জন্মভূমি ডেস্ক : ইন্টারনেট জগতে প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে ইউরোপে অনেক দিন আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সম্প্রতি নোয়েব ও উইকিমিডিয়া ইউরোপসহ ২৫টিরও বেশি ডিজিটাল অধিকার সংগঠন এ বিষয়ে এক সতর্কবার্তা দিয়েছে। তারা ইউরোপিয়ান ডাটা প্রোটেকশন বোর্ডকে (ইডিপিবি) চিঠি লিখে জানিয়েছে, প্রযুক্তি কোম্পানি মেটার প্রস্তাবিত কনসেন্ট অর পে পদ্ধতির প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করতে হবে। কারণ এটি ব্যবহারকারীদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করে না।
মূলত কনসেন্ট অর পে পদ্ধতিতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য ডাটা সংগ্রহ ও তা ব্যবহারের সম্মতি নিয়ে থাকে অথবা বিকল্প হিসেবে পেইড সাবক্রিপশন মডেল দিয়ে থাকে। ডিজিটাল অধিকার সংরক্ষণের গ্রুপের মতে এটি একটি জবরদস্তিমূলক পদ্ধতি। এ বিতর্কিত পদ্ধতিটি মেটার মতো কোম্পানিগুলোকে অনলাইনে ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের নতুন পথ তৈরি করে দেবে।
গত বছর মেটা জানিয়েছিল, তাদের প্লাটফর্মে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পৃথকভাবে সম্মতি গ্রহণ করা হবে। এর আগে প্রাইভেসি গ্রুপগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাইভেসি আইন ব্যবহার করে মেটার উপস্থাপিত আইনি যুক্তিগুলোকে সফলভাবে খণ্ডন করেছিল। তখন প্রাইভেসি সমর্থক গ্রুপগুলো প্রমাণ করেছিল যে মেটা তাদের প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডাটা সংগ্রহ করছে, যা ইইউর গোপনীয়তা আইনের পরিপন্থী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মেটা নতুন করে ব্যবহারকারীদের কাছে কনসেন্ট অর পে পদ্ধতি নিয়ে আসে। তবে মেটার দেয়া দুটি বিকল্পের মধ্যে একটি ছিল বিজ্ঞাপন-মুক্ত সাবস্ক্রিপশন মডেল যেখানে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৯ ইউরো ৯৯ সেন্ট দিতে হবে এবং অন্য ফ্রি মডেলে ডাটা সংগ্রহ ও ব্যবহারের জন্য মেটাকে ব্যবহারকারীরা অনুমতি দেবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের গোপনীয়তা আইন বলছে, যেকোনো ক্ষেত্রে সম্মতি বৈধ হওয়ার জন্য তা অবশ্যই স্বেচ্ছায় হতে হবে। কিন্তু মেটার প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি স্বেচ্ছায় বিষয়টিকে উপেক্ষার পাশাপাশি গোপনীয়তার রক্ষার ওপর মেটা আলাদা মূল্য আরোপ করছে বলে দাবি করছে ডিজিটাল অধিকার সংগঠনগুলো।
গত বছর ডাটা প্রটেকশন অথরিটির (ডিপিএ) কাছে দায়ের করা জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন আইনের আওতায় আনা অভিযোগে মেটার পদ্ধতিকে বেআইনি কৌশল বলা হয়েছিল। ডিজিটাল অধিকার সংগঠনগুলো সতর্কবার্তায় বলেছে, ডাটা সুরক্ষা সবার মৌলিক অধিকার। যদি মেটার কনসেন্ট অর পে পদ্ধতির অনুমোদন দেয়া হয় তাহলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার অধিকার ধ্বংস হবে। তাই সাধারণ মানুষের ডাটা সুরক্ষায় প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে গ্রুপটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা বিধিবিধানকে আরো সুসংহত করতে কাজ করে আসছে ইউরোপিয়ান ডাটা প্রটেকশন বোর্ড। মেটার প্রস্তাবিত কনসেন্ট অর পে পদ্ধতির বিষয়ে নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ইডিপিবিকে বিবেচনা করার অনুরোধ করেছে। তারা আশা করছেন, ইডিপিবির থেকে দিকনির্দেশনা পেলে মেটার মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সঠিক পথে ফিরে আসবে। আগামী ৮-১৪ সপ্তাহের মধ্যে ইডিপিবিকে মেটার পদ্ধতির সম্পর্কে তার মতামত জানাবে। তাদের মতামত আগামী বছরগুলোয় ইউরোপের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ডাটা সুরক্ষার রূপরেখা তৈরিতে সাহায্য করে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
ইউরোপে অনলাইন প্রাইভেসির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
Leave a comment