এম এন আলী শিপলু : ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব কয়রার দশহালিয়া গ্রামের মানুষজনকে এখনও আতঙ্কিত করে রেখেছে। ওই এলাকায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ আটকানো সম্ভব হলেও প্লাবিত এলাকার অনেক মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। ভাঙা ঘরে বসবাস করছেন অনেকেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম চিংড়ি মাছের ঘের প্লাবিত হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। ছিন্নমূল মানুষগুলো রয়েছেন চরম হতাশায়। ত্রাণ কার্যক্রম খুবই সীমিত। নানা প্রতিবন্ধকতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা। তারপরেও চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ওই গ্রামের মানুষের মাঝে নেই কোনো ঈদের আনন্দ।
শুধু কয়রার দশহালিয়া গ্রামের মানুষগুলো নয়, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রার মানুষের সবখানেই একই চিত্র। উপকূলীয় কয়রার শত শত মানুষের এবারের ঈদ আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। দিনে অন্তত একবার খাবারের চিন্তায় ব্যাকুল পরিবারগুলোর কাছে নেই কোনো ঈদের আনন্দ। রিমালে কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নেওয়ায় আনন্দের রেশমাত্র নেই তাদের মাঝে। ঈদে সেমাই, পায়েসও খাওয়া হবে না অনেক পরিবারের সদস্যদের। উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের তানিয়া খাতুন, নাজমা বেগম, শহিদুল্যাহ গাজীসহ আরও অনেকেই বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবলীলায় তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। তাদের এখন রয়েছে শুধু হাহাকার।
ওই গ্রামের বাসিন্দা বয়সের ভারে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় চলতে ফিরতে কষ্ট হয় আফছার উদ্দীনের। এরপরও পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে ৭০ বছর বয়সে এসেও জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন তিনি।
গত শুক্রবার কথা হয় আফছার উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কী আর করব, সব সময় নদীর ভাঙাগড়ার মধ্যে বসবাস করতে হয়। লোনা জলে সব কিছু বিলীন করে দিয়েছে জমিজমা, ঘরবাড়ি সবই তো ভাইস্যা গেছে। শুধু ঘরখানই দাঁড়াই আছে। নদীতে জোয়ার আসলে সব সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়তে হয়।
শুধু তিনি নন, এরই মধ্যে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সংগ্রাম করছেন তার মতো উপকূল বাসিন্দারা। রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই গ্রামের ৬০ পরিবারের সদস্যরা। তাদের অনেক কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কপোতাক্ষের লোনা জলে। অনেকের বাড়িতে রাখা ধান ছিল। রিমালের দিন জলোচ্ছ্বাস শুরু হওয়ার সময় কিছু জিনিসপত্র সরাতে পারলেও ধান, কাপড় চোপড়, এমনকি হাড়ি কড়া, থালাবাটি সব হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। কপোতাক্ষ নদীর তীরে এই দশালিয়া গ্রামের সব কটি ঘরেই এখন জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতচিহ্ন। এখানে এমন কোনো ঘর নেই, যা ঘূর্ণিঝড়ের রাতে প্লাবিত হয়নি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে অনেকের ঘরবাড়ি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, উপকূলীয় অঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। প্রতি বছরই ঝড়ের তাণ্ডব মোকাবিলা করতে হয় এ দশালিয়া বেড়িবাঁধ তীরে বসবাস করা শত শত মানুষকে। দুর্যোগ- দুর্বিপাক এখানকার মানুষের নিয়তির ওপর ভর করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ঝড়ের মৌসুমে নদী পাড়ের একদিকে ঝড়ের প্রকোপ, অন্যদিকে উত্তাল নদী হয়ে ওঠে অগ্নিমূর্তি। সৃষ্টিকর্তার নাম ডাকা ছাড়া নদী পাড়ের মানুষের আর কোনো উপায় থাকে না।
মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো টেকসই করা না হলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে উপকূলবাসীকে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারের দাবি জানান।
খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল্যাহ আল মামুন লাভলু বলেন, রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ সহযোগিতা দেওয় হয়েছে। রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।
উপকূলের লোনা জলে ঈদ আনন্দ বিলীন
Leave a comment