# ৫ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ রয়েছে
# রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে পাঁচটি প্রস্তাব
# র্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, তেমনই কার্যক্রম করেছে
# দেশে শক্ত খুঁটি না থাকায় বিএনপি বিদেশিদের কাছে দৌঁড়াচ্ছে
# নতুন ঘর পেয়ে নতুন বউ আনবেন, তা হবে না
জন্মভূমি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী দিক বিবেচনা করে, কোন ঝুঁকির মধ্যে নেই। আমি আপনাদের সকলকে নিশ্চিত করতে পারি যে উদ্বেগের কিছু নেই।’
যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সদ্য সমাপ্ত রাষ্ট্রীয় সফর সম্পর্কে বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যেভাবে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিচালনা করছে সেখানে কোন ‘রিস্ক’ নেই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েই দুশ্চিন্তার কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেকোন কোন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোন রিস্ক নেই, এটুকু আমি কথা দিতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশের কাছে গ্যাস বিক্রীর মুচলেখা না দেওয়ায় দেশি-বেদেশি ষড়যন্ত্রে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি সত্য কিন্তু তা করলে আজকে কিছুটা লোড শেডিং দিয়েও বিদ্যুৎ সঞ্চালনা যেভাবে অব্যাহত রাখতে পারছেন তা সম্ভব হোত না, দেশ অন্ধকারেই নিমজ্জিত হোত।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বিষয়টা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত, কে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কে করবে না। এখানে আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। তিনি বলেন, আমরা চাই সব দল আসুক, ইলেকশন করুক। কার কোথায় কতটুকু যোগ্যতা আছে। অন্তত আওয়ামী লীগ কখনো ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে না, আসেও নাই। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় আসে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাজ করে, জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোট নিয়েই কিন্তু আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনো কোন মিলিটারি ডিরেক্টরের পকেট থেকে বের হয়নি। কারো ক্ষমতা দখল করেও কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ভোটের মাধ্যমেই এসেছে, নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নয়নে আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই দেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি যতটুকু সংস্কার এটা কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং আমরা মহাজোট করে সবাইকে নিয়েই কিন্তু এটা করেছি। এরপরও যদি কেউ না আসে সেখানে আমাদের কি করণীয়, হারার ভয়েই আসবে না।
জনগণের প্রতি আস্থা নেই বলেই বিএনপি বিদেশীদের কাছে ধন্যা দিয়ে বেড়াচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি ধন্যা দিয়ে বেড়াচ্ছে কেননা যদি মাটিতে জোর থাকতো, নিজের দেশের মাটিতে যদি এদের সেরকম সমর্থন থাকতো, খুঁটির যদি জোর থাকতো অর্থাৎ নিজের শিকড়ের জোরটা যদি এখানে থাকতো তাহলে তো বিদেশে ধন্যা দেওয়ার প্রয়োজন হোত না।
তিনি বলেন, জনসমর্থন থাকলে, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে জনগণের কাছে যেত, বিদেশের কাছে দৌড়ে বেড়াত না, এটা হলো বাস্তবতা। আর সেই শক্তি নেই বলেই, তাছাড়া কোন মুখে তারা জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা, সব জায়গাতেই তো তারা আছে। তাদের দ্বারা নির্যাতিতরা যদি সামনে এসে দাঁড়ায় তাহলে কি জবাব দেবে বিএনপি? ঐ জন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধন্যা দিয়ে বেড়ায়। এরা মানুষের কাছে যায় না। আর আমরাতো বাধা দিচ্ছি না। যত আন্দোলন-সংগ্রম করবে তত ভাল কিন্তু করেনাতো কি করবো।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে দেওয়া ৫ প্রস্তাব হলো: রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা; আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, জাতীয় আদালত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলায় সমর্থন প্রদান; জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা; আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমতে মিয়ানমারের অঙ্গীকারসমূহ এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করা এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাকারীদের নির্বিঘেœ প্রবেশ নিশ্চিত করা।
প্রধানমন্ত্রী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৮ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ ৪ অক্টোবর দেশে ফেরেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন।
\ আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক \
আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন এবং বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন। আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি বলে যে আমাকে চায় না, আমি কোনোদিনও থাকব না। এটা যেদিন থেকে আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, তখন থেকে এই শর্তটা মেনে যাচ্ছি। এটা ঠিক দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় আমরা একটানা ছিলাম বলে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমার লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সালের দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন, যেটা পেয়েছি। এখন বিদায় নেয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। আমার তো আসলে সময় হয়ে গেছে।
\ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে পাঁচটি প্রস্তাব \
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। মানবিক কারণে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমি জাতিসংঘে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেছি। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে জাতিসংঘকে আহŸান জানিয়েছি।
\ ৫ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ রয়েছে \
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘে বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে; তাঁরা প্রত্যেকে বলেছে, ২০২৩ সাল বিশ্বে দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। আপনারা জানেন, এমনিতে আমাদের দেশ দুর্যোগপূর্ণ দেশ। বিশ্বব্যাপী এমনিতে অর্থনৈতিক সংকট। তাই আমরা দেশের নাগরিক দলীয় নেতাকর্মী সবাইকে বলে রেখেছি, আগামী বছর হবে খাদ্য সংকটের বছর। সেজন্য কোন জায়গা ও জলাশয় যেন খালি না থাকে। সেজন্য আমরা খাদ্য সংকট মেটাতে কৃষিখাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ জন্য সকল প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ রয়েছে। আমাদের পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ রয়েছে। আমরা যতই ঋণ নেই না কেন, কোনো ঋণ পরিশোধ ছাড়া থাকেনি। আমাদের বাজেটের দিক থেকে কোনো সংকট নেই। যেসব প্রকল্পগুলো দ্র্রæত শেষ করা যায় সেগুলো আগে নিয়েছি। এক্ষেত্রে প্রকল্পগুলোকে তিনভাগে ভাগ করেছি।’
\ নতুন ঘর পেয়ে নতুন বউ আনবেন, তা হবে না \
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা বিশ্ব যেখানে অশান্তিতে ভুগছে। সেখানে আমরা কিছুটাতো সমস্যায় আছি। তবে, আমাদের দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয়; ভাল থাকে সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
‘আজকে আমরা ঘর করে দিচ্ছি। তাদের ঘরের পাশে কিছুটা জায়গা দিচ্ছি। তারা হাঁস, মুরগি শাক-সবজি চাষাবাদ করছে। এতে উৎপাদন বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘যাদের ভ‚মি নেই আপনারা জানাবেন, আমরা তাদের ঘর করে দিচ্ছি। স্বামী-স্ত্রীর নামে আমরা নতুন ঘর করে দিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী মজা করে বলেন, ‘নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ আনবেন, তা হবে না।’ এ সময় সবাই হেসে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা স্বামী-স্ত্রী সবাইর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’
\ র্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, তেমনই কার্যক্রম করেছে \
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকাই র্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে। আমেরিকা তাদের ট্রেনিং দেয়, তাদের অস্ত্রশস্ত্র এবং তাদের হেলিকপ্টার এমনকি, তাদের ভিজ্যুয়াল সিস্টাম, আইসিটি সিস্টেম, সবই আমেরিকার দেওয়া। ‘আমেরিকা যখন স্যাংশন দেয় এবং কোনো কথা বলে বা অভিযোগ আনে, তাদেরকে আমার একটাই কথা, যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন, তেমনই তারা কার্যক্রম করেছে। এখানে আমাদের করার কী আছে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কথায় কথায় গুলি করে মেরে ফেলে দেয়। ছোট্ট বাচ্চাদের গুলি করে মেরে ফেলে দেয়। খেলনা পিস্তল দিয়ে তাদের মেরে ফেলে দিল, আমাদের কতজন বাঙ্গালি মারা গিয়েছে সেখানে, কিন্তু তারা কিছু বলেনি। সে কথাগুলো আমি স্পষ্টভাবে বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।’
\ দেশে শক্ত খুঁটি না থাকায় বিএনপি বিদেশিদের কাছে দৌঁড়াচ্ছে \
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ভুলে গেছে তাদের অতীতের কথা। তাদের সৃষ্টি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। তারপর নির্বাচনের নামে যে প্রহসন, সেটাও তাদের সৃষ্টি। বরং, আমরা নির্বাচনটা জনগণের কাছে নিয়ে গেছি। ভোটার তালিকা তৈরি হচ্ছে। স্বচ্ছ ব্যালট বক্স তৈরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগই স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে।’
‘দেশের মাটিতে যদি তাদের খুঁটিতে যদি শক্তি থাকত, তাহলে বিদেশে ধরণা দেওয়ার প্রয়োজন হতো না’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসমর্থন থাকলে জনগণের প্রতি আস্থা থাকলে জনগণের কাছে যেত, বিদেশিদের কাছে দৌঁড়াত না। এটা হলো বাস্তবতা। কিন্তু, সেই শক্তি নেই বলে তারা বিভিন্ন জায়গায় দৌঁড়াচ্ছে।’
আমাদের অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
Leave a comment