জন্মভূমি ডেস্ক : দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিনটিতেই বড় দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন চার হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মাধ্যমে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমল প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সব মূল্যসূচকও কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া ১১৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। দাম কমেছে ২৪৮টির। ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম কমার কারণে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৯২২ কোটি টাকায়, যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ছয় লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ১৪৪ কোটি টাকা বা দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে কমে ৪৮ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ফলে দুই সপ্তহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৫২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬০ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২০৫ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৪৩ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ তিন সপ্তাহের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪০৯ পয়েন্ট।
প্রধান সূচকের পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহ ধরে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩২ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৬৬ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
ইসলামি শরিয়াহ্র ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও টানা তিন সপ্তাহ ধরে কমেছে। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ১৫ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫২ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৩০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৯০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯৫০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় দুই হাজার ৭০ কোটি দুই লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ১১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। লেনদেন কমার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ অন্য ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম, লাভেলো আইসক্রিম, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
গত সপ্তাহে দরপতনে শীর্ষে ছিল পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১১ টাকা ৮০ পয়সা বা ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির সমাপনী মূল্য ছিল ৪৮ টাকা ৬০ পয়সা। দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা যমুনা ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। শেয়ারের দাম ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ কমায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থানে রয়েছে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ই-জেনারেশনের ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, খান ব্রাদার্সের ১২ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সালভো কেমিক্যালের ১২ দশমিক ০২ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ১১ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।