# শ্রমজীবী শিশুর নামে চাকুরিজীবীদের সন্তান
এম সাইফুল ইসলাম
খুলনার ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও বাস্তবে নেই কোন অগ্রগতি। খুলনা মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পর আওতাধীন বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। ফলে শ্রমজীবী শিশুদের অনিশ্চয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাদের অভিবাবক মহল।
জানা যায়, খুলনা মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ৯টি বেসরকারী সংস্থার ৩৭৬ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত হাজার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। আগামী ৩০ নভেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এনজিওগুলো হলো, সবুজ বাংলা সংস্থা, আলোর দিশারি, উন্নয়ন, দিপ্তী ফাউন্ডেশন, কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, স্যোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যাডভান্স কমিটি, সোসিও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ফর দি পুর, কালিয়া মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, দ্বীপ সমাজকল্যান ফাউন্ডেশন।
প্রকল্পে প্রথম ছয় মাস উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দিবেন। পরের চার মাস দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরমধ্যে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তারা ঝুঁকিবিহীন কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করবে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ২০২২ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগরীর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রের একটি শাখা রয়েছে গগনবাবু রোডে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোন শিক্ষার্থী-ই নেই এই স্কুলে। হাজিরা খাতায় দেখা যায়, পুরো অক্টোবর মাসে নেই কোন উপস্থিতির চিহ্ন। পুরো হাজিরা খাতাই ফাকা। এই স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নামে মাত্র এখানে ভর্তি। তারা লেখাপড়া করে পাশর্^বর্তী কয়লাঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সবুরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বলে জানান নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একজন অভিবাবক। সামনে কোন ব্যানার না থাকলেও স্কুলের রুমের ভেতরের সানসেটে একটি কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সম্বলিত সাইনবোর্ড ফেলে রাখা হয়েছে।
একইদিনে তেতুলতলা মোড় সংলগ্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় প্রায় একই অবস্থা। এই কেন্দ্রেরও একই শিক্ষার্থীর একাধিক স্কুলে ভর্তির অভিযোগ রয়েছে। এসব স্কুলে শ্রমজীবী শিশুর নাম থাকেলেও প্রকৃতপক্ষে তারা বিভিন্ন সচ্ছল পরিবারের সন্তান। জানা যায় সরকারি কর্মকর্তার সন্তানও এই স্কুলে পড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, তিনি কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পরিচালিত একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি সকালে ও বিকালে দুই শিফটে ডিউটি করতে হয়। বিনিময়ে বেতন পান ৫ হাজার টাকা।
এছাড়া টিবি ক্রস রোড়ের সেন্টারে সরেজমিনে শনিবার সকল সাড়ে সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা যায় কোন শিক্ষকই আসেনি এ কেন্দ্রে। প্রতিটি স্কুলে সর্বোচ্চ দুই শিফট চলার কথা থাকলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, জরাজীর্ন ভবনের একটি রুমে একজন শিক্ষক তিনটি শিফটে ক্লাস নেয়। এজন্য কেন্দ্রর শিক্ষককে অতিরিক্ত টাকা দেয়ার কথা থাকলেও পাওনা টাকাই দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এ কেন্দ্রও অন্যন্য কেন্দ্রর মতো অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফাতিমা উচ্চ বিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া স্কুলের শিক্ষার্থী। রয়েছে চাকুরিজীবী সন্তান।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, সকল খাতের শিশু শ্রম নিরসনে আগামীতে এ প্রকল্পের আওতা বাড়ানো হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জনে ঝুঁকিপূর্ণসহ সকল খাতের শিশুশ্রম নিরসন করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, শ্রমজীবী শিশু ছাড়া কেউ এই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রর শিক্ষার্থী হতে পারবে না। একই শিক্ষার্থী যদি দুই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে, তাহলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের কেন্দ্রের সকল শিক্ষার্থীই শ্রমজীবী হবে। একই শিশু যদি দুই স্কুলের শিক্ষার্থী থাকে তাগলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থ্যা সেয়া হবে। এছাড়া কোন চাকুরিজিবীর সন্তনের তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনিয়মে চলছে খুলনার ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্প
Leave a comment