জন্মভূমি ডেস্ক
ব্রিটিশ সা¤্রাজ্য যখন সারা বিশ^ থেকে বিতাড়িত হতে থাকে। একের পর এক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে থাকে। টালমাটাল বৃটিশ সা¤্রাজ্য। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের শুরুতে এক কঠিন সময়ে সিংহাসনে আহরণ করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তায় তিনি হাল ধরেন রাজতন্ত্রকে। বৃটিশ রাজতন্ত্র থাকবে কি না থাকবে, এই যখন অবস্থা, তখন মহারানীর মহানুভবতা, উদারনীতি, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গোটা বৃটেনকে ঐক্যবদ্ধ রেখে নিজেকেই নিয়ে গেছেন এক উচ্চতর স্তরে। শুধু বৃটেনের রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখেননি। তিনি মিলন মেলায় পরিণত করেছেন বৃটিশ কলোনীভুক্ত স্বাধীন হওয়া দেশগুলোকে কমনওয়েলথ গঠন করে এক পরিবারভুক্ত করে। যা ছিল রানীর অসাধারণ নেতৃত্বের বহিপ্রকাশ। একই সঙ্গে রাজ পরিবারের সদস্যদের একের পর এক কেলেঙ্কারী জন সম্মুখে চলে আসার পর রানী তা সামলিয়েছেন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। নিজ ভাই-বোন, ছেলে চার্লেসের স্ত্রী ডায়ানাকে নিয়ে যে পারিবারিক ঝড় বয়ে গেছে তা রানী নিরবে মেনে নিয়েছেন। এমনকি সর্ব শেষ ডায়না ও চার্লসের ছোট ছেলে হ্যারি রাজপরিবার থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং বিয়ে-পরিণয় ও রাজপরিবারের ভেতরের সকল অজনা কাহিনী প্রকাশ হওয়ার পরও দূরে ঠেলে না দিয়ে রানী নিরব থেকে সব কিছু সামলিয়েছেন। রানীর নিরবতায় রাজপরিবারসহ গোটা বৃটেনের জনগণও তা মেনে নিয়েছেন শ্রদ্ধার সঙ্গে। তার এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তার কারণে তিনি বিশ^ দরবারে অঘোষিত বিশ^ রানীর আসনে আসীন হয়েছেন। তাই আজ তিনি শুধু রানী নয় মহারানী হিসেবে শেষ বিদায় নিতে যাচ্ছেন, সারা বিশে^র সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিতে। তার এই শব যাত্রা হতে যাচ্ছে মহাপ্রস্থান।
এ দিকে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে রোববার রাজা চার্লস তৃতীয় বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং শোকার্তরা শেষ ২৪ ঘন্টায় রানীর কফিন দেখার জন্য সারিবদ্ধ অবস্থান নিয়েছেন।
জনসাধারণের প্রথম দর্শনার্থীরা ইতিমধ্যেই ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে আজ সোমবারের রাজকীয় বিদায়ের মুহূর্ত এক ঝলক দেখার জন্য আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছেন, যা লন্ডনকে স্থবির করে দেবে। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি দর্শক এই শেষকৃত্য অনুষ্ঠান দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা হবে মহারানীর মহাপ্রস্থান।
কয়েক ডজন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে শনিবার দিনের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লন্ডনে পৌঁছেছেন, ব্রিটেন দীর্ঘতম রাজত্বকারী রানীর ঐতিহাসিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান ঘিরে চারপাশে সর্বকালের বৃহত্তম পুলিশি অভিযান পরিচালনা করছে।
সাত দশক ধরে ব্রিটিশ রাজত্বের রানী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর গত ৮ সেপ্টেম্বর রানী এলিজাবেথের ৯৬ বছর বয়সে মারা যান, তাঁর প্রতি আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে তার কফিনটি দেখতে হাজার হাজার মানুষ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভিড় করছে।
যারা পতাকা লাগানো কাসকেটটি দেখতে চান তারা আজ সোমবার সকাল ৬:৩০ টা পর্যন্ত (০৫৩০ জিএমটি) এটি দেখতে ওয়েস্টমিনস্টার হলে প্রবেশ করতে পারবেন।
টেমস নদীর তীরে মাইলের পর মাইল সারি সারি শোকার্তরা ২৫ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। লাইনে ঢোকার জন্য রোববার কিছু পয়েন্ট বন্ধ করে দেয়া হবে বলে মনে হচ্ছে।
২৭ বছর বয়সী আইটি কর্মী শন মায়ো রানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৪ ঘন্টা সারিবদ্ধ থাকার পরে ওয়েস্টমিনস্টার হলে পৌঁছেছিলেন।
তিনি এএফপিকে বলেছেন, এটি অবিশ্বাস্যভাবে আবেগ প্রবণ ঘটনা ছিল। তিনি ছিলেন জাতির নানীর মতো, আমরা সবাই তাকে মিস করব।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জাপান এবং অন্যান্য অনেক দেশের নেতারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিলেও রাশিয়া, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, সিরিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সবচেয়ে বয়স্ক রাজা হিসেবে চার্লস ৭৩ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণের পরে রোববার সন্ধ্যায় বাকিংহাম প্যালেসে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাইডেনসহ কয়েক ডজন দর্শনার্থী বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাগত জানান।
নিউজিল্যান্ডের জ্যাসিন্ডা আরডার্ন, অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্থনি আলবানিজ এবং কানাডার জাস্টিন ট্রæডোসহ রানী এলিজাবেথ রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন এমন দেশগুলির প্রধানমন্ত্রীরা ওয়েস্টমিনস্টার হলে তাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
\ লন্ডনে রানীর মরদেহে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা \
ব্রিটেনের প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে লন্ডনে প্যালেস অব ওয়েস্টমিনিস্টারে রানীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানান সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
প্রয়াত রানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেস হলে রাখা মরদেহের কাছে এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট শেখ রেহানা।
এর আগে, ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেস হলে পৌঁছালে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের স্পিকারের একজন প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।
এ সময় ওয়েস্টমিনিস্টার হলে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম।
রানীর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ল্যাংকাস্টার হাউজে যান। সেখানে রানীর সম্মানে খোলা শোক বইয়ে তিনি সই করেন।
ল্যাংকাস্টার হাউজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভিকিফোর্ড।
শোক বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলায় শোকবার্তা লেখেন। রানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক বইয়ে শেখ হাসিনা লেখেন, বাংলাদেশের জনগণ, আমার পরিবার ও আমার ছোট বোন রেহানার পক্ষ থেকে গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।
প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও শোক বইয়ে সই করেন। শেখ রেহানা লেখেন, উনি আমার মন জয়করা একজন রানী। ওনাকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। তিনি ছিলেন আমাদের হৃদয়ের রানী এবং তিনি সব সময় তা থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার (মরদেহ) দেখে খুব খারাপ লেগেছে। যেন আমার মায়ের মতো কেউ চলে গেল। অনেক বড় একজন অভিভাবক মনে হয় চলে গেলেন। রানী ছিলেন মাতৃতুল্য ব্যক্তিত্ব। রানী বৈশ্বিক একজন অভিভাবক ছিলেন, কিন্তু চলে গেলেন। একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, ৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ব্যালমোরাল প্রাসাদে সত্তর বছর রাজত্ব করা ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী রাজশাসক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহন করেন।
আজ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেবেন লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।