তালায় লুৎফর রহমান নিকারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে ধ্রæমজাল সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। একটি মহল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ঘটনাটি উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে প্রাথমিক ময়না তদন্ত রিপোর্টে নিহতের শরীরে দৃশ্যত এবং ময়না তদন্তের সময় কাটার পর কোন মারপিটের কিংবা আঘাতের চিহ্ন পায়নি মেডিকেল টিম।
সরেজমিনে গেলে কয়েকজন জানান, তালা সদর ইউনিয়নের জেয়ালা নলতা গ্রামের নলবুনিয়া বিলে প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে একটি মাছের ঘের পরিচালনা করে আসছে সরদার মশিয়ার রহমান। উক্ত ঘেরে বিগত ১৭ আগস্ট দিবাগত রাতে জেয়ালা নলতা গ্রামের নিকারীপাড়ার লুৎফর রহমান নিকারীর পুত্র সেলিম নিকারী মাছ ধরছিলেন। ওই সময় মৎস্য ঘেরের কর্মচারীরা ঘের থেকে মাছ চুরির অভিযোগে সেলিম নিকারীকে আটক করে সামান্য মারপিট করে এবং ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমানকে খবর দেয়। মশিয়ার রহমান তাকে ছেড়ে দিতে বলে এবং বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এদিকে ছেলে আটকের খবর শুনে সেলিম নিকারীর পিতা লুৎফর নিকারী (৬৫) তাকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে প্রায় ৭০০ মিটর দূরে একটি ভেড়ির উপর পড়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
তবে সেলিম নিকারীর দাবি, তিনি পাশর্^বর্তী সরকারি খালে মাছ ধরছিলেন। তাকে চেয়ারম্যানের ঘেরের কর্মচারীরা আটক করে মারধর করে। এ সময় তার পিতা লুৎফর নিকারীকে এগিয়ে আসলে তাকেও মারপিট করা হয় এবং এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সেলিম নিকারী বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে তালা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় সরদার মশিয়ার রহমানকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে মৃত লুৎফর রহমান নিকারীর ভাইপো রুহুল আমিন নিকারীর ঘেরের কর্মচারী মুজাহিদুল সরদার জানান, তিনি দেখেন এক ব্যক্তি অসুস্থ লুৎফর নিকারীকে কোলের মধ্যে নিয়ে বসে আছেন। পরবর্তীতে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। তবে সেখানে সরদার মশিয়ার ছিল না।
তবে নিহতের ভাতিজা জেয়ালা নলতা গ্রামের রুহুল আমিন নিকারী জানান, নলবুনিয়া বিলের সরকারি খালে মাছ ধরছিলেন লুৎফর নিকারীর ছেলে সেলিম নিকারী। ওই খালের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমানের মাছের ঘেরের ভেড়ি রয়েছে। খাল থেকে ধরে সেলিমকে আটকে রাখেন মশিয়ারের সহযোগী রনি। এরপর সরদার মশিয়ার ঘটনাস্থলে পৌঁছে বারুইহাটি গ্রামের রনি, হাজরাকাটী গ্রামের তুহিন শেখসহ তিনজন মিলে তাকে মারপিট করেন। ছেলেকে মারপিটের ঘটনা শুনে বাবা লুৎফর নিকারী ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান। সেখানে যাওয়া মাত্রই তাকেও মারপিট করেন। পরে গ্রামবাসী গিয়ে লুৎফর রহমানকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। সেলিমকেও তার পাশে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
সরদার মশিয়ার রহমানের বড় ভাই সরদার গোলজার হোসেন জানান, ঐদিন রাতে ৭/৮ জন একসাথে মিলে তার ছোট ভাইয়ের ঘেরের মাছ লুট করতে আসে। এ সময় সেলিম নিকারীকে কর্মচারীরা আটক করলে বাকিরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেলিম নিকারীর পিতা লুৎফর রহমান নিকারী ঐ রাতে হন্তদন্ত হয়ে ঘেরের দিকে আসার পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে রাস্তার উপর পড়ে যান। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। যতদূর জানা যায়, মৃত লুৎফর রহমানের হার্টের অসুখ ছিল এবং নিয়মিত হার্টের ওষুধ গ্রহণ করতেন।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা: হুসাইন শাফায়েত বলেন, নিহত লুৎফর রহমান নিকারীর শরীরে দৃশ্যত এবং ময়না তদন্তের সময় কাটার পর কোন মারপিটের কিংবা আঘাতের চিহ্ন পায়নি মেডিকেল টিম। তবে ময়না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট পেতে মাস খানেক সময় লাগতে পারে। তাছাড়া ভিসেরা এবং হিস্ট্রো প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। রিপোর্টগুলো আসলে লুৎফর নিকারীর মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।