মোংলা প্রতিনিধি : সাত মাস ১০ দিন আগে জেলে হিলটন নাথ বলে খ্রিষ্টীয়ান সম্প্রদয়ের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সমাহিত করা কবর থেকে ব্যাবসায়ী মাহে আলম বলে মরদেহ উত্তোলন করার সময় হিলটন নাথের মা-বিথিকা নাথের কান্নায় হৃদয় বিদারক এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মায়ের আজাহারিতে কাদলেন উপস্থিত অনেকেই। আদালতের নির্দেশে ব্যবসায়ীর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোংলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সহ থানা ও উপজেলা প্রশাসন। সোমবার সকাল ১১টার দিকে পশ্চিম চিলা বাজার এলাকা থেকে মরদেহটি উত্তোলন করে মাহে আলমের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরিক্ষার পর মাহে আলমের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে, আর আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিখোজ হিলটন নাথেরও সন্ধান করবে প্রশাসন।
পুলিশ ও হিলটন নাথের পরিবার সুত্রে জানায়, গত ৭ এপ্রিল রাতে বড় ভাই সাগর নাথ সহ ৪জন মিলে পশুর নদীতে মাছ ধরতে যায় জেলে হিলটন নাথ (২১)। রাত ৩টার দিকে পুর্ব বন বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জের বন রক্ষিদের অভিযানের মুখে জীবন বাচাঁতে গিয়ে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয় জেলে হিলটন নাথ। এসময় বাকি ৩ জেলেকে আটক করে ৮ এপ্রিল সকালে জেল হাজতে পাঠায় চাঁদপাই রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বন রক্ষিরা। এ ঘটনার ৩দিন পর ১০ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে নিঁেখাজ হয় মোংলার ব্যাবসায়ী মাহে আলম (৬৫)। তাকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেণ তার স্বজনদের। এব্যাপারে উভয় মোংলা থানায় পৃথক সাধারণ ডায়রী করেণ।
এদিকে, ১০ এপ্রিল ভোরে বন বিভাগের জোংড়া ফরেষ্ট ঘাটে একটি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয়রা। কিন্ত কয়েক ঘন্টা পরে সে লাশের কোন হদিস মিলেনী। আবার ১৩ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকার সুন্দরবনের গহীন থেকে অর্ধগলিত একটি লাশ উদ্ধার করে দাকোপ থানা পুলিশ। ময়না তদন্ত শেষে ১৪ এপ্রিল বিকালে মরদেহটি হিলটন নিখোঁজ নাথের বলে মা বিথিকা নাথ শনাক্ত করে খ্রিষ্টীয় ধর্ম অনুযায়ী নিজ বাড়িতে সমাধী করে স্বজনরা। তবে বন বিভাগের জোংড়া ফরেস্ট ঘাটে ভাসমান লাশ আর সুন্দরবন থেকে উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে বয়স ও পরিহিত পোষাকের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে বলেও জানায় এলাকাবাসী।
২০ এপ্রিল পৌরসভার সিটি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে মাহে আলমকে অপহরণের প্রাক্কালে পরিহিত প্যান্ট শার্টের সাথে উদ্ধারকৃত মরদেহের পোশাকের মিল রয়েছে বলে অভিযোগ করেণ ছেলে সুমন রানা সহ তার স্বজনরা। তাই পরিচয় শনাক্তে আদালতে আবেদন করলে ১ আগস্ট প্রকাশিত “ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমানিত হয়, অজ্ঞাত মৃত দেহ সুমন রানার জৈবিক পিতা মাহে আলম’র। দীর্ঘ দিন আইনি প্রক্রিয়া মাধ্যমে অবশেষে ৭ মাস ১০ দিন পর লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন আদালত। পাশাপাশী এ ঘটনায় অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে মোংলা থানায় হত্যা মামলা রুজু হলে ট্রলার মাঝি মোরেফ নামের একজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। ২০ নভেম্বর সোমবার সকাল ১১টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাবিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহি অফিসার দীপংকর দাশ, মোংলা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার, থানা অফিসার ইনচার্জ মোহা¤াদ সামসুদ্দীন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইমরান হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবার হোসেন, মাহে আলমের ছেলে সুমন রানা, পরিবেশ বিদ ও সাংবাদিক শেখ নুরে আলম সহ স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ছাড়াও এলাকাবাসী উপস্থিত থেকে মরদেহ উত্তোলন করে মাহে আলম’র ছেলে সুমন রানার কাছে হস্তান্তর করেণ নির্বাহী ম্যাজিট্ট্রেট সহ প্রশাসনের সদস্যরা। তবে মাহ আলমের লাশ শনাক্ত হলেও কিন্ত হিলটন নাথের বিষয়টি এখনও নিখোজই রয়ে গেলো।
লাশ উত্তোলনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার ভুমি মোঃ হাবিবুর রহমান, আমাকে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা জেলা থেকে নির্বাহী ম্যাজিট্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত করেছে। মাহে আলমের পরিবারের পক্ষ থেকে ডিএনএ পরিক্ষার মাধ্যমে প্রমানিত হয়, কবরস্থ করা মরদেহটি হিলটন নাথের নয়,ব্যাবসায়ী মাহে আলমের। তাই আদালতের নিদের্শনা পেয়েই সোমবার ২০ নভেম্বর মরদেহটি উত্তোলন করে তার ছেলে সুমন রানার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া, নিখোজ হিলটন নাথের সন্ধানেও কাজ করবে আইনশৃখ্যলা বাহিনীর সদস্যরা বলে জানান তিনি।
১০ এপ্রিল ভোরে বন বিভাগের জোংড়া ফরেষ্ট ঘাটে ভাসমান লাশটি কার এবং এটি অল্প সময়ের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেরো, সে বিষয় অনুসন্ধ্যান করলেই হিলটন নাথ নিখোজের আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে বলে দাবী স্থানীয়দের।