্বাদের দিক দিয়ে বলতে গেলে সুন্দরবনের মধু অন্য সকল মধু থেকে আলাদা। বিশেষ করে কেওড়া ফুলের মধু মিশ্রণ থাকায় স্বাদ টক টক হয়। কারণ এই ফুলের মধু খেতে একটু টক টক লাগে। আর সুন্দরবনের মধুতে এই ফুলের নেকটার অবশ্যই উপস্থিত থাকে। এই জন্য স্বাদ টক টক কিন্তু মিষ্টি লাগে। অন্যদিকে এই মধুতে চিনির থেকে কমপক্ষে ১ থেকে ১.৫ গুন বেশি মিষ্টি থাকে।
সুন্দরবনের মধুতে আর্দ্রতা বেশি থাকে। অর্থাৎ সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকায় বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। এই কারণে সে সকল এলাকায় যে মধু উৎপন্ন হয় তা পাতলা ও হালকা রঙের হয়ে থাকে। এই কারণে সুন্দরবনের মধু পাতলা হয়।
সুন্দরবনের মধুতে প্রোটিনযুক্ত পোলেন মিশ্রিত থাকে। এটি চাক থেকে মধু চেপে বের করার পর তা যে পাত্রে রাখা হয় তার ঠিক উপরে একটি লেয়ার বা আস্তরণ পরে। এটি সাধারণত প্রোটিনযুক্ত পোলেন বা গাদ নামে পরিচিত। যদি আপনি সরাসরি সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকা থেকে এই মধু কিনেন তবে অবশ্যই এটি দেখে নিবেন। তবে অনলাইনে নিলে তারা এই স্তর ছেঁকে তারপর বোতলজাত করে। এই জন্য পোলেন না থাকলে বিভ্রান্ত হবেন না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য মধু অনেক ভালো কাজ করে। বিশেষ করে সুন্দরবনের মধুতে বিভিন্ন ফুলের সংমিশ্রণ থাকায় তা রোগ প্রতিরোধ করার উপাদানে ভরপুর থাকে। বিশেষ করে এই মধুতে অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজ ও বিভিন্ন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বিদ্যমান। এগুলো দেহের জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মধু দেহের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল করার জন্য যে যে উপাদান প্রয়োজন হয় তা সরবরাহ করে। বিশেষ করে সুন্দরবনের মধুতে এই সকল উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে। কারণ এক সাথে একটি মধুর মধ্যে এত এত ফুলের নেকটার থাকে না। অন্যান্য মধু শুধু একটি প্রধান ফুলের উপর নির্ভর করে তৈরি হয় কিন্তু সুন্দরবনের মধুর বিষয় একদম আলাদা। অর্থাৎ সুন্দরবনের মধু খেলে দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
মধু একটি প্রাকৃতিক রূপচর্চার উপাদান। ত্বকের উপরে থাকা ময়লা, জীবাণু, শুষ্ক বা মরা কোষ এবং কালো দাগ দূর করার জন্য মধু অনেক ভালো কাজ করে। সুন্দরবন থেকে যে মধু সংগ্রহ করা হয় তা আরও দ্রুত ও পরিপূর্ণভাবে কাজ করে। এই কারণে অনেকে এই মধু ত্বকে মাখার পাশাপাশি খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করে রাখে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য যে সকল এনজাইম প্রয়োজন তার সবকিছুই সুন্দরবনের মধুতে অগণিত মাত্রায় রয়েছে। অর্থাৎ সুন্দরবনের মধু হজম বৃদ্ধি করার এনজাইমের কারখানা।
সুন্দরবনের মধু একটি মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। এতে রয়েছে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় খনিজ, ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। এটি দেহের যৌন স্বাস্থ্যের যত্ন নেয় এবং তা সাবলীল রাখে। রসুন যেমন যৌন স্বাস্থ্য সুগঠিত রাখে ঠিক তেমনি মধুও একই কাজ করে তবে কার্যকরীভাবে।
মধু পরিমাণ মত এবং নিয়ম করে খেলে তা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধানে কাজ করে। এই কারণে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যে মধু যত উৎকৃষ্ট ও খাঁটি তা তত ভালো কাজ করে। সেই দিক থেকে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর কোনো তুলনাই নেই।
মধুকে দেহের জন্য মহৌষধ বলা হয় একটি কারণে আর তা হলো এটি যখন নিয়মিত খাওয়া হয় তখন কোন রোগ দেহে বাসা বাঁধতে পারে না। বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, ঠান্ডা জাতীয় সমস্যা সহ অন্যান্য সাধারণ রোগ হয় না। এতে দেহ বেশি সময় ধরে প্রাণবন্ত ও কর্মক্ষম থাকে।
সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করা একটি প্রচলিত পেশা। সাধারণত সারাবছরেই কিছু পরিমাণ মধু এই বন থেকে সংগ্রহ করা হয় তবে মধু সংগ্রহের প্রধান সময় হচ্ছে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত। কারণ এই সময় সুন্দরবনে নানা ধরনের ফুল ফোটে। সেগুলো থেকে নেকটার সংগ্রহ করে তা চাকে জমা করে মধুতে পরিণত হয়।
পরবর্তীতে, মৌয়াল রা দল বেঁধে ধোঁওয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়িয়ে তা থেকে মধু সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে তা লোকাল বাজারে বিক্রি সহ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে সেই মধু দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়।