এম সাইফুল ইসলাম
খুলনায় বছরের পর বছর ঝুলে থাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসি। কোনো রাস্তার উন্নয়ন কাজ, কোনো রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি আবার কোনো রাস্তায় ড্রেন প্রশস্তকরণ কাজ চলায় পুরো নগরজুড়ে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এ কারণে অসহনীয় যানজট তৈরি হচ্ছে শহরে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
ড্রেনের ময়লা রাস্তার পাশে উঠিয়ে রাখা, নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় রাখা, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে যাচ্ছে। যানজট ও ধুলাবালিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়েছে।
॥ কেসিসি ড্রেনেজ প্রকল্প ॥
বর্ষা মৌসুমে মহানগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭টি ড্রেন উন্নয়ন করছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। কিন্তু বাস্তবায়নের পর সড়ক থেকে এসব ড্রেন উঁচু হচ্ছে দেড় ফুট। ড্রেনে ম্যানহোল খোলা থাকায় দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু ছড়াচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ জনসাধারণ। কেসিসি সূত্রে জানা যায়, ওই প্রকল্পের আওতায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭টি ড্রেন উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। যা শেষ হবে আগামি ৩০ জুন ২০২২ সালে।
॥ শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প ॥
২০১৩ সালে সরকারি অর্থায়নে ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কেডিএ’র এমন উদ্যোগে দীর্ঘদিন খুলনা সিটি কর্পোরেশন ওই সড়কটি সংষ্কার করেনি। দীর্ঘ ভোগান্তির পর খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সড়কটি অনেকটা জোর করে সংস্কার করিয়ে নেয় কেসিসি।
কেডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন মেলে। যার বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। সড়ক প্রশস্তকরণে ১০৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ব্যয় বাড়ছে। সেইসঙ্গে মেয়াদ বাড়ছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফলে ৯৮ কোটি টাকা প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ ছাড়া দুই বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে যাচ্ছে সাড়ে ৭ বছর। নানা জটিলতায় বাস্তবায়নের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২৬ কোটি টাকা। যার বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। ফের মেয়াদ বাড়ানোতে প্রকল্পটি শেষ হবে আগামি ২০২২ সালের জুন মাসে। অর্থাৎ নগরবাসীকে আরও এক বছর এ ভোগান্তি কমাতে হবে।
॥ শের-এ বাংলা রোড চার লেন প্রকল্প ॥
খুলনা নগরীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক শের-এ বাংলা রোড। গল্লামারী ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা গড়ে উঠায় শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর ওই সম্প্রসারিত অঞ্চলে বসবাসকারীদেরও প্রতিনিয়ত এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়।
সড়কটি ২২ দশমিক ১ মিটার (৭৫ ফুট) চওড়া হবে। সড়কের মূল অংশটির কার্পেটিং হবে ১৮ দশমিক ৫ মিটার। পরে ১.৫ মিটার করে দুপাশে ড্রেন তৈরি করা হবে। ওই ড্রেনের উপর স্লাাব বসিয়ে সেটি ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
॥ সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস রোড নির্মাণ প্রকল্প ॥
সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা। সড়ক ৩টির মধ্যে নগরীর নিরালা থেকে সিটি বাইপাস পর্যন্ত লিংক রোডের দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রায়েরমহল পর্যন্ত লিংক রোড ৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং দৌলতপুর কৃষি কলেজ থেকে বাস্তুুহারা পর্যন্ত ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার।
॥ নাগরিক নেতাদের মন্তব্য ॥
নাগরিক নেতা গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন জানান, আমরা উন্নয়নে বিশ^াস করি। কিন্তুু উন্নয়নের নামে বছরের পরে ঝুলে থাকবে বিভিন্ন প্রকল্পগুলো, এটা কাম্য নয়। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার কারণে ড্রেনের পচা পানি, দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু পরিবেশ দূষিত করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুলে থাকা প্রকল্পগুলো দ্রুত সমাপ্তর আহবান জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর খুলনার সমন্বয়ক এ্যাড বাবুল হাওলাদার বলেন, উন্নয়নের নামে বছরের পরে ঝুলে রয়েছে খুলনার বিভিন্ন প্রকল্প। বিশেষ করে ড্রেনের কাজ দ্রুত শেষ করা জরুরি। তা না হলে ড্রেনের খোলা ম্যানহোলে রোদ হলে গন্ধ ছড়াচ্ছে, আবার বৃষ্টিকে নোংরা পানি ড্রেনের ওপরে চলে আসে। এর ফলে ডায়রিয়া সহ শিশুদের মধ্যে বাড়ছে নানা রোগ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুলে থাকা প্রকল্পগুলো দ্রুত সমাপ্তর আহবান জানান।
উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয়হীনতায় খুলনাবাসী
Leave a comment