জন্মভূমি রিপোর্ট
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মাত্র ৪দিনের ব্যবধানে ৫০টি ডিম পেড়েছে বিশে^র অতি বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’। বুধবার করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের একটি পুকুর পাড়ে ২৩টি ডিম পেড়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ২৭টি ডিম পাড়ে “বাটাগুর বাসকা।
জানা যায়, বুধবার রাতে প্রজনন কেন্দ্রের একটি পুকুর পাড়ে বালুর মধ্যে একটি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ ২৩টি ডিম পাড়ে। এর মাত্র ৪দিন আগে ২৭টি ডিম পাড়ে। ৫০টি ডিমই প্রাকৃতিক উপায়ে ফোঁটাতে বালির মধ্যে রাখা হয়েছে। আগামী ৬৫ থেকে ৬৭ দিনের মধ্যে এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।
সুন্দরবনের করমজলের বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, বাটাগুর বাসকা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমনটি মনে করা হলেও ২০০৮ সালে নোয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন জলাশয়ে ৮টি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। যার ৪টি পুরুষ ও ৪টি স্ত্রী। ওই বছরই প্রজননের জন্য ৮টি বাটাগুর বাসকা গাজীপুরে নিয়ে যায় বন বিভাগ। সেখানে ৬ বছরে মাত্র ৯৪টি বাচ্চা দিয়েছিল ৪টি মা কচ্ছপ। ভালো সাড়া না পাওয়ায় ২০১৪ সালে মূল ৮টি বাটাগুর বাসকা ও তাদের জন্ম দেওয়া ৯৪টি বাচ্চাসহ করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। এই কেন্দ্রে ২০১৭ সালে দু’টি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপের ৬৩টি ডিম থেকে ৫৭টি বাচ্চা জন্ম নেয়। এরপর ২০১৮ সালে দু’টি কচ্ছপের ৪৬ ডিম থেকে ২১টি বাচ্চা, ২০১৯ সালে একটি কচ্ছপের ৩২টি ডিম থেকে ৩২টি বাচ্চা, ২০২০ সালের ১০ মে একটি কচ্ছপের ৩৫টি ডিম থেকে ৩৪টি বাচ্চা জন্ম নেয়।
এদিকে, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে থেকে ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৫টি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাটাগুর বাসকা সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা বলেন, বাটাগুর বাসকা বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ। ২০০০ সালের দিকেও বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করতেন কচ্ছপের এই প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বরিশাল-নোয়াখালীতে ৮টি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। তারপর থেকেই প্রাণীটির বিলুপ্তি ঠেকাতে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এবং সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ।
তিনি বলেন, এই কচ্ছপটি মাংসাশী। এটি ছোট উদ্ভিদ, শামুক, ক্রাস্টেশিয়ান, ছোট মাছ ও কেওড়া গাছের ফল খেয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। তাদের আয়ু ২০০ থেকে ৩০০ বছর। কিন্তু বাটাগুর বাসকার গড় আয়ু ৪০ বছরের মতো। প্রতিটি বাটাগুর বাসকার ওজন ১৮ থেকে ২০ কেজি হয়ে থাকে। পৃথিবীতে শুধু বাংলাদেশেই ২০০টির মতো বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ রয়েছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে সুন্দরবনে ৫০ ডিম পাড়লো বিরল কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’
Leave a comment