জন্মভূমি ডেস্ক : যশোরের কৃষি খাতে সব থেকে বড় সমস্যা সবজি হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজের অভাব। একটি মাত্র সবজি হিমাগার থেকেও তা কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। যশোর সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর বিএডিসি উদ্যানে সবজি হিমাগার নির্মাণের পর গত দশ বছর ধরে ধুলোবালি আর মাকড়সার জালে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। জনবল সংকট আর যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আলোর মুখ দেখেনি এ হিমাগারটি।
যশোর বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ঝুমঝুমপুর বিএডিসির উদ্যানে নির্মাণ করা হয় ৫০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি সবজি ও ফল হিমাগার। তবে এটি নির্মাণের পর কখনো চালুই হয়নি। বিএডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এ সবজি হিমাগারটি সচল করতে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট রয়েছে এবং যন্ত্রাংশে ত্রুটি রয়েছে। অন্যদিকে কৃষকদের মাঠ এবং সবজির আড়ত দুটোই এ হিমাগার থেকে দূরে হওয়ায় সবজি রাখতে অনীহা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। ১০ বছর আগে নির্মাণ করা এ সবজি হিমাগারটি চালু করতে প্রয়োজন প্রায় ২২ জন জনবল। এরমধ্যে জনবল রয়েছে মাত্র ছয় জন।
জানা গেছে, যশোর জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫টি। তবে সবজি হিমাগারের জন্য দ্বিতীয় কোনো হিমাগার নেই।
ঝুমঝুমপুর বিএডিসি সবজি হিমাগারের স্টোর কিপার জাহিদ হাসান বলেন, এ হিমাগারটি নির্মাণের পর থেকে এভাবে ধুলোবালিতে ঢাকা পড়ে আছে। এটি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২২ জন জনবল প্রয়োজন। এর মধ্যে জনবল আছে মাত্র ৬ জন। হিমাগারের কোনো কাজ না থাকায় তারা অন্য কাজে সময় পার করছেন। পরিপূর্ণ জনবল পেলে এটি চালু করা সম্ভব হবে।
ঝুমঝুমপুর বিএডিসি উদ্যানের মার্কেটিং ও সুপারভাইজার বলরম সরকার বলেন, এ হিমাগারটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় এর অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এটি চালু করা গেলে নিকটস্থ কৃষকদের অনেকটা উপকারে আসতো। শুধু তাই নয় সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকতো, কৃষকরাও লাভবান হতো।
যশোরের হৈবতপুর, চুড়ামনকাঠি, সাতমাইল, বারীনগরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা যশোরে কোনো সবজি হিমাগার আছে বলে জানেন না। কৃষকরা জানান, দক্ষিণ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজির মোকাম যশোরের সাতমাইল বাজারে অবস্থিত। এ সবজির মোকাম থেকে ঝুমঝুমপুর সবজি হিমাগারের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ফলে দূরত্ব বেশি হওয়ায় মাঠ থেকে সবজি নিয়ে হিমাগারের রেখে আসা এবং হিমাগার থেকে আড়তে এনে বিক্রি করা কৃষকদের জন্য ব্যয়বহুল। ফলে কৃষকদের দাবি হিমাগারটি নির্মাণের সময় স্থান নির্বাচন ও পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এটি চালু হলেও কৃষকদের কোনো উপকারে আসবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
যশোর সদরের আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ বাশার বলেন, যশোরে যে সবজি হিমাগার আছে তা আমরা জানি না। এখন শুনতেছি যে একটি সবজি হিমাগার আছে, সেটি ঝুমঝুমপুরে। তাও গত ১০ বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
বারীনগর এলাকার কৃষক জামিল শেখ বলেন, সাতমাইল আড়তের আশেপাশে যে সকল কৃষক সবজি ফলায় তাদের পক্ষে সম্ভব নয় যশোর শহর ডিঙিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে ঝুমঝুমপুরের হিমাগারে গিয়ে সবজি রেখে আসা বা নিয়ে আসা। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এ হিমাগারটি চালু হলেও কৃষকদের জন্য কতটা উপকারে আসবে সেটিও বলা মুশকিল।
বিএডিসি বীজ বিপণন খুলনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক একেএম কামরুজ্জামান বলেন, কৃষকদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে ২০১২ সালে ঝুমঝুপুর বিএডিসি উদ্যানে একটি সবজি ও ফল হিমাগার নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকে জনবল সংকটের কারণে এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এ হিমাগার চালু করতে ২২ জন জনবল প্রয়োজন। এর মধ্যে জনবল আছে মাত্র ৬ জন। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ ৫টি পদেও জনবলের প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে তারা মাঠ থেকে এখানে সবজি রাখার জন্য বহন খরচ এবং অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা সবজি রাখতেও বেশ অনীহা প্রকাশ করেন। এ হিমাগারটি চালু করার জন্য আমরা প্রতিবছরই জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট আবেদন করি, কিন্তু কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। এটা চালু করা গেলে কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হিমাগারে সংরক্ষণ খরচটা বিএডিসি বহন করে কৃষকদের সহায়তা করার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।