অভয়নগর প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগর উপজেলায় দুই থেকে আড়াইগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে বিছালি। গত বছরের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার একাংশ ডুবে ওই এলাকায় আউস-আমন ফসলসহ ঘাস চাষ না হওয়ায় এ সংকট তৈরী হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, গত চার দশকের অধিকাংশ সময় ভবদহ এলাকায় বিলগুলো জলাবদ্ধ হয়ে থাকায় ব্যাপক এলাকায় ফসল হয় না। বেঁচে থাকার তাগিদে কৃষকেরা বিকল্প মৎসচাষ ও গরু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। এ অবস্থায় গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় অভয়নগর উপজেলার আটটির মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার(আংশিক) ৭০টি গ্রামের বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট ও ধর্মীয় উপসনালয়, কয়েকহাজার মাছের ঘের ও ফসলি জমি। তলিয়ে যায় আউস ফসল ও হাইব্রিড ঘাস। পানিতে নষ্ট হয় বাড়িতে থাকা বিছালি। জলাবদ্ধতায় কৃষকেরা ওই এলাকায় আমন ফসল ও হাইব্রীড ঘাস লাগাতে ব্যার্থ হয়। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে স্বাভাবিক দরের চেয়ে কয়েকগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে বিছালি। অনেকে কমদামে গরু বাছুর বিক্রি করে দিচ্ছেন। কৃষকেরা জানিয়েছেন একমুঠ ধানের খোয়াড়(গাছ) দিয়ে তৈরী হয় একটি বিছালি। ১০টিতে এক আটি আর আট আটি বা ৮০ আটিতে এক পৌন এবং ১৬ পৌনে এক কাহন বিছালি হয়। তাঁরা বলেন, এলাকায় ফসল ভাল হলে মৌসুমে এক কাহন বিছালি দুইহাজার ৫০০ টাকা থেকে তিনহাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই এলাকায় বর্তমানে বিছালির আকার ভেদে তা ছয়হাজার ৫০০ টাকা থেকে সাতহাজার পাচশত টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর দুইমুঠোর বিছালি(বড়) ১২ হাজার আটশত থেকে ১৩ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। সরেজমিনে গত শুক্রবার বিকালে উপজেলার মশিয়াহাটি বাজারে গিয়ে দেখা যায় মশিয়াহাটি বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার পাশে সারি সারি দাঁড়ানো রয়েছে বিছালি ভর্তি করিমন। সেখানে প্রতি পৌন বিছালি ৪৫০ টাকা থেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রির জন্য মণিরামপুরের খাটুয়াডাঙা থেকে ব্যবসায়ী তৌহিদুল সরদার করিমনে করে দুই কাহন বিছালি এনেছেন। তিনি বলেন, খেদাপাড়া থেকে কিনে সপ্তাহে দুইদিন এখানে বিছালি আনি। প্রতিআটি ৬০-৬৫ টাকা আর পৌন ৪৫০ থেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি করছি। তেল খরচ বাদে করিমন চালককে দিনে একহাজার টাকা দেওয়ারপর বিক্রি শেষে আমার হাজার থেকে বারোশো টাকা থাকে। উপজেলার বুইকরা গ্রাম থেকে মশিয়াহাটি বাজারে বিছালি কিনতে এসেছেন খামারী রোকোনুজ্জামান মোল্যা। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এবার জলাবদ্ধতায় আমার আউস-আমন ধান কোনটিই হয়নি। ফলে ছয়মাস ধরে বিছালি কিনছি। বিছালির দাম বেড়ে যাওয়ায় দু মাস আগে তিনটি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। গোয়ালে আরও তিনটি গরু আছে। আজ মশিয়াহাটি এসে দেখছি বিছালির দাম আরও বেশি। ফলে ফিরে যাচ্ছি। এত দাম দিয়ে বিছালি কিনে গরু পোষা সম্ভব না। তাই ভাবছি বাকি গরু গুলি বিক্রি করে দেব। জানতে চাইলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, জলাবদ্ধ এলাকায় দীর্ঘদিন ফসল হয় না। এবার ৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার(আংশিক) আউস ধান নষ্ট হয়েছে। আর আমন ফসল করা সম্ভব হয়নি। ফলে বিছালির তীব্র সংকটে তা দুইতিনগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অনেক কৃষক পানির দরে গরু-বাছুর, ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন।