
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র হিসাবে যেসব প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন, তাদের কারও কারও সম্পদ ১৩৩ থেকে ১০৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একে রীতিমতো রেকর্ড বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যম মঙ্গলবার প্রকাশিত টিআইবি এ বিশ্লেষণ তুলে ধরে। সংস্থাটি জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রার্থীদের হলফনামা নিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। টিআইবির দাবি-গত নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ছয় হাজার হলফনামার আটটি তথ্যের বহুমাত্রিক-তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে এ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। সংস্থাটির হিসাবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় দায় ও ঋণগ্রস্ত প্রার্থীর সংখ্যা এবার কমেছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। অবশ্য ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ও ঋণগ্রস্ত প্রার্থীর সংখ্যা কমতে দেখা গিয়েছিল।
একজন নির্বাচিত সংসদ-সদস্য শুধু জনপ্রতিনিধিই নন, প্রধানত তিনি আইনপ্রণেতা। যারা আইন প্রণয়ন করেন, তারা যদি হলফনামায় অসত্য তথ্য দেন কিংবা কোনো কিছু গোপন করেন, তাহলে এর আইনানুগ প্রতিবিধান প্রয়োজন। অভিজ্ঞতা বলে, ক্ষমতার স্পর্শ পাওয়ামাত্রই কেউ কেউ অস্বাভাবিকভাবে ‘ফুলেফেঁপে’ ওঠেন। হলফনামার যে বর্ণনা টিআইবি দিয়েছে, তা তাদের বিশ্লেষণ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিশ্চয়ই প্রকৃত অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। কারণ অভিযোগ রয়েছে, হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয় না। ২০১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের হলফনামায় দেওয়া তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ওই পর্যায়েই থেমে ছিল। কাজেই নির্বাচন কমিশন, রাজস্ব বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ কাজটি গুরুত্বের সঙ্গেই করতে হবে। প্রার্থীরা হলফনামায় সম্পদ অর্জনে সময়ের আলোকে যে মূল্য দেখিয়েছেন, প্রকৃত বাজারমূল্যে তা সঠিক কি না, তা যাচাইয়েরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তা না হলে ঘোষিত সম্পদমূল্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
রাজনীতিতে যে শ্রেণি-পেশার মানুষই আসেন না কেন, তাদের উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব মূলত জনকল্যাণ। নির্বাচনের আগে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা যে হলফনামা প্রদান করেন তাতে যদি অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে সংগত কারণেই অনেক প্রশ্ন নানা মহলে দেখা দিতে পারে। মনে রাখা দরকার, হলফনামার বিধিবিধান অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতা নয়। এর পেছনে অবশ্যই যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। একজন প্রার্থীর দাখিলকৃত হলফনামার যাবতীয় তথ্য এবং সব ধরনের দলিলদস্তাবেজ সম্পূর্ণ সত্য ও নির্ভুল কি না, তা যাচাইয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেউ যদি বৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেন এবং অর্জিত সম্পদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান মেনে চলেন, তাহলে তা নেতিবাচক অর্থে আলোচনায় আসার অবকাশ থাকে না। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘আলাদিনের চেরাগ’ ঘষে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক যদি কেউ বনে যান, তাহলে তা খতিয়ে দেখে আইনানুগ প্রতিকার নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সবার দায়িত্ব। প্রার্থীদের সম্পদের সঠিক তথ্য যাচাইয়ে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাযথ উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।