জন্মভূমি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ দেশের জনগণ আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগগণের সেবা করে যাব।’ ‘এবার নৌকা জিতবেই’ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে রাজধানীর আরামবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন এবং নর্দান রুটে এমআরটি লাইন-৫ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে তিনি তাঁর দলের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেন, আগামী নির্বাচনে কাকে নমিনেশন দেওয়া হবে সেটা আমরাই ঠিক করে দেব। যাকে নমিনেশন দেব ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে, যেন আবার আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
তিনি বলেন, এখনও অনেক উন্নয়ন কাজ বাকী। সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ, অগ্নিসন্ত্রাসি এবং জঙ্গিবাদিরা ক্ষমতায় এলে এদেশকে আর টিকতে দেবে না। সেজন্যই জনগণের স্বাথের্, জনগণের কল্যাণে সকলকে ঐক্যবব্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন দিতে। এই নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য তিনি সকলের প্রতি বিশেষ করে ঢাকাবাসী মানুষের প্রতি তাঁর অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোটি পেয়েছিলাম বলেইতো এত উন্নতি হয়েছে সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখেন।
তিনি তাঁর দল যাকেই মনোনয়ন দেয় তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে ঢাকাবাসীর প্রতিশ্রুতি কামনা করলে সকলে দুইহাত তুলে সমস্বরে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি সকলের দোয়া চেয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা দলের সবাই ঐকবদ্ধ থাকবেন এবং ঘাতকের দল, সন্ত্রাসি দল বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত-এরা যেন এদেশের মানুষকে আর জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। অত্যাচার করতে না পারে। তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে।
বার বার তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টায় তিনি ভীত নন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই আবার পাওয়ারও কিছু নেই। একটাই লক্ষ্য এই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখা।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি মতিঝিল প্রান্তে এমআরটি লাইন-৫ এর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যেটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল।
তিনি আগাঁরগাও প্রান্তে এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অংশের উদ্বোধন শেষে টিকেট কেটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল প্রথম মেট্রো রেল যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, ডিসিসির দুই মেয়র, সংসদ সদস্যসহ উর্ধ্বতন বেসমারিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং কর্তব্যপালনরত সাংবাদিকবৃন্দ মেট্রোরেলে তাঁর সহযাত্রী হন।
॥ মেট্রোরেলে চড়ে মতিঝিল গেলেন প্রধানমন্ত্রী ॥
মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি আগারগাঁও স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় টিকিট মেশিন থেকে মেট্রোরেলের টিকিট কাটেন।
শনিবার (দুপুর ২টা ৪১ মিনিটের দিকে বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগতির এ যানে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে আড়াইটার দিকে মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা যায়, আজ রবিবার থেকে পুরো মেট্রোরেল সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। প্রথমে তিনটি স্টেশন চালুর মাধ্যমে এই অংশের মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। স্টেশনগুলো হলো- মতিঝিল, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং ফার্মগেট।
॥ তারেককে বিদেশ থেকে ধরে এনে শাস্তি দেব॥
মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আর বিদেশে বসে বাসে আগুন লাগানো, অগ্নিসন্ত্রাস আর নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে। ইনশাল্লাহ বিদেশ থেকে ধরে ওই কুলাঙ্গার তারেক রহমানকে শাস্তি দেব। কেউ থামাতে পারবে না।
শনিবার দুপুরে মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধনকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি জামাত যদি তাদের ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ না করে। তাহলে তারা যা পোড়াচ্ছে, বাংলার জনগণ যদি তাদের সবকিছু পুড়িয়ে দেয়, তখন কি হবে?
॥ বিএনপির ধ্বংসযজ্ঞ কিভাবে বন্ধ করতে হয় জানা আছে ॥
আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবরোধের নামে বিএনপিকে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, এটা তাদেরকে বন্ধ করতে হবে। যদি বন্ধ না করে, তাহলে কিভাবে বন্ধ করতে হয় তা আমাদের ভালোভাবে জানা আছে। বিএনপি দেশকে ধ্বংস করে দেয়, ওরা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে- সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
॥ বিএনপি পারে শুধু ভোট চুরি করতে ॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ ভালো থাকে। আর বিএনপি কী পারে? শুধু ভোট চুরি, দেশের অর্থ চুরি, জনগণকে হত্যা করা। নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন। এই ২৮ অক্টোবর কী ঘটনা ঘটাল তারা! আপনারা একবার বলেন। কোনো মানুষ যার ভেতরে সামান্য মনুষ্যত্ব আছে তারা কি এমনভাবে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করতে পারে? বিএনপির তাণ্ডবের মুখে পুলিশ পিছু হটে যায়। তারপরও তারা ওই পুলিশ সদস্যকে ধরে যেভাবে লাঠিপেটা করে হত্যা করল, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে যেভাবে অ্যাম্বুলেন্স পোড়াল, এমনকি তারা আমাদের নারী সদস্যদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। তারপরও পুলিশ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।
॥ পথ হারায়নি বাংলাদেশ ॥
মানুষের কাছে আমার একটাই চাওয়া, সবাই যেন স্বাধীন দেশের আত্মমর্যাদা নিয়ে চলে। সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্ত পরায়ণদের প্রত্যাখ্যান করে। এতটুকু বলতে পারি, পথ হারায়নি বাংলাদেশ। আমরা একের পর এক বড় বড় স্বপ্ন পূরণ করছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন আমাদের স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সোসাইটি। এটাই আমার বড় আকাক্সক্ষা। বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াবে, বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো।