নুরুন্নাহার সীমা, কুষ্টিয়া
দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে)র সেচ সরবরাহে ব্যবহৃত পাম্প হাউজের কার্যকারীতা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম বিপন্নের মুখে পড়েছে এই প্রকল্পাধীন কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিন বোরো ধান চাষ।
চাষীরা বলছেন এমন অনিশ্চয়তার দ্রæত সমাধান না হলে বিপদ সংকুল ধানচাষীদের রক্ষা করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট সেচ পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন-এবছর অনাবৃষ্টি ও খরতাপে সয়ং গঙ্গার পানি প্রবাহেই পড়েছে ঘাটতি। ভারত ও বাংলাদেশের পানিচুক্তির শর্তানুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে নির্ধারিত (মার্চ-মে) যে পরিমান পানি বন্টন হওয়ার কথা; এবছর মার্চ থেকেই পানি স্বল্পতার কারণে সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০হাজার কিউসেকেরও নীচে নেমে আসায় ব্যহত হচ্ছে অংশীদারিত্বে। এতে পদ্মার পানি প্রবাহ চরমভাবে নিন্মগামী হওয়ায় কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পাম্প হাউজ পয়েন্টে ন্যূনতম প্রবাহ মাত্রা ৪মিটারেরও নীচে নেমে গেছে। এতে চলছে না সেচ পাম্প।
মিরপুর খয়েরতলা গ্রামের চাষী আজহার আলী সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে ধান। তিনি বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পের পানির সুবিধার কারণে এই মাঠে সেচ পাম্প নেই। জিকে সেচ প্রকল্পের পানিতেই স্বল্প খরচে সেচ চলে। ক্যানেলে যদি পানি না আসে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।” “পানি না পেলে তো ধানই হবে না। এমন বিপন্নের হাত থেকে ধানগুলি রক্ষা করতে মেশিন দিয়েও পানি নিতে নাভিশ^াস চাষীদের। এইকাজে পাইপ দিয়ে পানি নেওয়া ঝামেলা, সারা বছর না নিয়ে দুদিনের জন্য তো আর মেশিনের মালিক পানি দিতে চাচ্ছে না।” দ্রæত এই পরিস্থিতির সমাধান চাই আমরা।
স্থানীয় ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, পানি শুন্যতায় ধানক্ষেতের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অগত্যা এসব গর্ভধারী ধানগুলি রক্ষায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করে হলেও ডিজেল চালিত শ্যালো থেকে পানি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি চাষীদের।
ভেড়ামারা জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প হাউজে কর্তব্যরত নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, গত বুধবার (২১ এপ্রিল) সকাল থেকেই একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ১২টি স্বয়ংক্রিয় সম্পূরক পাম্প। পাম্প হাউসের ইনটেক চ্যানেলে এখন মাত্র চার মিটার আরএল পানি পাওয়া যাচ্ছে। পানি সরবরাহ করতে ইনটেকে পানি থাকতে হবে ১৪ দশমিক পাঁচ মিটার আরএল এবং পানি প্রবাহ চার দশমিক পাঁচ মিটার আরএলের নিচে নামলে পাম্প মেশিনে পানি তোলা যায় না যা এখন বিদ্যমান।
চলতি এপ্রিলের ১৮ তারিখ থেকে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ দাঁড়ায় ২৪ হাজার কিউসেকে। জিকে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ চালু রাখতে প্রয়োজন ৩৪ হাজার কিউসেক। এ কারণে পানি না পেয়ে বন্ধ হয়ে গেছে জিকে সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ। এরফলে সেচ প্রকল্পাধীণ কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার সেচ নির্ভর ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত অন্ধকারে পড়েছে।
এদিকে ভু-উপরিভাগের সংকট, অনাবৃষ্টি ও খরতাপে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গত মার্চ মসের মাঝামাঝি থেকে অদ্যবদি জেলার ৭৫-থেকে ৮০ভাগ পানীয় জলের উৎস টিউবয়েল এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া পৌসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, আমাদের পৌর এলাকায় সরবরাহকৃত পানি ছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্টে সাড়ে ৪হাজার টিউবয়েল স্থাপন করা আছে যা প্রায় ২০-২৫% ভাগ মাত্র এখন পর্যন্ত সচল আছে।
কুষ্টিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মো: তৈমুর বলেন, চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানীয় জলের স্তর নেমে গেছে ২৫-থেকে ৩০ফিট নীচে। অন্যান্য বছররে তুলনায় এবছর আমরা টিউবয়ের স্থাপন করতে গিয়ে অতিরিক্ত আরও ৩০ ফুট নীচে যাওয়ার পর পানির স্তর পাচ্ছি। আমরা ধারণা করছি, ভু-উপরিভাগের পানির উৎসে ঘাটতি, অনাবৃষ্টি ও খরতাপের পাশাপশি কৃষি কাজে ভুগর্ভস্থ পানির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির ফলে দ্রæত ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে গেছে।