জন্মভূমি ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে জিতেছেন ৬২ স্বতন্ত্রপ্রার্থী। এর মধ্যে চারজন নারী। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এই জয়ের আলো দেখেছেন তারা। গতকাল রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে টানা বিকেলে ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এরপর শুরু হয় ভোটগণনা। কেন্দ্র-কেন্দ্র থেকে আসতে থাকে ফলাফল। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তারা ঘোষাণা করেন বেসরকারি ফলাফল।
যারা জয় পেয়েছেন তারা হলেন হবিগঞ্জ -১ আসনে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেন গুপ্তা, মাদারীপুর-৩ আসনে তাহমিনা বেগম ও গাইবান্ধা-১ আসনে আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার।
দলের সমর্থন ছাড়াই হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী কেয়া। স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও সাবেক সংরক্ষিত সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী (ঈগল) প্রতীকে ৭৫ হাজার ৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৩০ হাজার ৭০৩। ৪৪ হাজার ৩৪৯ ভোটের ব্যবধানে সাবেক সংসদ সদস্য মুনিম চৌধুরী বাবুকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়ে চমক দেখিয়েছেন তিনি।
মাদারীপুর-৩ (সদর একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপকে ৩৪ হাজার ৬৬২ ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছেন তাহমিনা বেগম। স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঈগল প্রতীকের তাহমিনা বেগম পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোবহান পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট। বিজয়ী তাহমিনা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই আসনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবদুস সোবহান গোলাপ ও তাহমিনা বেগম ছাড়াও রয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ হালদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবদুল খালেক ও জাকের পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল আমিন চৌধুরীকে পরাজিত করেছেন। স্থানীয়ভাবে ঘোষিত নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, জয়া বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই মাহমুদকে প্রায় আট হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন। নৌকা প্রতীকে মাহমুদ পেয়েছেন ৪২ হাজার ৭৫ ভোট। অন্যদিকে কাঁচি প্রতীকে জয়া পেয়েছেন ৫০ হাজার ২৯৫ ভোট।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুবারের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে হারিয়ে মায়ের আসন উদ্ধার করলেন মেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার। বেসরকারি ফলাফলে ঢেঁকি প্রতীকে নাহিদ নিগার পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৪৯১ ভোট। ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফরুজা বারীর মেয়ে। নাহিদ নিগার এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ভাগনি।
জোটগত সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টিকে গাইবান্ধা-১ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এ কারণে নৌকার মনোনয়ন পেয়েও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হয় আফরুজা বারীকে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও মেয়ে নাহিদ নিগার স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়। ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ নিগারসহ আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১০ প্রার্থী। এর মধ্যে জাসদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিসহ দলীয় ছয়জন ও স্বতন্ত্র চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।